কুলাউড়া উপজেলা এর ইতিহাস ও ঐতিহ্য।

প্রকাশিত: ৯:১০ পূর্বাহ্ণ, মে ১৬, ২০২১

কুলাউড়া উপজেলা এর ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
booked.net

Manual3 Ad Code

 ভৌগলিক পরিচিতিঃ মৌলভীবাজার জেলার উত্তর পূর্ব সীমান্তবর্তী এলাকায় কুলাউড়া উপজেলা ‘র অবস্থান।

 

২৪.৫১৬৭ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ থেকে ৯২.০৩৩৩ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত। আয়তন ৬৭৯.২৫ বর্গ কিলোমিটার (২৬২ বর্গ মাইল)।
 

এ উপজেলার উত্তরে ফেঞ্চুগঞ্জ ও জুড়ি উপজেলা, দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পূর্বে আসাম, পশ্চিমে রাজনগর উপজেলা।
 

পাহাড়, টিলা সমতল ও জলাভূমির সমন্বয়ে কুলাউড়ার ভূমি গঠিত। এখানকার পাহাড়, টিলা গুলো বনজ সম্পদে ভরপুর। তার মধ্যে অন্যতম চা বাগান। বাংলাদেশের মোট ১৫৩টি চা বাগানের মধ্যে, কুলাউড়া উপজেলায় ১৯ টি চা বাগান রয়েছে।
 

সমতল ভূমিতে ধান ছাড়াও বিভিন্ন্ খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়। জলাভূমিতে প্রচুর মাছ উৎপাদিত হয়।
 

বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর, হাকালুকি হাওরের উল্লেখযোগ্য অংশ রয়েছে কুলাউড়া উপজেলায়।
 

কুলাউড়া উপজেলায় মোট ১৭টি ইউনিয়ন ছিল। ২০০৪ সালের ২৬ আগষ্ট, ৪টি ইউনিয়ন জায়ফরনগর, গোয়ালবাড়ী, সাগরনাল ও ফুলতলাকে আলাদা করে জুড়ী উপজেলা গঠন করা হয়।
 

আরো পড়ুনঃ এক নজরে ৯ নং কুলাউড়া টিলাগাঁও ইউনিয়ন।
 

উপজেলার ঐতিহ্য

Manual1 Ad Code

কুলাউড়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সর্ম্পকে প্রাচীনকালের তাম্রলিপিতে কিছু তথ্য পাওয়া যায় বলে জানা যায়।
 

.কুশিয়ারা নদীর দক্ষিন তীরে বর্তমান মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত,দ্বাদশ শতাব্দিতে “ইটা” নামে একটি সামন্ত রাজ্য ছিল।
 

নিধিপতি শর্মা নামে জনৈক ব্রাক্ষণ ইটা রাজ্যের রাজা ছিলেন। এক কালে এই রাজ্য “ইটা মনুকুল” প্রদেশ নামেও অভহিত হতো।
 

প্রাচীন ইটারাজ্যের রাজধানী ছিল ‘ভূমিউড়া’ গ্রাম। প্রাচীন নিদর্শন ভাটেরার তাম্র ফলকদ্বয়ের কুলাউড়া নামের কোন উল্লেখ নেই।
 

Manual6 Ad Code

তবে প্রাচীন একটি শ্লোকাংশে ‘‘লংলাইস্য কুলাউড়া, ইটাস্য নন্দিউড়া’’ কথাটির উল্লেখ রয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, পরগণা ভিত্তিক শাসনামলে কুলাউড়া নামটি ছিল এবং ইটা পরগণা নন্দিউড়ার ন্যায়, লংলা পরগণার কুলাউড়া একটি প্রসিদ্ধ স্থান।
 

শাহা হেলিম উদ্দিন কোরেশী নামক গ্রন্থ থেকে জানা যায়, মনসুর গ্রামের প্রখ্যাত দেওয়ান, মামন্দ মনসুরের পিতামহ মামন্দ মনোহরের ভ্রাতা মামন্তদ কুলাঅর কুমার থাকাবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন।
 

মামন্দ মনোহর ভ্রাতার মৃত্যুর পর  তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে নিজ জমিদারির পূর্বাংশে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করে নাম রাখেন কুলঅরার বাজার’’। কালক্রমে ‍‍“কুলঅরার বাজার থেকে কুলাউড়া’’নামকরণ করা হয়েছে।
 

সিলেট বিভাগের অন্যান্য উপজেলোর চাইতে কুলাউড়া  অনেক অগ্রসর ও উন্নত সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ। অনেক কৃতি সন্তানের জন্ম এই কুলাউড়ায়।
 

সিলেট অঞ্চলের প্রথম দৈনিক পত্রিকা ‘বলাকা’র সম্পাদক শ্রী কালীপ্রসন্ন সিংহের বাড়ি কুলাউড়া। আরেক প্রখ্যাত সাংবাদিক- শ্রী গৌরিশঙ্কর ভট্টাচার্যের বাড়ি কুলাউড়া সদরে ।

প্রাচীনকালে  কুলাউড়ার উপেজলার বিভিন্ন এলাকা  জাহাজ ও যুদ্বাস্ত্র নির্মাণের জন্য বিখ্যাত ছিল। সতের শতকে কুলাউড়ার ‘জনার্দ্ধন কর্মকারের’ খ্যাতি ছিল উপমহাদেশব্যাপি।
 

জনার্দ্ধন ঢাকার কালে জমজম (সদরঘাটের কামান বলে খ্যাত) ও বিবি মরিয়ম নামে কামান দুটি তৈরী করেন।

Manual8 Ad Code

মুর্শিদাবাদের জাহানকোষা তোপও তাঁর নির্মাণ। এক সময়ে সিলেট অঞ্চলের লৌহ শিল্প নিয়ন্ত্রন করতেন কুলাউড়ায় শিল্পীরা।

ইতিহাসবিদদের ধারণা মতে সিলেটি নাগরী সাহিত্যের প্রাণকেন্দ্র ছিল এই কুলাউড়া।
 

অর্থনীতি

কুলাউড়া উপজেলা মূলত কৃষি নির্ভর। এছাড়া বৈদেশিক রেমিটেন্সে, বিভিন্ন প্রকার ব্যবসায়ী, জেলে, কাঠুরে, চা শ্রমিক, প্রভৃতি পেশাজীবি সম্প্রদায়ের অবদান উল্লেখযোগ্য।
 

মনুনদী এ উপজেলার সবচেয়ে বড় ও প্রধান নদী। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হাওর হাকালুকির বেশিরভাগ অংশ কুলাউড়ার অধীনে।
 

এছাড়াও লংলিয়া, গোয়ালজোর ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য হাওর। এসব নদী ও হাওর শুধু কুলাউড়া নয়, সমগ্র বাংলাদেশের মৎস্য চাষের প্রধান উৎস।
 

হাওরগুলোতে বিভিন্ন মৌসুমে প্রচুর বোরো, আউশ, আমন, শাইল ধান উৎপাদিত হয়। এছাড়া কুলাউড়া, চা শিল্পের জন্য বিখ্যাত।
 

মৌলভীবাজার জেলায় চা বাগানের সংখ্যা অনুপাতে শ্রীমঙ্গল উপজেলার পরে কুলাউড়ার অবস্থান। কুলাউড়ায় রাবার, কমলা, আনারস, আম,কাঁঠাল এবং বাঁশ উৎপাদিত হয়।
 

Manual4 Ad Code

Ad

Follow for More!