মানবেতর জীবন যাপন করছেন লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা।

প্রকাশিত: ৬:২৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩১, ২০২৩

মানবেতর জীবন যাপন করছেন লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা।
booked.net

স্টাফ রিপোর্টঃ- কুলাউড়ার দক্ষিণাঞ্চলের বৃহৎ বিদ্যাপীট লংলা আধুনিক ডিগ্রী কলেজ। দীর্ঘ ১৭ বছরেও ডিগ্রি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এরপরও থেমে নেই পাঠদান কার্যক্রম। আর্থিক সঙ্কটে থেকেও শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদানে কোনো প্রকার অবহেলা দেখা যায়নি প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের মধ্যে।

জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের রাউৎগাঁও, টিলাগাঁও, পৃথিমপাশা, কর্মধা, হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের শিক্ষাপ্রেমী লোকজনের সহযোগিতায় ১৯৯৮
সালে কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৬ সালে ডিগ্রি পর্যায় চালু হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে শিক্ষার্থীরা উপজেলায় সেরা ফলাফল অর্জন করছে।

কলেজ সূত্র জানায়, শিক্ষকদের অক্লান্ত শ্রম আর বিলিয়ে দেওয়া জ্ঞানে শিক্ষার্থীরা আলোকিত হলেও প্রতিষ্ঠানটি এখনও ডিগ্রী এমপিওভুক্ত হয়নি। শিক্ষক, কর্মচারীরা এমপিওভুক্তির আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। ফলাফলে প্রতি বছর প্রতিষ্ঠানটি সফলতার চমক দেখায়। এমনকি উপজেলার মধ্যেও সেরা অবস্থান। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি আজও। ফলে দারিদ্র্যের অন্ধকারমুক্ত হয়নি শিক্ষকদের নিজেদের জীবন।

কলেজটির এমপিওভুক্তি সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। কলেজে বর্তমানে প্রায় ২ হাজার দুইশ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। স্থানীয়রা কলেজটি এমপিওভুক্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন। কলেজ সূত্র আরো জানায়, ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি ধারাবাহিকভাবে পাবলিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে আসছে। এই কলেজে ডিগ্রি (পাস)সহ ডিগ্রি (অনার্স) চালু রয়েছে। কলেজটি অত্যন্ত সুশৃঙ্খল। প্রতিদিন মোবাইল ফোন ছাড়া শিক্ষার্থীরা কলেজ ড্রেস পরে আসতে হয় প্রতিষ্ঠানে।

শিক্ষকবৃন্দ নিষ্ঠার সাথে পাঠদানের পাশাপাশি প্রতিদিন গেইট ও কলেজ গ্রুপের ভিত্তিতে মনিটরিং করেন। ২০২২ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে ৩৭টি জিপিএ ফাইভ অর্জন করে কুলাউড়া উপজেলা তথা মৌলভীবাজার জেলায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে। প্রতি বছর কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থী মেডিকেল কলেজসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে থাকে। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে প্রতিবারই লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজ শ্রেষ্ঠ কলেজের পুরস্কার পেয়েছে।

তাছাড়া এখানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের কার্যক্রমের আওতায় ভ্রাম্যমান জাদুঘর প্রদর্শনী, মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র ও ১৯৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা লিপিবদ্ধ করে ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে পাঠানো হয় এবং সেগুলো জাদুঘরে রক্ষিত আছে। এখানে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার রয়েছে। রয়েছে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের শাখা। প্রতিবছর শিক্ষার্থীরা বই পড়ে পুরস্কার অর্জন করে থাকে।

করোনাকালীন সময়ে সারা দেশে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ করে একশ প্রতিষ্ঠানে চালু রাখা হয়। এরমধ্যে লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজ অন্যতম। প্রতিবছর কলেজে ক্রীড়া ও সাহিত্য-সংস্কৃৃতি সপ্তাহ উদ্যাপন করা হয়। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা সেরা পুরস্কার লাভ করে। এছাড়া জাতীয় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে নানান পর্যায়ে বিশেষ স্থান অধিকার করে। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত বঙ্গবন্ধু কুইজ প্রতিযোগিতায় কলেজ পর্যায়ে তিনটি পুরস্কারের মধ্যে প্রথম ও তৃতীয় স্থান অধিকার করে।

বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা ২০২৩-এ উপজেলা পর্যায়ে প্রতিটি বিষয়ে প্রথম স্থান অর্জন করে নির্ধারিত সময়ে জেলা পর্যায়ে অংশগ্রহণ করবে। ফুটবল প্রতিযোগিতায় উপজেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে মৌলভীবাজার জেলায় রানার আপ শিরোপা অর্জন করেছে।

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আতাউর রহমান জানান, লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজ ২০০৬ সালে ডিগ্রি পর্যায় চালু হয়েছিল। দীর্ঘ ১৭ বছর ডিগ্রি পর্যায় এমপিওভুক্তি ছাড়া শিক্ষক কর্মচারীরা সেবা দিয়ে আসছেন। ১৭ বছর থেকে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীগণ অর্ধাহারে অনাহারে জীবন যাপন করছেন। এমনকি ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। যার ফলে স্বাচ্ছন্দ্যভাবে শিক্ষার্থীদের সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।

এমপিওভুক্ত হলে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটি বলিষ্ঠ
ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ও আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, শিক্ষাবান্ধব এই সরকারের আমলেই সারাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি হয়েছে। কুলাউড়া উপজেলার মধ্যে লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজ বৃহৎ একটি প্রতিষ্ঠান। ফলাফলেও প্রতিবছর প্রতিষ্ঠানটির অর্জন সন্তোষজনক। প্রতিষ্ঠানটি ডিগ্রি পর্যায় এমপিওভুক্তি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে তিনি জানান।

Ad