চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে রোজার উপকারিতা।

প্রকাশিত: ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৪, ২০২৩

চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে রোজার উপকারিতা।
booked.net

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতিটি বিধানে মানবজাতির শারীরিক, আত্মিক, ইহলৌকিক, পারলৌকিক উপকারিতা ও কল্যাণ রয়েছে। রোজার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। রোজার ভেতরও রয়েছে ইহলৌকিক, পারলৌকিক, শারীরিক ও আত্মিক উপকারিতা।

হাদিসে এসেছে, রাসুলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা বলেছেন রোজা পালন করো, তোমরা সুস্থ থাকবে। (মুসনাদে আহমাদ)

সুতরাং হাদিসে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, রোজা রাখার ভেতর সুস্থ থাকার অনেক উপাদান রয়েছে।

রোজার পারলৌকিক উপকারিতাঃ- হাদিস শরিফে বিবৃত হয়েছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন আল্লাহ রাব্বুল ইরশাদ করেন, রোজা আমার জন্য আর আমি নিজ হাতে রোজার প্রতিদান দিবো। (সহিহ মুসলিম: ২৭৬০)

অন্য হাদিসে এসেছে আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রমজান উপস্থিত হলে জান্নাতের দ্বারসমূহ উন্মুক্ত করা হয়, দোজখের দ্বারসমূহ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়, আর সকল শয়তানকে করা হয় আবদ্ধ। (সহিহ বুখারি: ১৮৯৯)

রোজার ইহলৌকিক ও শারীরিক উপকারিতা:- বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে রোজার কিছু শারীরিক উপকারিতা বের করেছেন সেগুলো হলোঃ-

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ:- রোজা রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষের রক্তে এক ধরনের চর্বি থাকে, যাকে কোলেস্টেরল বলে। কোলেস্টেরল অনেক বেশি পরিমাণে থাকলে রক্তনালিতে চর্বি জমে নালি সরু হয়ে যেতে পারে। এতে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আরব আমিরাত ও বাহরাইনের গবেষকরা ৯১টি গবেষণা একত্র করে দেখেছেন, রমজানের রোজায় রক্তে কোলেস্টেরল আগের তুলনায় ভালো নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর মধ্যে বাংলাদেশেরও তিনটি গবেষণা রয়েছে।

১৯৯৭ সালে ‘দেহের সজীব পুষ্টির ইতিবৃত্ত’ শিরোনামে পরিচালিত এক গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, রোজা মানবদেহের খারাপ কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমিয়ে নিয়ে আসে এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয়। আর এর মাধ্যমে মানুষের হার্টকে কার্ডিও ভাসকুলার রোগ থেকে রক্ষা করে। (দৈনিক আল-আরাবিয়া, ৮ জুলাই, ২০১৪)

ওজন কমাতে সাহায্য করে:- বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের করা ৩৫টি গবেষণা একত্র করে দেখা গেছে—রমজানের রোজার পর গড়ে এক থেকে দেড় কেজি ওজন কমে। এটা গড় হিসাব। অর্থাৎ কারও ওজন এর থেকে বেশি কমেছে, আবার কারও ওজন বেড়েছে। (প্রবন্ধ : Effects of ramadan and non-ramadan intermittent fasting on body composition: A systematic review and meta-analysis.)

পেটের স্বাস্থ্য ভালো হওয়া:- মানবদেহের নাড়ি-ভুঁড়িতে অনেক জীবাণুর বসবাস, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করাসহ আরও অনেকভাবে স্বাস্থ্যের উপকার করে। না খেয়ে থাকলে শরীরে উপকারী জীবাণুর সংখ্যা বাড়ে। অর্থাৎ রোজা রাখলে এই ক্ষেত্রে উপকারিতা আছে। (প্রবন্ধ : Fasting challenges human gut microbiome resilience and reduces Fusobacterium)

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ:- ২০১৯ সালে লন্ডনের পাঁচটি মসজিদে একটি গবেষণা হয়। গবেষণার নাম ‘লন্ডন রামাদানস স্টাডি’। রমজানের আগে-পরে ব্লাড প্রেশার মেপে দেখা যায় কোনও পরিবর্তন আছে কি না? সেখানে দেখা গেলো সিস্টোলিক ব্লাড প্রেসার তথা ব্লাড প্রেসারের ওপরের সংখ্যাটা কমেছে সাত মিলিমিটার মার্কারি আর দ্বিতীয় সংখ্যাটি কমেছে তিন মিলিমিটার মার্কারি। (পারদস্তম্ভের মিলিমিটারের এককে রক্তচাপ পরিমাপ করা হয়)।

ভারত, পাকিস্তান, কাতারসহ অন্যান্য দেশের আরও ৩২টি গবেষণা একত্র করে দেখা গেছে রমজানের রোজায় ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে উন্নতি আসে ওজন না কমলেও। ইফতার ও সাহরিতে বেশি বেশি ফলমূল খেলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করা আরও সহজ হবে। (প্রবন্ধ : Effect of Religious Fasting in Ramadan on Blood Pressure: Results From LORANS (London Ramadan Study and a Meta Analysis)

সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ:- রোজা রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তুরস্কের গবেষকরা ইরান, মিসর, কুয়েতসহ আরও কয়েকটি দেশের করা ১৬টি গবেষণা একত্র করে দেখেছেন যে, রোজা রাখার পর নারী-পুরুষ উভয়ের রক্তে সুগারের মাত্রা আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। আরেকটি আলাদা গবেষণায় ইন্দোনেশিয়ার গবেষকরা ২৮টি গবেষণা একত্র করে দেখেছেন, রমজানের রোজা রাখার ফলে ডায়াবেটিক রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে উন্নতি হয়েছে। (প্রবন্ধ : Time restricted eating for the prevention of type 2 diabetes)

এ ছাড়াও রোজার আরও বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে যা সময়-সময়ে গবেষকদের গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে। তাই আমরা আশা করতে পারি, রোজায় যেমনিভাবে আমাদের পারলৌকিক উপকার হবে তেমনিভাবে ইহলৌকিক ও শারীরিক উপকারও হবে ইনশাল্লাহ।

Ad