ইসলামের দৃষ্টিতে খেলাধুলা।

প্রকাশিত: ৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৩১, ২০২৩

ইসলামের দৃষ্টিতে খেলাধুলা।
booked.net

Manual5 Ad Code

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি মানবজীবনের প্রতিটি অনুষঙ্গেই ইসলামের দিকনির্দেশনা রয়েছে। ইসলাম মানুষের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ সাধনেও বেশ গুরুত্বারোপ করেছে। তাই শরীরচর্চা এবং আনন্দ ও চিত্তবিনোদনের জন্য ইসলাম শর্তসাপেক্ষে খেলাধুলার অনুমতি দিয়েছে। কারণ খেলাধুলাও ইসলামের মহৎ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়ক হয়। যেমন শরীরচর্চার মাধ্যমে ইসলামের জন্য জীবনবাজি রেখে জিহাদের প্রশিক্ষণের কাজ হয়। দেহে প্রফুল্লতার সঞ্চার হয় এবং প্রাণশক্তি বৃদ্ধি পায়। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষা, রণ-নৈপুণ্যের প্রয়োজনে তীর নিক্ষেপ, বর্শা চালনা, দৌড় প্রতিযোগিতা ইত্যাদিকে ইসলাম সমর্থন করে। হাদিসে বর্ণিত রয়েছে- প্রিয় নবী সা: বলেন, ‘ঘোড়া অথবা তীর নিক্ষেপ কিংবা উটের প্রতিযোগিতা ছাড়া (ইসলামে) অন্য প্রতিযোগিতা নেই’ (তিরমিজি-৫৬৪)। তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি তীর চালনা শেখার পর তা ছেড়ে দেয় সে আমার দলভুক্ত নয়’ (মুসলিম-৭৬৬৮)।

তাই আধুনিক এই যুগেও ফুকাহায়ে কেরাম কুরআন-হাদিসের আলোকে ওইসব খেলাকে জায়েজ বলেছে যেগুলোতে দ্বীনি বা দুনিয়াবি কোনো উপকারিতা রয়েছে। পাশাপাশি যেকোনো খেলা জায়েজ-নাজায়েজ হওয়ার জন্য কিছু নীতিমালা উল্লেখ করেছেন।

Manual8 Ad Code

যেসব শর্তে খেলাধুলা জায়েজ-

আল্লাহর কোনো হুকুম পালনে উদাসীন না করাঃ- যেকোনো খেলা বৈধ হওয়ার জন্য প্রধান একটি শর্ত হলো- খেলার প্রতি এতটা মত্ত ও নেশাগ্রস্ত না হওয়া যা আল্লাহর হুকুম পালনে উদাসীন করে রাখে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মানুষের মধ্যে এক শ্রেণীর মানুষ এমন আছে, যারা খেলাধুলা-কৌতুকাবহ কথা ক্রয় করে মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট করার জন্য। আর এ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করে, এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি’ (সূরা লোকমান-৬)।

Manual6 Ad Code

খেলাকে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও পেশা না বানানোঃ- খেলাধুলা শরীরচর্চা, আনন্দ ও চিত্তবিনোদনের জন্য। এটি জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হতে পারে না। একজন মুমিনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য আল্লাহর ইবাদত করা। সেটিই মূল এবং একমাত্র লক্ষ্য। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমার ইবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি’ (সূরা আজ-জারিয়াত-৫৬)।

জুয়া ও বাজিমুক্ত হওয়াঃ- যেসব খেলায় জুয়া বা বাজি হয় বা যেসব খেলাকে কেন্দ্র করে জুয়া বা বাজির আসর বসে সেসব খেলা জায়েজ নয়। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদি ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা পরিহার করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও’ (সূরা মায়িদা-৯০)।

পর্দা সহ শরিয়তের কোনো বিধান লঙ্ঘন না হওয়াঃ- সব সময়ের মতো খেলাধুলার সময়ও পর্দা করা ও সতর আবৃত রাখা ফরজ। তাই যেসব খেলাধুলায় সতর আবৃত থাকে না কিংবা পর্দার বিধান লঙ্ঘন হয় যেমন ফুটবল খেলার সময় ঊরু খোলা থাকে এবং সাঁতার খেলার সময় শরীর প্রায় উলঙ্গ থাকে- এ জাতীয় খেলা জায়েজ নয় (আবু দাউদ-৪০১৭)।

Manual3 Ad Code

কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো বর্তমান বিশ্বে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যেসব খেলাধুলা হয় সেগুলো এই শর্তগুলোর কোনোটিই পাওয়া যায় না; বরং বর্তমানে ক্রিকেট, ফুটবল সহ প্রায় সব খেলাতেই ইসলামের মৌলিক অনেক বিধান লঙ্ঘন হয়। তাই এসব খেলাকে জায়েজ বলা যায় না।

Manual2 Ad Code

কোনো দলকে সমর্থন করা এবং খেলা দেখাঃ- এসব খেলায় কোনো দলকে সমর্থন করা এবং টিভিতে কিংবা সরাসরি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে এসব খেলা দেখাও জায়েজ হবে না। কারণ সেখানে নারী-পুরুষ অবাধ মেলামেশা, পর্দার লঙ্ঘন, গান-বাজনা সহ শরিয়তের অনেক বিধান লঙ্ঘন হয়। নির্দিষ্ট দলকে সমর্থন করতে গিয়ে ব্যাপক জুয়াবাজি হয় এবং দর্শকদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি এমনকি হত্যার মতো অপরাধ সংঘটিত হয়।

এ ছাড়া নির্দিষ্ট দলকে সমর্থন ও তাদের খেলা দেখতে গিয়ে প্রচুর অর্থের অপচয় হয়। হাজার হাজার টাকা খরচ করে পতাকা, জার্সি ইত্যাদি ক্রয় করে নিজে কে প্রিয় দলের সাজে সজ্জিত করে। নিজের সমর্থিত দলের প্রশংসা করতে গিয়ে কাফির-মুশরিকদের সাপোর্ট ও তাদের প্রশংসা করতে হয়, সমর্থিত দলের জয়ে আনন্দ উল্লাস, হাততালি, মিছিল ইত্যাদি করে থাকে যা ইসলামে নিষিদ্ধ। ইবনে উমার রা: সূত্রে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে’ (আবু দাউদ-৪০৩১)। অন্য বর্ণনায় এসেছে- রাসূল সা: বলেন, ‘মানুষ যাকে ভালোবাসে সে তারই সাথী হবে’(বুখারি-৬১৬৯)।

সর্বোপরি যেসব খেলাধুলা মানুষ কে দ্বীন ইসলাম ও আখিরাতের চিন্তা থেকে গাফেল করে রাখে, সেসব খেলা দেখা ও নির্দিষ্ট দলকে সমর্থন জানানো জায়েজ হবে না।

Ad

Follow for More!