ডিজিটাল মাধ্যমে ইসলামের  দাওয়াত।

প্রকাশিত: ২:২৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১

ডিজিটাল মাধ্যমে ইসলামের  দাওয়াত।
booked.net

 

ডেস্কঃ বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত মাধ্যম ইন্টারনেট। দুনিয়ায় প্রায় সব বিষয় ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত কিংবা সম্পর্কিত। টেলিফোন, রেডিও, পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন, মোবাইল ও কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রযুক্তির উন্নত সংস্করণ ইন্টারনেট। এটি ব্যবহার করছে ছাত্র-শিক্ষক, নারী-পুরুষ, অফিসার-কর্মচারী, ছোট-বড় সবাই। যেহেতু দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে, তাই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা যাবতীয় অনৈতিক পন্থা পরিহার করে শুধু প্রয়োজনীয় কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন এটাই প্রত্যাশিত।

বর্তমানে সুউচ্চ অট্টালিকার দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে দাওয়াতি কাজ করা, মানুষকে ইসলামের পথে আহ্বান করা, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করা কঠিন। এমতাবস্থায় ইন্টারনেট প্রযুক্তি হতে পারে দাওয়াতি কাজের এক বিশ্বমঞ্চ। এর মাধ্যমে যেকোনো বক্তব্য, আবেদন কিংবা আহ্বান মুহূর্তেই ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। ইসলামের প্রচার-প্রসারে ইন্টারনেট তথা ডিজিটাল মাধ্যমকে কাজে লাগানো এখন সময়ের দাবি।

আগের দিনে ইসলাম প্রচারক ও সমাজ সংস্কারকরা বাজারে, মসজিদে ও বিভিন্ন লোকালয় কিংবা সমাগমস্থলে গিয়ে মানুষকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিতেন। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির এ উৎকর্ষের যুগে একজন দাঈ ঘরে বসেই ডিজিটাল মাধ্যমে দাওয়াত পৌঁছাতে পারেন কোটি কোটি লোকের দুয়ারে। এর মাধ্যমে কাজ করা অনেক সহজ এবং তুলনামূলক খরচও অনেক কম। একবার কোনো বিষয়ের লেখা বা বক্তব্য পোস্ট করলে দীর্ঘমেয়াদি দাওয়াতের প্রচার চলতে থাকে। মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে হয় না, ব্যাপক অঙ্গন জুড়ে একে কাজে লাগানো যায়। নেতিবাচক কিছু দিক থাকলেও এর ইতিবাচক দিকই বেশি।

ইন্টারনেটের বিভিন্ন লেখা পড়ে কিংবা আলোচনা শুনে বর্তমানে অনেকেই ইসলাম সম্পর্কে জানছেন, সুতরাং এর মাধ্যমে আরও ব্যাপকভাবে দাওয়াতি কাজের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ডিজিটাল মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে ইসলামের দিকে মানুষকে আহ্বান করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন আলেম সমাজ। আলেমদের মধ্যে মসজিদের ইমাম-খতিব, ইসলামি স্কলার, ইসলামি চিন্তাবিদ, ইসলামি লেখক, ইসলামি গবেষক, হাদিসের শিক্ষক, কোরআনের মুফাসসিরসহ সংশ্লিষ্টরা প্রবন্ধ-নিবন্ধ, প্রশ্নোত্তর, ওয়াজ-নসিহত, মাসয়ালা-মাসায়েল, কোরআনের তাফসির, হাদিসের ব্যাখ্যা, সম-সাময়িক বিষয়ে ইসলামের বিধান বিষয়ক লেখা কিংবা বয়ানের অডিও-ভিডিও নিয়মিত নিজস্ব ওয়েবসাইট, ফেইসবুক পেইজ, কিংবা ইউটিউবে আপ করতে পারেন।

প্রয়োজনে দৈনন্দিন ঘটে যাওয়া বিষয়গুলোর ইসলামি দিক তুলে ধরে প্রবন্ধ লিখতে পারেন। ইসলাম বিষয়ক দৈনিক, মাসিক ও ত্রৈমাসিক পত্রিকা চালু করা যেতে পারে। ইসলামি মাহফিল, সেমিনার কিংবা আলোচনা সভার সরাসরি সম্প্রচারসহ অডিও-ভিডিও আপলোড করা যেতে পারে। বিভিন্ন উপলক্ষে ইসলামি কনটেন্ট (বিষয়সূচি) প্রচারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যেমন হজ ও রমজান মাসে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা ও লেখা প্রচার করা। যে মাসে বিশেষ কোনো ইবাদত রয়েছে, মানুষকে তার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া। যেমন লায়লাতুল কদর ও আশুরার রোজা ইত্যাদি। সম-সাময়িক ইস্যুতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইসলামি দিক নির্দেশনাগুলো মানুষকে জানানো। মানুষকে বেদয়াত, নিষিদ্ধ ও হারাম কাজ থেকে সতর্ক করা। জনকল্যাণমূলক কাজে মানুষকে পথ দেখানো। বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্যের আবেদন প্রচার করা। মানুষকে সুসংবাদ পৌঁছে দেওয়া। শালীনভাবে ইসলামের অপপ্রচারের জবাব দেওয়া। যতদিন এগুলোর মাধ্যমে মানুষ উপকৃত হবে, ততদিন সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সওয়াব পেতে থাকবেন।

হাদিসে হযরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো মানুষ মারা যায়, তখন তার সমস্ত আমলের ধারা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি কাজ ছাড়া। সেগুলো হচ্ছে সাদকায়ে জারিয়া, উপকারী জ্ঞান ও নেক সন্তান।’ সহিহ্ মুসলিম

অন্য হাদিসে আছে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজের প্রতি মানুষকে আহ্বান জানাবে, যারা তার অনুসরণ করবে তাদের অনুরূপ সওয়াব ওই ব্যক্তির জন্য লেখা হবে। অথচ এটি তাদের সওয়াবের কোনো অংশ কমিয়ে দেবে না। আর যে ব্যক্তি কোনো ভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান জানাবে, তাকে যারা অনুসরণ করবে তাদের সমান পাপ লেখা হবে তার জন্য। অথচ এটি তাদের পাপগুলো থেকে এতটুকু কমবে না।’ সহিহ্ মুসলিম

সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানকে মনে রাখা দরকার, জীবনে যত সময় ব্যয় হবে  কিয়ামতের দিন এ সময়গুলোর হিসাব দিতে হবে।  ডিজিটাল মিডিয়াগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ সত্য, ন্যায় ও সুন্দরের পথে চলুক, অন্যায় ও অশ্লীলতা পরিহার করুক এবং এখন থেকে মানবজাতি আরও বেশি উপকৃত হোক সে’ই প্রত্যাশা রইলো।

Ad