প্রকাশিত: ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৯, ২০২২
আমরা আর কতো নীচে নামবো? এ কথা কি ভাবতে পারেন, একটি তরমুজ এর দাম পাঁচ’শো থেকে হাজার টাকা! যা কিনতে হয় আবার কেজি দরে! কী আশ্চর্য্য, এতো নিকৃষ্টবুদ্ধি ব্যবসায়ীদের মাথায় আসে কী করে?
এ কথা আমরা মেনে নিয়েছি যে, পূঁজিপতিরা বা বড়বড় মুরুব্বী ব্যবসায়ীরা তো আগেই আমাদেরকে শেষ করে দিয়েছে। নানান ফন্দিফিকি বা কু-বুদ্ধি দ্বারা ইচ্ছামতো সকল প্রকার দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে তারা আমাদেরকে শোষণ করে আমাদের জীবনযাত্রায় নাভিশ্বাস তুলে ফেলেছে।
তারা গড়ে তুলছে এতোএতো পরিমাণ সম্পদের পাহাড় যা তারা গুণে শেষ করতে পারছেনা, ভেবে পাচ্ছেনা কোথায় খরচ করবে সে টাকা! তাই তো তারা নানান বিতর্কিত কর্মকান্ডে টাকাপয়সা খরচ করে থাকে। যা দেশের চলমান বিভিন্ন ঘটনা দেখলেই আমরা সহজে বুঝতে পারি। সমাজে নানান অসঙ্গতি থাকে। সব অসঙ্গতির বিষয়ে তো আর আইনে লেখা থাকেনা।
বছর দু’তিনের আগের ঘটনা। বড়দের দুষ্টমী দেখে ছোটরাও আজ দুষ্টমী শিখে ফেলেছে! তাইতো দেশের কোনো এক জায়গায় প্রথমে একদল দুষ্ট তরমুজ বিক্রেতা চিন্তা করলো, কী করলে বেশী লাভ করা যায়! শুরু করে দিল তারা গবেষণা। তাদের মধ্যে একজন ছিল মারাত্মক কুটবুদ্ধিসম্পন্ন। তার মাথায় একটা শয়তানী বুদ্ধি আসলো, সে বলল- চল আমরা কেজি দরে তরমুজ বিক্রি শুরু করে দেই। এতে করে বেশ লাভ করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
এর আগে তো কমলা, পেয়রাওলারা এই কাজ করে বেশ ভাল ফল পেয়েছে তাই আমরাও পাবো। এর মধ্যে দু-একজন ভাল মানুষ ব্যবসায়ী ছিল তারা বললো, ছিছি- এতোবড় তরমুজ কি কেজি দরে বিক্রি করা যায়? তাছাড়া দ্যাখো- এতে মানুষ ঠকে যাবে। দুষ্টরা বললো, দুর ব্যাটা রাখ তোর মানুষ! তুমি ক্যামনে বেশী লাভ করবা সেটা ভাবো, দেখছনা সবাই কেমন করে বিভিন্ন দোহাই দিয়ে সবকিছুর দাম বাড়িয়ে মজা লুটছে তো আমাদের দোষ কি? ব্যাস, বৈঠকে কেজি দরে তরমুজ বিক্রির সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হলো আর সবাই জোট বেঁধে শুরু করে দিল কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করা।
ব্যাস, লাভেলাভ মন্তাজের বাপ হয়ে গেলো। তাদের দেখে মুহুর্তেই চাউর হয়ে গেলো সারা দেশে, কমবেশী সব বিক্রেতাই শুরু করে দিল কেজি দরে তরমুজ বিক্রি। এদিকে সরকারজীবীরা, দুর্নীবাজরা, ফরেন কারেনসিওয়ালারা, অন্যান্য অসৎ লাভভোগীরা হয়ে গেলো তরমুজের একচেটিয়া ক্রেতা।
আর সাধারণ মানুষের মাথায় পড়লো বাড়ি! নিম্ন মধ্যবিত্ত ও গরিবের কাছে তরমুজ হয়ে গেলো বিলাসদ্রব্য, তারা তরমুজ খাওয়া প্রায় ছেড়ে দিলো।
বাচ্চাকাচ্চার আবদারে হয়তো কোনোভাবে টাকা জমিয়ে প্রাণের সন্তানের দাবী মেটানো চেষ্টা করতে শুরু করলো! এভাবে হাজারো সম্মানী পণ্যের ভিড়ে তরমুজও উচ্চ মর্যাদায় অসীন হলো। সাধারণ মানুষ ও সরকার অসহায়ের মতো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখতে লাগলো।
সাধারণ বিবেচনার বিষয় হলো, যে পন্য উৎসে যে তরিকায় বা পদ্ধতিতে কেনা হবে, সে পণ্য খুচরাপর্যায়েও সেই পদ্ধতিতেই বিক্রি করতে হবে। তবে কেন এই শয়তানী?
জাতির মনে আজ প্রশ্ন, কী আমাদের অপরাধ! আজ সবখান থেকেই আমাদের সর্বনাশ করতে উঠেপড়ে লাগলো দুষ্ট শ্রেণীর লোকেরা, এরা তো আমাদের এই জাতিরই একটা অংশ! তবে তারা কেন জাতির সর্বনাশ করতে মরিয়া! তবেকি আমরা বলবো, এরাই জাতির চরম ও প্রকৃত শত্রু?
মানবতার কথা বাদই দিলাম, এরা কি ধর্ম ভূলে গেছে? কিন্তু কোথাও কোনোকিছু একটা হয়ে গেলে তো এরা ধর্ম বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠে!
তারা কি মনে করে তাদের এ কু-কর্মে ধর্মে কোনো পাপ হবেনা? মাত্রাতিরিক্ত চরম মুনাফাখোররা কি বেঁচে যাবে? প্রতিকার কি হবেনা কিছু? মাত্রাতিরিক্ত চরম মুনাফাকে কি সুদের সাথে তুলনা করা যায়না? ধর্মযাজকরা কি এদেরকে প্রকৃত পাপ-পুণ্য শিখাবেনা বা ধর্মের মূলবাণী শুনাবেনা, শুধু কি শুনিয়ে যাবে- নামাজ-রোজা, হজ¦ যাকাতের ফরমূলা বা রাম কৃষ্ণের ধ্বণির বচন? সভ্যতার কথা কি ধর্মে নাই? সভ্য মানুষ কখনো জগতের ক্ষতি করতে পারেনা।
শুধু ব্যবসায়ী কেন, সকল লোভী অর্থবাজদের কান্ড-কারখানা দেখে বলতে ইচ্ছে করে “সভ্যতা আর কত দুরে?
লেখকঃ- এডভোকেট মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট।
Published From
Positive International Inc,
73-16, Roosevelt Ave Floor 2, Jackson Heights, New York 11372.
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us