ভিক্ষাবৃত্তিকে ঘৃণা করে ইসলাম।

প্রকাশিত: ৫:২২ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৪, ২০২২

ভিক্ষাবৃত্তিকে ঘৃণা করে ইসলাম।
booked.net

আমরা মানবিক ও সামাজিক বোধের কারণে ভিক্ষুকদের দান খয়রাত দিয়ে থাকি। অনেকে আবার চক্ষুলজ্জা ভিক্ষুকদের এড়াতে পারেন না। যার ফলে ভিক্ষাবৃত্তি এখন আর ব্যক্তিকেন্দ্রিক নেই। সিন্ডিকেটরা একে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। এমনকি কৃত্রিম উপায়ে সুস্থ সবল মানুষকে প্রতিবন্ধী বানিয়ে ভিক্ষা করাচ্ছে অনেক চক্র। কিন্তু বর্তমানে রীতিমতো এসব প্রতিষ্ঠান এবং চক্রগুলোতে তিনবেলা খাবার এবং থাকার বিনিময়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে দিনের পুরোটা সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভিক্ষা করাচ্ছেন। এমন ধোঁকা  ইসলামে স্পষ্ট হারাম। তাছাড়া  মহানবী হযরত মহাম্মদ(সা.) প্রবঞ্চনাকারীকে নিজের উম্মত নয় বলে ধমকি দিয়েছেন।

ভিক্ষুক নিরসনে প্রিয় নবীজির শেখানো চমৎকার পদ্ধতি আমাদের সমাজে ভিক্ষা দাতাদের অনেকেই অনুসরণ করেন না। তারা মনে করেন নিজের উপার্জিত অংশ থেকে কিছু দান খয়রাত করা দরকার। তবে তার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি বা জায়গা অধিকাংশ জনই জানার কিংবা খোঁজার চেষ্টা করেন না।

ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ সা.ভিক্ষাবৃত্তিকে অপছন্দ করতেন। কোনো ভিক্ষুক চোখে পড়লেই তাকে কাজের পথ দেখিয়ে দিতেন। একটি ঘটনা তো বেশ পরিচিত। এক লোক নবীজির কাছে এসে ভিক্ষা চেয়েছিল। নবীজি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কাছে বিক্রি করার মতো কী আছে? লোকটি একটি কম্বল এনে বলল, এটা বিক্রি করা যায়। নবীজি সেটা বিক্রি করে কিছু টাকা দিয়ে খাবার খেতে বললেন, আর কিছু টাকা দিয়ে একটি কুড়াল কিনে দিলেন। বললেন, এবার বনে গিয়ে কাঠ কেটে জীবিকা নির্বাহ করো।

ভিক্ষাবৃত্তি নিয়ে আমাদের করণীয় কি?

হাদিসে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে সেই ব্যাক্তিই প্রকৃত ধনী যিনি মনের দিক থেকে ধনী। অর্থাৎ মহান আল্লাহ তায়ালার দানের প্রতি অসন্তুষ্ট না হয়ে যতটুকু সম্পদ তিনি দান করেছেন, সেটার প্রতিই সন্তুষ্টি প্রকাশ করা। এবং জীবনযাপন করাই হলো বান্দার সব থেকে বড় সফলতা।

এ ব্যাপারে রসুল (স.) হাদিসে বলেছেন, ‘ঐ ব্যক্তি জীবনে সফলতা লাভ করেছে, যে ইসলাম কবুল করেছে এবং তাকে যে পরিমাণ রিযিক তথা সম্পদ দেওয়া হয়েছে তার ওপরেই সে পরিতৃপ্ত হয়েছে।’(মুসলিম: ২৩১৬)।

এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যমিনে বিচরণকারী সবার জীবিকার দায়িত্ব একমাত্র (আমি) আল্লাহরই ওপরে।’(সুরা হুদ:০৬)

ইসলামের দৃষ্টিতে যদি কোনো ব্যক্তির অত্যাবশ্যকীয় আয়ের সকল উপায় হারিয়ে ফেলে তবে বায়তুল মাল বা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে সরকারি উদ্যোগে ওই ব্যক্তির পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা আবশ্যক। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে সামাজের বিত্তবান লোকদের দায়িত্ব নিয়ে ওই ব্যক্তির জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করে দেয়া। তারপরও ভিক্ষা নয়।

শরীয়তে ভিক্ষাবৃত্তিকে জায়েজ করা হয়েছে নিঃস্ব, গরিব, মিসকিন, অসহায়দের কল্যাণার্থে। ভিক্ষা দেয়ার আগে চিন্তা করে নেয়া উচিত। লোকটি সত্যিকার অর্থে অক্ষম কিনা। ভিক্ষা নেয়ার উপযোগী কিনা। সেরকম হলে তাকে ভিক্ষা দেয়া যেতে পারে।

এছাড়া কাজ করার মতো শক্তি সামর্থ আছে এমন লোককে আপনি পথ দেখিয়ে দিতে পারেন যেন তাকে আর ভিক্ষা করতে না হয়। অন্যথায় এটি কেবলই ভিক্ষাবৃত্তির পরিমাণকে বাড়িয়ে তুলবে। এ বিষয়ে রসুল (স.) পবিত্র হাদিসে স্পষ্টভাবে বলেছেন।

এ সম্পর্কে হযরত আবু বিশর কাবীসা (রা.) হতে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, একদা আমি ঋণ পরিশোধে অপারগ হয়ে রসুল (স) এর নিকটে গিয়ে এ ব্যাপারে কিছু সাহায্য চাইলাম। তিনি বললেন, অপেক্ষা কর। অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, ‘হে কাবীসা! তিন ধরনের লোক ছাড়া আর কারো জন্য (অন্যের নিকট) হাত পাতা তথা ভিক্ষা করা বৈধ নয়। এরা হলোঃ-

(১) যে ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। সে ঋণ পরিশোধ করা পর্যন্ত চাইতে পারে। কিন্তু তারপর তাকে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বিরত থাকতে হবে।

(২) যে ব্যক্তি কোনো কারণে দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, সেও তার প্রয়োজন মিটানোর উপযোগী সম্পদ চাইতে পারে।

(৩) যে ব্যক্তি দুর্ভিক্ষ কিংবা অভাব-অনটনের খপ্পরে পড়েছে। এ ব্যাপারে তার বংশের অন্তত তিন জন বিশ্বস্ত ব্যক্তি সাক্ষ্যদান করেছে যে, অমুকের উপর অভাব-অনটন চেপে বসেছে। এরূপ ব্যক্তির পক্ষেও প্রয়োজন মিটানো পরিমাণ সম্পদ প্রার্থনা করা বৈধ।

অতঃপর রসুল (স.) তাকে বললেন, ‘হে কাবীসা! শুনে রাখ’ এই তিন ধরনের লোক ছাড়া আর কারো পক্ষে অন্যের নিকট হাত পাতা হারাম। যারা এভাবে হাত পাতে আসলে তারা হারাম খায়।’ ( মুসলিম: ২২৯৪)।

রাসূল (স.) এর এই কথাগুলো অনুসরণ করতে পারলেই হয়তো ভিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের জন্য অত্যন্ত সুবিধার হবে।

আসুন,জেনে নেই শরীয়তে ভিক্ষা বৃত্তিকে নিয়ে কি বলা হয়েছে? কাদের জন্য এবং কোন পরিস্থিতিতে ভিক্ষাবৃত্তিকে জায়েজ করা হয়েছে।

ভিক্ষাবৃত্তি নিয়ে ইসলামে করা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যারা সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সমাজে ভিক্ষা করে বেড়ায় তাদের পরকালীন কঠিন শাস্তির ব্যাপারে রসুল (স) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অভাবের তাড়না ছাড়াই নিজের সম্পদ বাড়ানোর জন্য মানুষের কাছে সম্পদ ভিক্ষা করে বেড়ায় বস্তুত সে যেন আগুনের ফুলকি ভিক্ষা করছে। কাজেই এখন তার ভেবে দেখা উচিত সে বেশি নিবে না কম নিবে।’ (মুসলিম:২২৮৯)। এছাড়া তাদের এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে রসুল (স) হাদিসে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সব সময় মানুষের কাছে চেয়ে থাকে, সে কেয়ামতের দিন এমনভাবে উপস্থিত হবে যে, তার চেহারায় কোনো গোশত থাকবে না।’(বুখারী: ১৪৭৪)।

যে ব্যক্তি নিজের অভাব-অনটনের কথা অন্যের নিকট প্রকাশ করে হাত পেতে ভিক্ষা করে বেড়ায়, আসলে তার অভাব-অনটন কমে না বরং আরো বৃদ্ধি পায়। এ সম্পর্কে রসুল (স) বলেছেন, ‘কেউ যদি অভাব-অনটনে পড়ে অতপর তা মানুষের নিকট উপস্থাপন করে, তাহলে তার অভাব-অনটন দূর হবে না। ইসলামি শরিয়তের বিধান অনুযায়ী বলা যায়, যার কাছে একদিন একরাতের জীবিকাও আছে, তার জন্য ভিক্ষাবৃত্তি সম্পূর্ণ হারাম। হাদিস শরিফের স্পষ্ট বাণী, শক্ত-সমর্থ ও দৈহিক সুস্থ-সবল ব্যক্তির জন্য ভিক্ষা করা হালাল নয়। (তিরমিজি)।

ভিক্ষাবৃত্তিকে চরমভাবে ঘৃণা করে ইসলাম। তবে ভিক্ষাবৃত্তিকে যারা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে কর্ম করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করেন তাদের জন্য বলা হয়েছে যারা ভিক্ষাবৃত্তি পেশাকে ছেড়ে দিয়ে কর্ম করে জীবন পরিচালনা করবে, তাদের সম্পর্কেও রসুল (স) একটি পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সে প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে রসুল (স) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাকে নিশ্চয়তা দিবে যে, সে অন্যের কাছে কিছু চাইবে না, তাহলে আমি তার জান্নাতের জিম্মাদার হব।’ (আবু দাউদ:১৬৪৩)।

যে ব্যক্তি নিজের অভাব-অনটনের কথা অন্যের নিকট প্রকাশ না করে মহান আল্লাহর নিকট নিজের অক্ষমতার কথা স্বীকার করে নেয়, আল্লাহ তায়ালা তার অভাব-অনটন দূর করে দেন এবং তাকে পূর্ণ সক্ষমতা দান করেন। এ সম্পর্কে রসুল (স) বলেছেন, যে ব্যক্তি অভাব-অনটনে পড়ে অতঃপর তা আল্লাহ তায়ালার নিকট উপস্থাপন করে, তবে অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তাকে দ্রুত অথবা বিলম্বে রিযিক দান করেন।’ (তিরমিজি:২৩২৬)।

Ad