দুবাইয়ে বাড়ি কেনায় শীর্ষে বাংলাদেশিরা।

প্রকাশিত: ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০২৩

দুবাইয়ে বাড়ি কেনায় শীর্ষে বাংলাদেশিরা।
booked.net

Manual6 Ad Code

অনলাইন ডেস্কঃ- কানাডার বেগম পাড়ার পর এবার সংযুক্ত আরব আমিরাতেও বাড়ি কেনায় বিপুল বিনিয়োগ করেছেন বাংলাদেশিরা। দুবাইয়ের সরকারি নথিপত্র ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২১ সালে জুন মাস পর্যন্ত বাংলাদেশিরা দুবাইয়ে ১২ কোটি ৩০ লাখ দিরহাম বা ২৮৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে জমি-বাড়ি কিনেছেন।

আরও জানা গেছে, দুবাইয়ে যেসব দেশের মানুষ জমি-বাড়ি কিনছেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশিরা সবার আগে। এই অর্থ বৈধপথে দেশ থেকে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। ফলে তা অবৈধপথেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দেশের বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রেও এই সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

দুবাইভিত্তিক ২০টি বাংলাদেশি আবাসন কোম্পানির ৩০ জন এজেন্টের মাধ্যমে এসব সম্পদ কিনেছেন বাংলাদেশিরা। এই তালিকায় আছেন ব্যবসায়ী, রাজনীতিক ও আমলারা। দুবাইয়ের এসব বিনিয়োগের গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। এ ছাড়া দেশটিতে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হলে গোল্ডেন ভিসা দেওয়া হয়।

বিশ্লেষকেরা বলেন, কোভিডের ভরা সময়ে দেশ থেকে এ পরিমাণ অর্থ বেরিয়ে যাওয়ার অর্থ হলো, সেই দুঃসময়েও কিছু মানুষ বিপুল অর্থ আয় করেছেন। এই অর্থ দেশে রাখা তাঁরা নিরাপদ বোধ করেন না।

বিশ্বের ধনীদের দ্বিতীয় ঘর হয়ে উঠছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। কয়েক বছর ধরেই এই বাড়বাড়ন্ত চলছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে দুবাইয়ের রেকর্ডসংখ্যক জমি-বাড়ি বেচাকেনা হয়েছে। দেশটির সরকারি নথি অনুসারে, গত বছর দুবাইয়ে মোট ৯০ হাজার ৮৮১টি জমি ও বাড়ি কেনাবেচা হয়েছে।

Manual3 Ad Code

অ্যারাবিয়ান বিজনেসের সংবাদে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে। তথ্যানুসারে, এর আগে ২০০৯ সালে ৮১ হাজার ১৮২টি জমি-বাড়ি বেচাকেনা হয়েছে। শুধু ডিসেম্বর মাসেই দেশটিতে আট হাজার আবাসন লেনদেন হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৩ শতাংশ বেশি।

খালি জায়গা বিক্রি বেড়েছে ৯২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং প্রস্তুতকৃত বাড়ি বিক্রি বেড়েছে ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ।

চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুবাইয়ে আবাসনের দামও বেড়েছে। গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত গড়ে সম্পদের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্যে ভিলা বা সুরম্য বাড়ির দাম বেড়েছে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ এবং অ্যাপার্টমেন্টের দাম বেড়েছে ৯ শতাংশ।

তবে দাম বাড়ার হার এখনো ২০১৪ সালের পর্যায়কে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। ভিলা ও অ্যাপার্টমেন্টের দাম এখনো সর্বোচ্চ দামের চেয়ে ২১ দশমিক ৫ ও ৪ দশমিক ২ শতাংশ কম।

একই সঙ্গে ভাড়াও বেড়েছে রেকর্ড হারে। দুবাইয়ে ২০২২ সালে অ্যাপার্টমেন্ট ও ভিলার ভাড়া বেড়েছে যথাক্রমে ২৭ দশমিক ১ ও ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ হারে।

দুবাই শহরের কাছেই বিলাসবহুল আবাসনের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত জায়গা পাম জুমেরাহ্। সেখানে ফ্ল্যাটের দাম প্রতি বর্গফুট ২ হাজার ৩২৪ দিরহাম এবং ভিলার দাম পড়ছে প্রতি বর্গফুট ৩ হাজার ৯২১ দিরহাম।

ভাড়ার দিক থেকেও এই পাম জুমেরাহ সবার চেয়ে এগিয়ে। সেখানে বার্ষিক ভাড়ার পরিমাণ ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৫২ দিরহাম থেকে ১০ লাখ ১৬ হাজার ৯৫৬ দিরহাম।

বাস্তবতা হচ্ছে, চাহিদা এত বেড়েছে যে দুবাইয়ে ভিলার ভাড়া এখন ২০১৯ সালের তুলনায় ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। গড়ে ভিলার ভাড়া পড়ছে বার্ষিক ২ লাখ ৮২ হাজার ১৫০ দিরহাম-এটাও ইতিহাসের সর্বোচ্চ।

Manual3 Ad Code

বিশ্বের ধনকুবেরদের প্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে দুবাই। সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার অতি ধনীদের দীর্ঘ মেয়াদে ‘গোল্ডেন ভিসা’ দিচ্ছে। বিদেশিদের বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধও শিথিল করা হচ্ছে। লেনদেনের ৭০ শতাংশ হচ্ছে নগদ অর্থে।

Manual8 Ad Code

পৃথিবীর সব দেশের ক্ষমতা ও সামর্থ্যবানেরা সেখানে বাড়ি কিনছেন। রাশিয়ার তেল ব্যবসায়ীরা পশ্চিমা দেশগুলোতে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে যেমন দুবাইয়ে বাড়ি কিনছেন, তেমনি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ফুলেফেঁপে ওঠা পার্শ্ববর্তী আরব দেশগুলোর ব্যবসায়ীরাও পাড়ি জমাচ্ছেন সেখানে। ফলে দুবাই এখন বহুজাতিক ও বহু সাংস্কৃতিক নগর হয়ে উঠছে। ব্রিটিশ ফুটবলার ডেভিড বেকহাম, বলিউড তারকা শাহরুখ, আম্বানি-তাঁরা এখন পরভূমে পরস্পরের প্রতিবেশী।

জানা গেছে, দুবাই শহরের বড় বড় আবাসন ব্যবসায়ী দের ব্যাংকে শত শত কোটি ডলার ঋণ আছে। একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ধূসর তালিকায় আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ অর্থ সে দেশে ঢুকছে-এমন সন্দেহ থেকেই তারা আরব আমিরাতকে ধূসর তালিকায় রেখেছে। সন্দেহ আরও বৃদ্ধির কারণ হলো, দুবাইয়ের ভূমি বিভাগ এসব বাড়ির ক্রেতাদের নাম প্রকাশ করে না।

কিছুদিন আগেই মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবল হয়ে গেল। তখন দেশটিতে এমন অনেক কিছুই হয়েছে, যা সাধারণত দেশটিতে হয় না। কিন্তু পর্যটক টানতে তাদের এসব ছাড় দিতে হয়েছে। এদিকে সৌদি আরবও নানাভাবে কঠোর শরিয়াহ্ আইন শিথিল করছে। নারীদের একা চলাফেরা থেকে শুরু করে গাড়ি চালানোর অধিকারও দেওয়া হয়েছে সে দেশে। এমনকি সৌদি আরব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে-এমন সংবাদও প্রকাশ করেছে আরব অঞ্চলের এক গণমাধ্যম। সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে আর তার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে দুবাই।

সূত্র :- প্রথম আলো।

Manual7 Ad Code

 

Ad

Follow for More!