কোন্ যাদুমন্ত্রে এঁরা মুসলিম আদর্শ থেকে সরে যাচ্ছে!

প্রকাশিত: ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ, মে ১০, ২০২১

কোন্ যাদুমন্ত্রে এঁরা মুসলিম আদর্শ থেকে সরে যাচ্ছে!
booked.net

“পুলিশের সাজোঁয়াযানে আগুন দেওয়া হেফাজতকর্মী গ্রেপ্তার”
কোন্ যাদুমন্ত্রে এঁরা মুসলিম আদর্শ থেকে সরে যাচ্ছে!

“পুলিশের সাজোঁয়াযানে আগুন দেওয়া হেফাজতকর্মী গ্রেপ্তার” শিরোনামে গত ৮ মে, ২০২১ তারিখের এনটিভি অনলাইন নিউজপোর্টালে একটি খবর প্রকাশ হয়। খবরটি পড়ার পর কিছু ভাবনা আসলো তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।

.

এখবর পড়ার প্রেক্ষিতে শুধু যে এভাবনা আসছে তাও নয়, এরকম চিন্তা প্রায়শই মাথায় ঘুরপাক খায়। খবরটি পড়ে ধৃত ছেলেটার জন্য মনে খুবই কষ্ট লাগলো। ব্রাম্মণবাড়ীয়ায় সম্প্রতি হেফাজতের ধ্বংসাত্মক তান্ডবের সময়ে প্রীতম নামের ছেলেটি পেট্রোলের গ্যালন নিয়ে নিজে পুলিশের সাজোঁয়া গাড়ীর উপরে উঠে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে গাড়ীটিকে পুড়িয়ে ফেলে। পুলিশ বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ থেকে তা নিশ্চিৎ হয় অর্থাৎ ছেলেটিকে সনাক্ত করে।

.

সে মাদ্রাসায় পড়ে কিনা ঐ খবর থেকে তা জানা যায়নি। তবে ঘটনা ঘটিয়ে তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য নিয়ে গাজীপুর জেলার একটি স্থানে ছোট একটি ঘর ভাড়া করে থাকা শুরু করে। সেখান থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিকভাবে বুঝা গেলো সে এ অপরাধের সাথে জড়িত ছিল।

.

এখন প্রশ্ন হলো, এভাবে একটি দুর্ধর্ষ অপরাধকার্য যে অনেক বড় একটি অপরাধ, এটি তার জন্য বড় একটি বিপদ ডেকে আনতে পারে, এবিষয়টি কেন সে বেমালুম ভূলে গেলো? কী করে ভাবলো, অপরাধ করে পার পাওয়া যায়! কী এমন সমস্যা হয়েছিল যে, স্রষ্টার জমীনকে অশান্ত করে তোলার এতোবড় প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল? কোন যাদুমন্ত্রে তাদের মাইন্ড এভাবে সেট হয়ে গেল বা কারা ধর্মের নামে এরকম অধর্মের কাজের জন্য তাদের মাইন্ডসেট করল। এটি আজ জাতির প্রশ্ন।

.

এবিষয়ে আজ অনেক কিছুই দিবালোকের মত্য সত্য। ইসলামের পতাকাতলে গড়ে ওঠা কথিত ইসলামী নেতারা কী উদ্দেশ্যে বা কোন স্বর্গের টিকেট খরিদ করার জন্য এই শিশুকিশোর বা যুবকযুবাদের ব্রেনওয়াস করে তাদেরকে অপরাধমূলককর্মের দিকে ঠেলে দিচ্ছে? ধাবিত করছে পাপমিশ্রিত সর্বনাশা অন্ধকার জীবনের দিকে? 

.

আজ যে ছেলেটির কথা বলছি, যে সন্ত্রাসকর্মে গ্রেফতার হয়ে অন্ধকার জেলজীবনে গেছে। সেখান থেকে ভালকিছু শিখে ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই। তার জীবনের খাতায় একটি সন্ত্রাসকর্মের সীল লাগিয়ে দিয়েছে। তার জন্য বা তাদের জন্য, তার বা তাদের পরিবার পরিজনের জন্য কষ্ট হয়, হয় দুঃখ। ভালমন্দ বুঝার বয়সে উপনীত হবার পরেও তারা কেন বুঝেনা বা বুঝার চেষ্টা করেনা বা তাদেরকে বুঝতে দেয়া হয়না, কোনটা সরলপথ আর কোনটা জটিলপথ!

.

ধৃত ছেলেটির শারীরিক অবয়ব দেখে স্পষ্ট প্রতীয়মান, সে ইসলামের ধারক ও বাহক অর্থাৎ একজন মুসলিম। কেবল মুসলিমের কেন, সমগ্র জগতের মহান  স্রষ্টা তাঁর সৃষ্ট ও বিস্তৃত জমীনে কলহবিবাদ, অশান্তি বা ধ্বংসাত্মককর্ম না করার জন্য চরমভাবে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন তাঁর কোরাণিক বানীদ্বারা, আর তাঁর প্রেরিত রাসুলগণও সৃষ্টার বাণী এভাবেই প্রচার করে গেছেন।

.

তবে এরা কোন্ স্রষ্টার এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ধর্মের পতাকাতলে এ অধর্মের কাজ চালায়? কেন তান্ডব চালিয়ে পৃথিবীকে ভীতসন্ত্রস্ত ও অশান্তির অবাসযোগ্য করে তুলছে? উত্তর আছে কি? মনে হয় উত্তর নাই!

.

আমি এখানে ধর্মকে ফোকস করছি এজন্য যে, যাঁর বা যাঁদের কথা বলছি তারা ধর্মের ঠিকাদার হিসাবে নিজেদেরকে রাষ্ট্র ও সমাজের কাছে পরিচয় দিচ্ছেন এবং ধর্মরক্ষার সকল দায়িত্ব যেনো তাদের। যদিও এখানে ধর্ম রক্ষার কিছু নেই। কারণ, বাংলার কেউ বলছেনা যে, ধর্মকর্ম করা যাবেনা।

.

অনেকে বা অনেক দেশ হয়তো ধর্মের বাড়াবাড়ীতে বিরক্ত হয়ে বলছে, ধর্মদ্বারা আরোপিত সীমারেখার মধ্যে থেকে ধর্মকর্ম পালন করুন, নচেৎ নয়। এটা শুধু মুসলিম ধর্মের ক্ষেত্রে নয়, সকল ধর্মের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। মোটাদাগে শাসকগোষ্ঠির কথা বাদ দিলে, পৃথিবীর যেকোনো শান্তিপ্রিয় মানুষই চাইবে, কোনো প্ল্যাটফরম থেকেই অশান্তি নয়, অবশ্যই নয় কোনো সন্ত্রাস।

.

আরো পড়ুনঃ “আত্মহত্যার প্ররোচনার” মামলার আইনের বিধি-বিধান এবং অধিকাংশক্ষেত্রে খারিজ হবার বাস্তবতা!

.

যতটুকু জানি, মুসলিমের আদর্শ এটা নয়। তারা যেসকল বাঁশীওলার যাদুরবাঁশীর সুর শুনে এগুলো করে নিজের অবচেতন মনেই তাদের উজ্জলপ্রতীম একটি সুন্দর ভবিষ্যত শেষ করে দিচ্ছে। এটা তাদের বুঝতে বা বুঝাতে যতবেশী দেরী হবে জাতি ততো বেশীই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

.

কারণ, তাদের হাতেই জাতির আগামীর ভবিষ্যত গড়ার গুরু দায়িত্ব নিহিত। একমুখী চেতনা বা শিক্ষায় জাতীয় দায়িত্বপালন হয়না। জাতি বহুমুখী। সার্বিক বা বহুমূখী প্রাজ্ঞময়তা দ্বারাই জাতি গড়তে হয়। এ সত্যতা তাড়াতড়ী আমাদের সবার বুঝা দরকার, দেরী করা যাবেনা।

.

আমাদের প্রজন্মকে আলোর দিশা দেখাবার দায়িত্ব আমাদেরই। এখানে আমরা অগ্রজরা বিচ্যুত বা স্বজাতীয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে থাকলে পাপের গ্লানি আমাদেরকে ছাড়বেনা।
ধন্যবাদ।
লেখক- এড্ মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট।
সাবেক সহসভাপতি (১৯৯৩-৯৪)- জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা, ঢাকা।
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি- জুড়ী প্রেসক্লাব(১৯৯৮), মৌলভীবাজার।
কলামিস্ট ও আইনগ্রন্থ লেখক। ০১৭১-১৯৮০১২৮।

Ad