মোবাইল ফোন ব্যবহারে যে আদব  রক্ষা করা জরুরী।

প্রকাশিত: ৭:০২ পূর্বাহ্ণ, জুন ১১, ২০২২

মোবাইল ফোন ব্যবহারে যে আদব  রক্ষা করা জরুরী।
booked.net

তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে মোবাইল ফোন মানুষকে যেমন দিয়েছে অনেক উপকার তেমনি এর ব্যবহারে অনেক অসুবিধাও রয়েছে। মোবাইল ফোনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইন্টারনেট। তাই মানুষ এ মোবাইল ফোনেই মেইল, ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে থাকে। নানা প্রয়োজনীয় তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে।

মোবাইল ফোন যেন কারও ক্ষতির কারণ হয়ে না দাঁড়ায় সে বিষয়গুলো মাথায় রাখা প্রত্যেক মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর জন্য আবশ্যক। মোবাইল ফোন ব্যবহারে যে আদব  রক্ষা করা জরুরি, তাহলো-

নামাজে একাগ্রতার বিঘ্ন না ঘটানোঃ- নামাজের জামাআত অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় নির্ধারিত। এ নির্ধারিত সময়টিতে মোবাইল ফোনে কাউকে কল, ম্যাসেজ, ম্যাসেঞ্জার, ইমু, হোয়াটস অ্যাপসহ কোনো মাধ্যমেই কল না দেয়া। জামাআতের সময় কোনো কল কিংবা নোটিফিকেশন আসলে তা নামাজি একাগ্রতায় মারাত্মক বিঘ্ন ঘটায়। তারপাশে থাকা ব্যক্তির মনোযোগেও বিঘ্ন ঘটে। নামাজে মানুষের একাগ্রতাই মূল ইবাদত।

‘হ্যালো’ বলে কথা শুরু না করাঃ- কথা বলার শুরুতে সালাম বিনিময় হচ্ছে ইসলামের সুমহান নীতি। এ সালামে রয়েছে পারস্পরিক দোয়া ও শান্তির আহ্বান। তাই পারস্পরিক সাক্ষাতের পাশাপাশি মোবাইল ফোনে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে কথা বলা উত্তম। একাধিকবার ফোন করা হলেও প্রতিবারই সালামের মাধ্যমে কথা বলা। হাদিসের নির্দেশনাও এটি।

ঘুমের সময় ফোন না দেয়াঃ- স্বাভাবিক ভাবে ঘুমের সময় কাউকে ফোন না দেয়াই উত্তম। ঘুমের সময় মানুষকে অহেতুক কষ্ট না দেয়াই উত্তম। কারণ মুমিনের ঘুমও ইবাদত। এমন অনেক মানুষ আছেন যাদের ঘুম ভেঙে গেলে আর ঘুম আসে না। তাই একান্ত প্রয়োজন বা বিপদ-আপদ না হলে ঘুমের স্বাভাবিক সময়ে ফোন না দেয়া।

মিথ্যা তথ্য না দেয়াঃ- মোবাইল ফোনে অবস্থান সম্পর্কে অনেকেই মিথ্যাচার করে থাকেন। অনেক সময় দেখা যায়, কোথায় আছেন প্রশ্ন করা হলে, উত্তরে সঠিক স্থানের নাম না বলে অন্য কোনো স্থানের নাম বলা হয়। এটি জঘন্য মিথ্যাচার। এটি কোনোভাবেই বলা সঠিক নয়। জীবন নাশের আশংকা না থাকলে এমন মিথ্যা বলা মারাত্মক গোনাহ।

বিরতিহীন কল না দেয়াঃ- কাউকে কল দেয়ার পর রিসিভ না হলে কিংবা ম্যাসেজ পাঠালে কোনো রিপ্লাই বা উত্তর না পেলে কিছু সময় অপেক্ষা করা। কল রিসিভ না হলে কিংবা সঙ্গে সঙ্গে উত্তর না পেলে লাগাতার কল কিংবা ম্যাসেজ করাও অনুচিত। কারণ যাকে কল বা ম্যাসেজ দেয়া হয়, সে ব্যক্তি যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকে তবে এ কল ও ম্যাসেজ ওই ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ কাজে বিঘ্ন ঘটায়।

প্রয়োজন বেশি হলে সময় নিয়ে সর্বোচ্চ ২/৩ বার ফোন দেয়া অথবা ম্যাসেজের মাধ্যমে জরুরি প্রয়োজনের কথা জানিয়ে দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। নতুবা পরে যোগাযোগের চেষ্টা করা।

যে সময় সংযোগ বিচ্ছিন করা ঠিক নয়ঃ- মোবাইলে কথা শেষ করার পর একে অপরকে সালাম দেয়। অনেকেই সালামের উত্তর শোনার আগেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এমনটি ঠিক নয়, কেননা সালাম দেয়া সুন্নাত আর উত্তর শুনিয়ে দেয়া ওয়াজিব। তাই সালাম দিয়েই কল না কেটে দিয়ে সালামের উত্তর শুনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা।

পরিচয় দেয়াঃ- মোবাইল ফোনের কল রিসিভ করে সালাম বিনিময়ের পর পরিচয় দেয়া। মোবাইল ফোনে কথা উভয় ব্যক্তি সঠিক কিনা তা যাচাই করে নেয়া। অতঃপর প্রয়োজনীয় কথা বলা উত্তম। নাম-পরিচয়বিহীন লোকের সঙ্গে জরুরি কথা বলায় ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।

অসংযত কথা না বলাঃ- ইসলামি শরিয়তের বিধান মতে মোবাইল ফোনে কিংবা পর্দার আড়ালে কথা বলার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ যথাযথ সতর্কতা ও সংযত হওয়া জরুরি। নারী-পুরুষ মাহরাম না হলে তাদের কথা বলার প্রয়োজন ও ধরণ বিবেচনা করা আবশ্যক। কেননা অপরিচিত নারী-পুরুষ পর্দার আড়ালে কিংবা মোবাইল ফোনে কথা বলার ক্ষেত্রে আচরণ ও উচ্চারণে আকর্ষন সৃষ্টি হলে কিংবা ফেতনার সম্ভাবনা থাকলে উভয়ের কথা বলা সম্পূর্ণ হারাম বা নিষিদ্ধ।

ফ্রি মিনিটের অহেতুক ব্যবহারঃ- মোবাইল কোম্পানি অনেক সময় নির্ধারিত সময় কিংবা অতিরিক্ত সময় কথা বলার সুযোগ দেয়। এ সুযোগে কোনো ব্যক্তির জন্য অহেতুক কথা বলে সময় ব্যয় করা ঠিক নয়। সুতরাং যখন এমন সুযোগ আসবে সে সুযোগটি ভালো কথা ও কাজে ব্য করা উচিত। ঈমানদার ব্যক্তি কখনো অহেতুক কথায় সময় কাটাতে পারে না।

অনুমতি নিয়ে কথা বলাঃ- অনেকেই মোবাইল ফোন করেই কথা বলা শুরু করে দেন। এমনটি না করে কথা বলার আগেই অনুমতি চেয়ে নেয়া কিংবা তিনি কথা বলার জন্য প্রস্তুত বা তার হাতে পর্যাপ্ত সময় আছে কিনা তা জেনে নেয়া। অতপর দ্রুত প্রয়োজনীয় কথা সেরে নেয়া।

উচ্চ আওয়াজে কথা না বলাঃ- যানবাহন, হাসপাতাল, মসজিদ কিংবা কোনো জনবহুল স্থানে বা সর্ব সাধারনের জন্য নির্ধারিত স্থানে উচ্চ আওয়াজে কথা বলা শালিনতা বিরোধী কাজ। মোবাইল ফোনের কথাবার্তায় যেন অন্যের অসুবিধা না হয় সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখা জরুরি।

আবার নিজেদের একান্ত প্রয়োজনীয় কথাগুলো অন্য কেউ শুনলে তা যেমন দৃষ্টিকটু। আবার ক্ষতির সম্ভাবনাও বেশি। এ জাতীয় স্থানগুলোতে কথা বলার ক্ষেত্রে সংযত হওয়া জরুরি।

কাজের সময় কথা না বলাঃ- কাজের সময় কথা বলতে যারা হাত ও চিন্তাপ্রসূত কাজ করেন, তাদের দায়িত্ব পালনকালে মোবাইল ফোনে কথা বলা অনুচিত। উন্নত বিশ্বে কর্মস্থলে ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আর এটি উত্তম নীতি। বিশেষ করে গাড়ি চালানোর সময় কিংবা অপরাশেন থিয়েটারে বা ফায়ার সার্ভিসের কাজের সময় মোবাইল ফোনে কথা বলার কোনো সুযোগই নেই। এসব স্থানে ফোন রিসিভ করা একেবারেই অনুচিত।

মোবাইল সাইলেন্ট বা ভ্রাইব্রেশন না করাঃ- অনেক সময় দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বা কাজের সময় অনেকেই মোবাইল সাইলেন্ট কিংবা ভ্রাইব্রেশন করে রাখেন। এমনটি না করে কল এলার্ট নোটিফিকেশন সেট করে রাখা উত্তম।এতে মোবাইল বন্ধ থাকলে তা খোলার সঙ্গে সঙ্গে কলকারী ব্যক্তির কাছে নোটিফিকেশন চলে যায়। আর এতে কারো কোনো চিন্তার কারণ থাকে না।কেননা সাইলেন্ট কিংবা ভ্রাইব্রেশন অবস্থায় যদি কেউ কল রিসিভ না করে তবে এটিও একটি চিন্তা বা পেরেশানির কারণ।

প্রয়োজন যার, কল হবে তারঃ- নিজ প্রয়োজনে ফোন করার পর কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি যদি ফোন রিসিভ করতে না পারেন তবে পরবর্তীতে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি যদি মিসড্ কল দেখে ফোন করেন তবে তাকে পুনরায় কল দেয়া। কাঙিক্ষত ব্যক্তির ফোন পেয়ে কল ব্যাক না করে প্রয়োজনীয় কথা বলা শুরু করা ঠিক নয়। কেননা প্রয়োজন যার কলও করবেন তিনি। আর এটাই নিয়ম।

উল্লেখিত বিষয়গুলো শুধু নীতিবাক্যই নয় বরং ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকেও এ বিষয়ে রয়েছে বিধি-নিষেধ। যা মেনে চলা মানুষের জন্য ইবাদতও বটে।

Ad