ইসলামের সঙ্গে জীবনের সম্পর্ক।

প্রকাশিত: ৮:২০ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৫, ২০২২

ইসলামের সঙ্গে জীবনের সম্পর্ক।
booked.net

 

ইসলাম একটি আরবি পরিভাষা। এর আভিধানিক অর্থ- আনুগত্য করা, আত্মসমর্পণ করা, অনুগত হওয়া, কোনো কিছু মাথা পেতে নেয়া। এটি সালম, সিলম বা সিলমুন মূল ধাতু থেকে এসেছে। যার এক অর্থ- শান্তি, সন্ধি, সমর্পণ ও নিরাপত্তা। যেহেতু আত্মসমর্পণের মাধ্যমে শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ হয়, তাই একে ইসলাম বলা হয়।

অন্য কথায়, ইসলামের অর্থ আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে তার নির্দেশ মেনে নেয়ার মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে শান্তি এবং নিরাপত্তা অর্জন করা। ‘ইসলাম’ শব্দটিতে আল্লাহ তাআলার ধর্মের মূলতত্ত্ব নিহীত রয়েছে। আরবি ভাষায় ইসলাম বলতে বোঝায় আনুগত্য, বাধ্যতা ও আত্মসমর্পণ। ইসলাম গ্রহণ করার মাধ্যমেই আল্লাহর কাছে সমর্পণ করতে হয়।

অতএব ইসলামের মূল মর্মবাণী হলো মানুষের সর্বস্ব আল্লাহ তাআলার কাছে সোপর্দ করে দেয়া। তার সব শক্তি, যাবতীয় কামনা-বাসনা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, ভাব-আবেগ, তার সব প্রিয় বস্তু; এক কথায় মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত যা কিছু আছে সব কিছু আল্লাহ তাআলার কাছে অর্পণ করার নামই হলো ইসলাম। কুরআনের ভাষায় ইসলাম মানে আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করা।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি আনুগত্য ও বাধ্যতা স্বীকার করে নেয়া যে জীবনাদর্শের লক্ষ্য তার-ই নাম ইসলাম। জীবনের প্রতিক্ষেত্রে, প্রতিস্তরে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বিধিনিষেধ পালন করা; তার সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা এবং এ লক্ষ্যে নিজেকে বিলীন করে দেয়ার নামও ইসলাম।

ইসলামে সমাজ ও রাষ্ট্রকে অশান্তি, জুলুম ও বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্ত রাখার নির্দেশ রয়েছে বলেই ইসলাম শান্তির আদর্শ। মানুষ যদি সত্যিই শান্তি পেতে চায় তবে তার নিজের ইচ্ছা মতো জীবন যাপন না করে আল্লাহর দেয়া বিধান মেনে চলতে হবে। তাই আল্লাহ তার প্রেরিত জীবন ব্যবস্থার নাম রেখেছেন ইসলাম।

ইসলাম শব্দের অর্থের মধ্যে বিশেষ গুণের পরিচয় পরিস্ফুটিত। ইসলামই শুধু ইসলামের তুলনা। নাম থেকেই বোঝা যায় যে, ইসলাম কোনো ব্যক্তিবিশেষের আবিষ্কার নয়, কোনো জাতির নামানুসারেও এ মতাদর্শের নাম হয়নি। ইসলাম নামটি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রদত্ত। ইসলাম নামটি অনেক গুরুত্ব বহন করে। ইসলামের সঙ্গে রয়েছে মানুষের জীবনের সুগভীর সম্পর্ক।

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নাম। সব সংঘাত সংঘর্ষের চিরন্তন ও মহাসমন্বয় হচ্ছে ইসলাম। জীবনাদর্শ, জীবন ব্যবস্থা ও জীবন বিধান হিসেবে ইসলামে রয়েছে সব সমস্যার সঠিক সমাধান। এতে রয়েছে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি সমস্যার সমাধান আর মৃত্যুর পর আখেরাতের অনন্ত জীবনে নিশ্চিত সুখ-শান্তি লাভের উপায়।

ইসলাম মানুষের চলার পথের সন্ধানদাতা, উন্নত, সুখী ও সমৃদ্ধশালী জীবন এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জন তথা মানবজীবনের চরম লক্ষ্য হাসিলের একমাত্র পন্থা। এর ব্যাপ্তি জীবনের সর্বক্ষেত্রে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনের সব ক্ষেত্রেই ইসলামের নিয়ন্ত্রণাধীকার। ইসলাম মানুষের সঠিক পথের দিশারী, দুনিয়া ও আখেরাতের সর্বাঙ্গীন ও পূর্ণাঙ্গ একমাত্র জীবন ব্যবস্থা। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে একাধিক স্থানে এ বক্তব্য তুলে ধরেছেন-‘নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য একমাত্র জীবন ব্যবস্থা হলো ইসলাম।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯)

– الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا

‘আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে (জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে) পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৩)

কুরআনুল কারিমের আয়াতে কারিমা থেকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, আল্লাহ তাআলা ইসলামকে মানবতার জন্য নেয়ামত হিসেবে পাঠিয়েছেন, যাতে রয়েছে মানুষের জীবনের সব সমস্যার সমাধান।

এক কথায় বলা যায়- ইসলাম গ্রহণ করলে অনেক লাভ রয়েছে। প্রথমত ইসলাম গ্রহণ করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্য লাভ করতে পারি। হাদিসে পাকে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা বলেছেন-

‘বান্দা যখন ইসলাম গ্রহণ করে আর তার ইসলাম খাঁটি হয়, আল্লাহ তা দ্বারা তার প্রায়শ্চিত্ত করে দেন সে আগে যা অপরাধ করেছে। অতপর তার সৎকাজ হয় অসৎ কাজের বিনিময়; সৎকাজ তার দশগুণ হতে সাতশ গুণ বরং বহু গুণ পর্যন্ত আর অসৎকাজ তার একগুণ মাত্র, তবে আল্লাহ যাকে ছেড়ে দেন তার একগুণের শাস্তিও হবে না।’ (বুখারি)

প্রকৃত পক্ষে কেউ যদি ইসলাম গ্রহণ করার সৌভাগ্য লাভ করে তবে সে মূলত নিজেকেই অনুগ্রহীত করে।

 

Ad