প্রতিদিনই ঘটছে দূর্ধষ চুরি ও খুনের ঘটনা। কুলাউড়া এখন আতঙ্কের নগরী।

প্রকাশিত: ৭:৩৯ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৬, ২০২৩

প্রতিদিনই ঘটছে দূর্ধষ চুরি ও খুনের ঘটনা। কুলাউড়া এখন আতঙ্কের নগরী।
booked.net

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ- কুলাউড়া এখন আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে দূর্ধষ চুরি ও খুনের ঘটনা। সাধারণ মানুষজন এখন সন্ধ্যার পর চলাচলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কিশোর গ্যাং এর দৌরাত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় সন্ধ্যার পর চোরেরা হানা দিচ্ছে বাসা বাড়িতে। কখনো ধরা পড়ছে আবার কখন মোবাইল ও দামি জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্রটি। সম্প্রতি আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায়’ও এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে।

এদিকে শহরের মিলি প্লাজা সহ বিভিন্ন দোকানে দূর্ধর্ষ চুরির ঘটনায় কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি ধারাবাহিক ভাবে কর্মসূচি পালন করে অনির্দিষ্টকালের জন্য দোকানপাট বন্ধ রাখার আল্টিমেটাম দিয়েছে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি।

শহরের ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান লিটু ও রফিক মিয়া বলেন, কুলাউড়ার অবস্থা এমন হয়েছে রাতে দোকান বন্ধ করে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারব কিনা? সে নিয়ে আমরা ও আমাদের পরিবার উদ্বিগ্ন থাকে। কখন কাকে লাশ হতে হবে সেই দুঃশ্চিন্তায় রয়েছি আমরা। আবার রয়েছে দোকান চুরির ভয়।

পৌরবাসীর অভিযোগ, কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে শুরু করে বিভিন্ন পাড়ায় সন্ধ্যার পর রাস্তায় উঠতি বয়সী মাদক সেবিদের দেখা যায়। তারা যে কোন সময় দামি মোবাইল, টাকা কড়ি ছিনতাই করতে পারে। এছাড়া ইভটিজিং সমস্যায় আতঙ্কিত অভিভাবকরা।

অভিযোগ আছে, শহরে দিনে ও রাতে পুলিশী টহল তেমন একটা না থাকায় বেপরোয়া উঠতি বয়সের মাস্তানরা স্ব জোড়ে মোটর সাইকেল চালিয়ে শহরের রাস্তায় ও এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তাছাড়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুরা ব্যাটারি চালিত টমটমের চালক। তারা টমটমে ছোট মাইক বা কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে পাশে বন্ধুকে বসিয়ে পঙ্খিরাজের মতো টমটম চালায়। এদের হাতে দূঘর্টনা বেশি ঘটে।

কুলাউড়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে দক্ষিণবাজার বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন একটি মার্কেটের বাথরুম থেকে গেল মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) অর্ধগলিত মহিলার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ পচে গন্ধ ছড়ালে লাশের সন্ধান পাওয়া যায়। সালোয়ার কামিজ পরা মহিলার কোন পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে বয়স আনুমানিক ২৫-২৬ বছর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নে ২৩ জুলাই রোববার রাত ১১টায় শ্বশুর বাড়ীতে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে জামাই রুবেল আহমেদ (৩২) কে। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এই হামলা চালানো হয়। নিহতের বাড়ী উপজেলার রাউৎগাঁও ইউনিয়নে মনরাজ গ্রামে।

নিহতের স্বজনরা জানান, রোববার (২৩ জুলাই) রাত ৯টায় কর্মধা ইউনিয়নে তার শ্বশুর বাড়ীতে ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রথমে তার চোখে-মুখে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে দেওয়া হয়। পরে কুপিয়ে মারাত্মক ভাবে জখম করলে স্বজনরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়।

অপর দিকে, কুলাউড়া পৌর শহরের দক্ষিণবাজারে ব্যাটারিচালিত টমটম ধাক্কায় শুক্রবার (২১ জুলাই) রাত ১২টায় মহসিন আহমদ (৩৮) নামক এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত মহসিন উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের দক্ষিণ হিংগাজিয়া গাজীপুর এলাকার পোস্ট মাষ্টার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ১০ টায় শহরের দক্ষিণ বাজারে দ্রুতগামী একটি ব্যাটারী চালিত টমটম মহসিন আহমদ’কে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। মুমূর্ষু অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কুলাউড়া হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় মৌলভীবাজার জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে মহসিন মারা যান।

তাছাড়া, কুলাউড়া উপজেলা জয়চন্ডী ইউনিয়নের আব্দুল হামিদের ছেলে জিলান কে দক্ষিণবাজারের একটি মোবাইল দোকানে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তবে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩ যুবককে আটক করেছে পুলিশ।

কুলাউড়া উপজেলার সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক থাকলেও কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুছ ছালেক এ প্রতিবেদককে বলেন, ডাকাতি,ছিনতাই এসকল ঘটনা বেশি ঘটলে আমাদের ভাষায় আইন শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে বলে ধরা হয়। তবে খুন, চুরি এসব আইন শৃঙ্খলার অবনতির নিয়ামক নয়।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের চুরি হওয়া ৪টি মোবাইল পুলিশ উদ্ধার করেছে পুলিশ কিন্তু যাদের কাছে পাওয়া গেছে তারা সবাই বলেছে, এগুলো ওই ব্যবসায়ীদের (যাদের দোকান থেকে ২০ লাখ টাকার মোবাইল চুরি হয়েছে) কাছ থেকেই কিনেছে। আমরা তো বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে আইন শৃঙ্খলার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আমি মনে করি কুলাউড়ার আইন শৃঙ্খলার অবনতি হয় নি।

অপরদিকে, কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি মো. মাহমুদুর রহমান খোন্দকার এ প্রতিবেদককে জানান, বিগত ২-৩ মাস ধরে এই উপজেলায় কিছু দূর্ধর্ষ চুরির ঘটনা,খুন সহ নানা অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভা করে কিছু নির্দেশনা দিয়েছি যাতে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে।

এছাড়া জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় আমরা বিষয়গুলো উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। ইভটিজিং ও মাদকের বিস্তারের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহন করেছি। কোথাও এধরণের ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষনিক ব্যববস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। আশা করি এলাকাবাসীর উদ্বেগের বিষয় টি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Ad