কুলাউড়ায় অবৈধ ক্ষুদ্র ঋণের কারবারি ইউপি সদস্য!

প্রকাশিত: ৬:৫৩ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৮, ২০২২

কুলাউড়ায় অবৈধ ক্ষুদ্র ঋণের কারবারি ইউপি সদস্য!
booked.net

বিশেষ প্রতিনিধি:- কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের একজন ইউপি সদস্য দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় অনুমোদিত অবৈধ ক্ষুদ্র ঋণ পরিচালনা করে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রে সরকারি নিয়মনীতির কোন তোয়াক্কাই তিনি করছেন না। নিজের ইচ্ছেমতো এলাকায় সুদের কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। ঋণ গ্রহীতাদের কে শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিলেও পরে চড়া সুদে আদায় করছেন। কিস্তি কিংবা সুদ পরিশোধে সামান্য ব্যত্যয় ঘটলে পরবর্তীতে তাকে আর ঋণ দেওয়া হয়না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের ইছবপুর গ্রামের বাসিন্দা কয়ছর রশীদ একজন মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী। ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর তিনি ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। গত প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি দেশে অবস্থান করছেন। প্রবাস ফেরত হয়েই তিনি পর্দার আড়ালে এলাকায় সুদের রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, গোপনে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবসা চালিয়ে তিনি রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নে একটি ব্রিকস্ ফিল্ডে প্রায় কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন ইট ব্যবসার জন্য। স্থানীয় টিলাগাঁও বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ী তার এই অননুমোদিত ক্ষুদ্র ঋণের আওতায় রয়েছেন।

বিশ্বস্থ সূত্র জানায়, প্রশাসনের অগোচরে ঋণের টাকা লেনদেন করে থাকেন। আর ঋণদাতা হিসেবে তিনি (ইউপি সদস্য কয়ছর রশীদ) লেনদেনের পুরো বিষয় নিয়ন্ত্রন করে থাকেন। তাছাড়া পার্শ্ববর্তী গ্রামের (ইছবপুর, লালবাগ, বালিয়া ও আশ্রয়গ্রামসহ অন্যান্য এলাকা) অধিকাংশ মহিলারাও অননুমোদিত ওই ক্ষুদ্র ঋণের আওতায় রয়েছেন।

ঋণদান কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে টিলাগাঁও বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাদের জানামতে প্রায় ৭/৮ বছর ধরে টিলাগাঁও বাজারে তিনি অননুমোদিত ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম চালাচ্ছেন। ঋণদানের পূর্বে একশত টাকার স্ট্যাম্পে গ্রহীতার সাথে চুক্তি সম্পন্ন হয়। চুক্তিপত্রে ঋণ গ্রহীতার মধ্য থেকে স্বাক্ষীও নেওয়া হয়। ঋণ গ্রহীতার কাছে কোন নথিপত্র রাখতে তিনি নারাজ। তিনি তার হাতে থাকা একটি রেজিস্টার খাতা মেন্টেইন করেন। একক ক্ষমতার অধিকার তিনি তার হাতেই রাখেন।

ব্যবসায়ীরা আরো জানান, তিনি তার পছন্দমতো ব্যক্তিকে ঋণের আওতায় নেন। একজনকে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে সুদ হিসেবে প্রতি মাসে দশ হাজার টাকা আদায় করেন। ঋণ গ্রহীতা এককালীন ওই পাঁচ লক্ষ টাকা পরিশোধের পূর্ব পর্যন্ত প্রতিমাসে দশ হাজার টাকা সুদ হিসেবে দিতে হয়। আরেকজন গ্রহীতা জানান, একেকজনের কাছ থেকে একেক হারে সুদ নেন। তিনি শতকরা ন্যূনতম সতের টাকা সুদ নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শতকরা সতের ভাগ হারে প্রতিদিন মূল টাকার কিস্তি তিনি আদায় করেন। আর এভাবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ঋণ পরিশোধ করে নেন তিনি।

কয়েকজন ব্যবসায়ীর অভিযোগ, একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়ে তিনি মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি’র অনুমোদন না নিয়ে ক্ষুদ্র ঋণদান কর্মসূচি পরিচালনা করছেন। যা সরকারি নিয়ম-নীতি লংঘনের শামিল। এছাড়াও সুদের ব্যবসা করায় এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে; ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে যুবসমাজ।

অভিযোগ স্বীকার করে ইউপি সদস্য কয়ছর রশীদ জানান, তুরা তুরা (সামান্য) ঋণ দেই। একজনকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়েছি। যা এখনও চলমান। তবে ইন্টারেস্ট (সুদ) আমি নেই না। গরীব মানুষের মাঝে বণ্টন করে দেই। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ঋণ পরিচালনায় তিনি মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি থেকে কোন অনুমোদন নেননি। এগুলো তিনি জানেনও না।

কুলাউড়া উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা সোনামোহন বিশ্বাস জানান, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এলাকায় ক্ষুদ্র ঋণ পরিচালনার পূর্বে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি’র অনুমোদন নিতে হয় পাশাপাশি সমবায় অফিস থেকেও অনুমোদন নিয়ে কাজ করতে হয়। এই দুই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন না নিয়ে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করা পুরো অনিয়মের মধ্যেই পড়ে।

Ad