হারানো আত্মবিশ্বাস ফেরানোর উপায়।

প্রকাশিত: ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৭, ২০২৩

হারানো আত্মবিশ্বাস ফেরানোর উপায়।
booked.net

আত্মবিশ্বাস একজন মানুষকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয় সহজেই। নিজ জীবনে আত্মবিশ্বাসী হতে কে না চান। তবু জীবন চলে তার নিয়মে। হতাশা এসে দাঁড়ায় মনের দুয়ারে। আর তখন মানুষ হয়ে পড়ে বড্ড অসহায়। ‘আমাকে দিয়ে আর হবে না’— এমন ভাবনা ভর করে মনে। আত্মবিশ্বাস হারিয়ে একজন মানুষ হারিয়ে ফেলে জীবনের গতি।

আত্মবিশ্বাস নিয়ে কথা বললে সবার আগে জানতে হবে এই বিষয়টি আসলে কী? বইয়ের ভাষায় আত্মবিশ্বাসকে সাহসের একটি অংশ বলা যায়। যা একজন মানুষকে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে, নিজের প্রতি নিজের আস্থা তৈরি করে।

একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ সহজেই তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন। জীবনের যেকোনো পরিস্থিতি পার করতে পারেন অনায়াসে। অন্যদিকে, আত্মবিশ্বাস হারিয়ে গেলে সহজ পরিস্থিতিও জটিল হয়ে ধরা দেয়।

চলতি জীবনে জোয়ার-ভাটা সবারই আসে। খারাপ সময়ে আত্মবিশ্বাস তলানিতে গিয়ে ঠেকে। এসময় নিজেকে কিছু প্রশ্ন করে কিংবা নিজের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটিয়ে হারিয়ে ফেলা আত্মবিশ্বাস পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। এমন কিছু বিষয় চলুন জেনে নেওয়া যাক-

কখনোই কি সফল হননি?

নিজেকে প্রশ্ন করুন, কখনোই কি আপনি সফল হয়নি? জীবনে কখনো না কখনো ঠিকই এমন পরিস্থিতি এসেছিল যখন আত্মবিশ্বাসের জেরে জয়ী হয়েছিলেন আপনি। সেই সময়গুলোর স্মৃতিচারণ করুন। দেখবেন বর্তমানের পরিস্থিতিও আস্তে ধীরে ঠিক সামলে নিতে পারবেন।

আদর্শ ব্যক্তিকে স্মরণ করুন –

আপনার কি কোনো রোল মডেল বা আদর্শ ব্যক্তি রয়েছে যিনি নিজের যোগ্যতা আর আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে যেকোনো পরিস্থিতি সামলাতে পারেন। যার মধ্যে কোনো বিরক্তি বা অহংকার নেই? তবে তার যেই গুণগুলো আপনাকে মুগ্ধ করে তার একটি তালিকা করুন। এবার এগুলো অনুকরণের চেষ্টা করুন।

 

চ্যালেঞ্জ যখন সঙ্গী-

অতীতে কোনো পরিস্থিতিতে কি চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করেছিলেন? সেই কাজগুলোর তালিকা তৈরি করুন। সঙ্গে লিখুন নিজের শক্তি দিয়ে সে চ্যালেঞ্জের সময় পার করে কী শিখলেন জীবনে।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন –

নিজেকে যে ভালোবাসে সে সব করতে পারে। তাই নিজের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। নিজের করা ভালো কাজগুলো রোজ স্মরণ করুন। সেই অনুভূতি থেকে শক্তি সঞ্চয় করুন।

আপনার প্রতিভা নিয়ে ভাবুন-

কোনো না কোনো প্রতিভা নিশ্চয়ই আপনার রয়েছে। হয়ত ছবি আঁকতে জানেন। কিংবা রান্নার কাজে বেশ পটু। গানের কণ্ঠও সুন্দর হতে পারে। আপনি হয়তো ভাবছেন, এ আর এমন কী? কতজনই তো পারে। এবার নিজেকে প্রশ্ন করুন, ‘চেষ্টা করলেই কী সবাই সব পারে?’ আপনি যা খুব সহজেই পারছেন তা হয়তো অনেকেই শত চেষ্টা করেও পারছে না। নিজের মধ্যে সাহস জুগিয়ে নিজেকে উজ্জীবিত করুন। আপনিই পারবেন যেকোনো পরিস্থিতি পার করতে।

নিজের বর্তমান বিচার করুন-

ভাবছেন জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছেন। কিছু করার যোগ্যতাই নেই আপনার। এবার একটি কাগজে এমন পাঁচটি জিনিসের নাম লিখুন যা আপনি দেখতে পারছেন, পাঁচটি বিষয় যা আপনি শুনতে পারছেন, তিনটি জিনিস যা আপনি ধরতে পারছেন, দুটো জিনিস যার ঘ্রাণ আপনি নিতে পারছেন, একটি জিনিস যার স্বাদ গ্রহণ করতে পারছেন। দেখুন, কতটা স্বয়ংসম্পূর্ণ আপনি! দেখতে পারছেন, শুনতে পারছেন, ঘ্রাণ নিতে পারছেন। আপনিই তো পারবেন খারাপ সময়কে ভালো সময়ে পরিণত করতে।

অতীতের স্মৃতিচারণ-

অতীত জীবনের এমন সময়ের কথা ভাবুন যখন প্রাথমিক পর্যায়ে আপনার অবস্থান ছিল একজন হেরে যাওয়া মানুষের পর্যায়ে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ঠিকই আপনি সে সময় পার করতে পেরেছেন আর ছিনিয়ে নিতে পেরেছেন জয়।

নিজেকে অভিনন্দন জানান-

হ্যাঁ, এই কাজটি অবশ্যই করুন। কারণ আপনি একজন জীবনযোদ্ধা। জয়ী হবেন বলেই এখনও টিকে আছেন। অন্যদের অপেক্ষায় না থেকে নিজেই নিজেকে অনুপ্রেরণা দিন। জীবনের নতুন লক্ষ্য ঠিক করুন। নতুন উদ্যমে এগিয়ে চলুন। আরেকটিবার চ্যালেঞ্জ দিয়েই ফেলুন জীবনকে।

 

প্রিয় গান সঙ্গী করুন-

‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে’ কিংবা অন্য কোনো গান শুনলে কি আপনি মনে সাহস পা? মনে অনুপ্রেরণা আসে? এই গানগুলোর তালিকা করে ফেলুন। প্রিয় গান শুনে দিন শুরু করুন। মন চাইলে হয়ে উঠুন বাথরুম সিঙ্গার। গলা ছেড়ে গান করুন। জীবন আপনার। নিজের মতো সুখী থাকুন।

চলতি জীবনে মাঝেমধ্যে ব্রেক আসা মন্দ কিছু নয়। এতে নতুন করে জীবনের ছন্দ খুঁজে পাওয়া যায়। অতীতের সাহস আর অর্জনকে সঙ্গী করে নতুন করে পরিস্থিতি মোকাবেলা করুন। মনে রাখবেন, নিজের জীবনে কেউই শতভাগ সফল নন। অর্জন যেমন আসবে, তেমনি সঙ্গী হবে কিছু হতাশা। এভাবেই এগিয়ে যেতে হবে। আত্মবিশ্বাস নিয়ে পাড়ি দিতে হবে জীবন নদী।

মূল লেখক:- বারবারা মার্কওয়ে, পিএইচডি, থেরাপিস্ট অব সাইকোলজি টুডে।

Ad