কুলাউড়ার কৃতি সন্তান জীন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরীর আবিষ্কার। একই গাছে ৫ বার ধানের ফলন।

প্রকাশিত: ১:৩৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৬, ২০২১

কুলাউড়ার কৃতি সন্তান জীন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরীর আবিষ্কার। একই গাছে ৫ বার ধানের ফলন।
booked.net
Manual1 Ad Code

স্বপন কুমার দেব রতনঃ- অস্ট্রেলিয়ায় কর্মরত কুলাউড়ার কৃতি সন্তান বিশিষ্ট জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরীর আবিষ্কৃত ধান একবার রোপন করলে সেই ধান গাছ ৫ বার ফলন ধরে। নতুন জাতের এই ধানের নাম রাখা হয়েছে ‘পঞ্চব্রীহি’।আবিষ্কৃত এই জাতের ধান তিনি তাঁর গ্রামের বাড়ি কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের কানিহাটি গ্রামে চাষ করেছেন।

Manual7 Ad Code

এ ধান চাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন এই জাতের ধানে কম খরচে ভালো ফলন পাওয়া যায়। ফলে এই ধান নিয়ে দেশজুড়ে হৈচৈ শুরু হয়েছে।

Manual5 Ad Code

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে জনসংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যের চাহিদা বাড়লেও কমছে কৃষিজমি। এ অবস্থায় আবেদ চৌধুরীর উদ্ভাবিত এই নতুন জাতের ধানে খাদ্যসঙ্কট দূর হবে।

Manual6 Ad Code

জিন গবেষক আবেদ চৌধুরীর বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর ইউয়িনের কানিহাটি গ্রামে। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় জাতীয় গবেষণা সংস্থার প্রধান ধানবিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রবাসে থাকলেও দেশের ধানের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনে তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাজ করছেন। নিজের উদ্ভাবিত জাতের ধান চাষে কানিহাটি গ্রামের পারিবারিক জমিতে গড়ে তুলেছেন খামার।

Manual3 Ad Code

এই খামারেই নতুন উদ্ভাবিত ধান চাষ করা হয়। এতে প্রথমবারের মতো একই গাছে পাঁচবার ফলন এসেছে। উদ্ভাবনী নতুন এধানের রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বরত কানিহাটি গ্রামের কৃষক রাসেল মিয়া জানান, পরীক্ষমূলকভাবে দুই বিঘা জমিতে এধান রোপন করা হলে সফলভাবে পাঁচবার গাছ থেকে ধান কাটা হয়েছে। গাছ থেকে একবার ধান কাটা হলে ধান গাছের গুড়ি (নেরা) যত্ন করে রেখে দিলে সেই গাছে আবার ফলন চলে আসে। তাই আগামী বোরো মৌসুমে এ অঞ্চলে প্রায় ২০ কিয়ার জমিতে উদ্ভাবিত নতুন ধান রোপন করা হবে। এই ধান গাছে ৪৫ দিন পরপর ধান আসে।

‘পঞ্চব্রীহি’ ধান প্রসঙ্গে আবেদ চৌধুরী জানান, ‘ধানকে ব্রীহি বলা হয়। এটা যেহেতু পাঁচবার ফলন দিয়েছে, তাই এর নাম পঞ্চব্রীহি রেখেছি।’

ছয় বার ফলন হবে এমন একটি জাতের ধান নিয়েও গবেষণা চলেছ জানিয়ে আবেদ চৌধুরী আরও জানান, ‘ষষ্ঠবার ফলনে সফল হলে এই জাতের নামকরণ ষষ্ঠব্রীহি করা যেতে পারে। তবে এর নাম এখনও চূড়ান্ত করিনি।

আবেদ চৌধুরীর গবেষণা সহকারী সৈয়দ নুর আহমদ জানান, পঞ্চব্রীহিতে অন্য ধানগাছের চাইতে উৎপাদন প্রায় পাঁচ গুণ বেশি হবে। কম সময়ে পাকা এই ধানের উৎপাদন খরচও কম।

তিনি আরও জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই জাতের ধান দুই বিঘা জমিতে রোপণ করা হয়। পরিমাণমতো ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা হয়। সঠিকভাবে সেচ ও পরিচর্যা করার পর ১১০ দিনের মধ্যে ৮৫ সেন্টিমিটার থেকে এক মিটার উচ্চতার গাছে ফসল আসে। পরে মাটি থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায় ওই ধান কেটে ফেলা হয়।

মে মাসের প্রথম দিকে প্রথমবার কাটা ধানে হেক্টরপ্রতি উৎপাদন হয়েছে চার টন। তারপর থেকে ৪৫ দিন অন্তর প্রতিটি মৌসুমে হেক্টরপ্রতি কখনও দুই টন, কখনও তিন টন ফলন এসেছে। সবগুলো জাত মিলে হেক্টরপ্রতি প্রায় ১৬ টন ফলন হয়েছে।

খামার সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে কানিহাটি গ্রামে ২৫ বর্গমিটার জমিতে ২০টি ধানের জাত নিয়ে গবেষণা শুরু করেন আবেদ চৌধুরী। এর মধ্যে চীন, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশের ও স্থানীয় ধানের জাত ছিল।

যে জাতগুলোর ধান পাকার পর কেটে নিয়ে গেলে আবার শীষ বের হয়, সেগুলো তিনি আলাদা করেন। এভাবে ১২টি জাত বের করেন। তিন বছর ধরে জাতগুলো চাষ করে দেখেন, নিয়মিতভাবে এগুলো দ্বিতীয় বার ফলন দিচ্ছে। এরপর তিনি একই গাছে তৃতীয়বার ফলনের গবেষণা শুরু করেন। তাতেও সফল হন। তবে এর মধ্যে চারটি জাত ছাড়া বাকিগুলো চতুর্থবার ফলন দিয়ে ধ্বংস হয়ে যায়।

আবেদ চৌধুরী জানান, আম-কাঁঠালের মতো বছরের পর বছর টিকে থাকার সৌভাগ্য ধানগাছের হয় না- এটা কোনোভাবেই মানতে পারছিলাম না। তাই নেমে পড়ি গবেষণায়। ‘দুটি পদ্ধতির মাধ্যমে জাতগুলো করা হয়েছে। স্থানীয় জাতের সঙ্গে বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল জাত এবং স্থানীয় জাতের সঙ্গে স্থানীয় হাইব্রিড জাতের সংকরায়ন ঘটানো হয়েছে। ১০-১২ বছর আগে এগুলো থেকে দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়বার ফলন দেয়ার জন্য উপযোগী করে চিহ্নিত করা হয়। সারা বছর যেহেতু ধান দিচ্ছে, সেহেতু এই জাতকে বর্ষজীবী বলা যেতে পারে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মোমেন জানান, এক গাছে পাঁচবার ধান উৎপাদন নতুন দেখেছি। এটি দেশের জন্য সুখবর। এর অধিক ফলন সম্ভব হলে দেশের খাদ্যসংকট দূর করা সম্ভব হবে। এই উদ্ভাবনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়া উচিত।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Ad

Follow for More!