জিলহজ মাসের আমল ও ফজিলত।

প্রকাশিত: ৭:৪৭ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৯, ২০২৩

জিলহজ মাসের আমল ও ফজিলত।
booked.net

Manual4 Ad Code

আরবি বারো মাসের সর্বশেষ মাস জিলহজ। এ মাসটি বছরের চারটি সম্মানিত মাসের একটি। অনেক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এ মাস। এ পবিত্র মাসের ১০ তারিখে কুরবানির ঈদ পালনের মাধ্যমে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.)-এর অতুলনীয় আনুগত্য এবং মহান ত্যাগের পুণ্যময় স্মৃতি বহন করে। আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির জন্য মুসলিম উম্মাহ প্রতি বছর হজব্রত পালন ও পশু কোরবানি করে থাকে। হজরত ইবরাহিম (আ.) ও তার পুরো পরিবারের নজিরবিহীন কুরবানির ইতিহাস মানুষকে যে ত্যাগের শিক্ষা দেয়, তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে একজন মুমিন তার সবকিছুই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করতে সদা প্রস্তুত থাকে। হজরত ইবরাহিম (আ.) এবং তার প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) এবং মা হাজেরার আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশগুলোকে আল্লাহতায়ালা হজের অংশ হিসাবে গণ্য করেছেন। আর এ হজ ও কুরবানি সম্পন্ন করে থাকি পবিত্র জিলহজ মাসে। যার ফলে ইসলামে জিলহজ মাসের গুরুত্ব অতি ব্যাপক।

Manual3 Ad Code

প্রসিদ্ধ হাদিস বিশারদ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, জিলহজের প্রথম দশটি দিনের বিশেষ গুরুত্বের কারণ হলো-এ দিনগুলোতে ইসলামের ৫টি রুকনের সমাহার রয়েছে। যেমন ইমান ও সালাত অন্য দিনগুলোর মতো এদিনগুলোতেও বিদ্যমান। জাকাত বছরের অন্য যে কোনো সময়ের মতো এ সময়ও প্রদান করা যায়। আরাফার দিনে রোজার নির্দেশনার ফলে ইসলামের আরেকটি রোকন-রোজারও দৃষ্টান্ত এ দশকে পাওয়া যায়। আর পঞ্চম রুকন বা হজও। অন্যদিকে কুরবানির বিধান তো কেবল এ দশকেই পালনযোগ্য। তা ছাড়া এ দশকেই রয়েছে আরাফা ও কুরবানির দিন, আরাফার দিনের দোয়াকে শ্রেষ্ঠ দোয়া বলা হয়েছে। আর কুরবানির দিনকেও বছরের সেরা দিন বলে আবু দাউদ ও নাসাঈর এক হাদিসে বর্ণিত আছে।

Manual6 Ad Code

সুতরাং মাস হিসাবে রমজান আর দিন হিসাবে এ দশক শ্রেষ্ঠ ও সর্বাপেক্ষা মর্যাদাপূর্ণ। সূরা হজ-এর ২৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তারা আল্লাহর নামের স্মরণ করে নির্দিষ্ট দিনসমূহে।’ হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, নির্দিষ্ট দিন বলতে এখানে জিলহজ মাসের প্রথম দশককে বুঝানো হয়েছে। (ইবনে কাসির)। এ মাসের নবম দিন ও রাত আল্লাহর কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এ দিনটি আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার দিন। আর রাতটি হলো মুজদালিফায় অবস্থানের রাত। বিশেষ করে ৯ জিলহজ রোজা আদায়ের ব্যাপারে প্রিয়নবি সবচেয়ে বেশি আশাবাদী ছিলেন যে, এ দিনের রোজা পালনকারীর বিগত এক বছর এবং আগাম (সামনের) এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেবেন। যেভাবে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে মহানবি (সা.) বলেন, ‘যে আরাফার দিনের রোজা রাখল অবশ্যই আল্লাহতায়ালা তার একবছর আগের এবং একবছর পরের তথা দুই বছরের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন’ (মুসলিম)। তবে যারা হজ আদায়ে ওইদিন আরাফায় থাকবেন তাদের জন্য এ বিধান নয়। কেননা নবী করিম (সা.) আরাফায় থেকে এ রোজা রাখেননি। আরাফায় যারা অবস্থান করবেন তারা যদি রোজা রাখেন তাহলে হয়তো অন্যান্য যে ইবাদত বন্দেগি রয়েছে তা সঠিকভাবে পালন করতে তাদের কষ্ট হতে পারে। তাই আরাফায় যারা অবস্থান করবেন তাদের জন্য রোজা না রাখাটাই শ্রেয়।

Manual3 Ad Code

জিলহজ মাসের প্রথম দশকের ফজিলত সম্পর্কে মহানবি (সা.) বলেন, এমন কোনো দিন নেই যে দিনগুলোর ইবাদত আল্লাহর কাছে জিলহজের প্রথম দশকের ইবাদত থেকে অধিক প্রিয়। জিলহজের প্রথম দশকের প্রত্যেক দিনের রোজা এক বছরের রোজার সমতুল্য। আর প্রত্যেক রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের সমতুল্য। (তিরমিজি) মূলত যারা হজে যান তারা জিলহজ মাসের প্রথম দশকে বিশেষ ইবাদতে রত থেকে অতিবাহিত করারই চেষ্টা করে থাকেন। তাই দেখা যায় ৮ জিলহজ সকাল থেকেই আকাশ বাতাস মুখরিত করে তালবিয়া পাঠ করতে করতে হাজিগণ মিনার উদ্দেশে রওনা হয়ে যান। হজরত সহল ইবনে সাআদ (রা) বর্ণনা করেন: মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘একজন হজযাত্রী যখন তালবিয়া পাঠ করে তখন তার আশপাশের পাথর-নুড়ি, পাহাড়-পর্বত, বৃক্ষলতা সবকিছুই সেই তালবিয়া পাঠে শরিক হয়’ (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)। এর পরের দিন অর্থাৎ জিলহজের নবম তারিখটি আরাফার দিন। সেদিন আরাফার ময়দানে অবস্থান করা হজের সবচেয়ে বড় রোকন। এর মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। মহানবি (সা.) বলেন, আরাফার দিনের মতো অন্য কোনো দিন আল্লাহ অধিক সংখ্যক ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন না। সেদিন তিনি দুনিয়ার নিকটবর্তী হয়ে ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করে বলেন, দেখ ‘আমার বান্দারা এলোমেলো চুল ও ধূলিধূসরিত শরীরে আমার দরবারে আগমন করেছে। লাব্বাইকা বলে চিৎকার করছে। তোমাদের সাক্ষী রেখে বলছি, আমি সবাইকে মাফ করে দিলাম। অন্য হাদিসে এসেছে, শয়তান আরাফার দিন সবচেয়ে বেশি ধিকৃত, অপদস্ত ও ক্রোধান্বিত হয়। কেননা সে তখন আল্লাহর অধিক রহমত এবং বান্দার পাপ মোচন দেখতে পায়’ (মেশকাত)।

জিলহজ মাসের এ দিনগুলোতে অধিকহারে তাকবির ইত্যাদি পাঠ করা উচিত। এ বিষয়ক হাদিসে হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, মহানবি (সা.) বলেন, ‘অতএব, তোমরা এ দিনগুলোতে বেশি বেশি করে তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবির (আল্লাহু আকবার) এবং তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ) পড়বে’ (মুসনাদে আহমাদ)। হজরত ইমাম বোখারি (রহ.) বলেন, ইবনে ওমর (রা.) ও আবু হুরায়রা (রা.) এই দিনগুলোতে বাজারে যেতেন এবং বেশি বেশি তাকবির পাঠ করতেন, যাতে লোকেরা তাদের থেকে শিখতে পারে। ইবনে রজব (রহ.) বলেছেন, বোখারির হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, নেক আমলের মৌসুম হিসাবে জিলহজ মাসের প্রথম দশক হলো সর্বোত্তম সময়, এ দিবসগুলোয় সম্পাদিত নেক আমল আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। হাদিসের কোনো কোনো বর্ণনায় সর্বাধিক প্রিয় শব্দ এসেছে আবার কোনো কোনো বর্ণনায় সর্বোত্তম শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে জিলহজ মাসের বরকত থেকে কল্যাণ মণ্ডিত হওয়ার সৌভাগ্য দান করুন। আমিন।

 

Manual6 Ad Code

Ad

Follow for More!