প্রকাশিত: ৯:২০ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৫, ২০২১
আমরা আত্মঅহমিকা বা আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে সবার উপরে বসবাস করতে চাই। এই আত্মমর্যদাবোধ এই আত্মবিশ্বাস এই সবকিছু এই পৃথিবীতে দূর্ভাগ্যজনকভাবে খুব বেশী করে বিক্রি হয়েছে। আপনার কেন দরকার মর্যদা? মর্যদার প্রয়োজন কারণ অন্য কারোর চেয়ে সবসময় এগিয়ে থাকতে চান। এটা দূর্ভাগ্য যে আমাদের শিক্ষ ব্যবস্থা এভাবে তৈরী করা হয়েছে একবারে কিন্টার গার্ডেন থেকে। কে প্রথম কে দ্বিতীয় কে তৃতীয়, আপনী প্রথম হতে চান! তাই আপনার সুখের অনুভূতি তখনই হয় যখন সবাই আপনার থেকে অনেক খারাপ করেছে।
কী ধরণের জীবন সেটা। কেন আমরা আমাদের জীবনকে এভাবে গড়ে তুলছি। সবাই যদি খারাপ করে আমার দারুন লাগবে! আমার মনে হয় এটা অসুস্থ মানসিকতা। সবাইকে আপনি আপনার চেয়ে ছোট করতে চান বা সবাই আপনার প্রতি নতজানু থাকুক। আপনী কি মনে করেন এটা আপনার আনন্দ? না, এটা আপনার অসুস্থতা, হীনমন্যতা! আপনারা সবাই খারাপ করেন এটা আমার দারুন লাগে, কারণ আমি এখন এক নম্বর। না এটা শেষ হওয়া উচিৎ! অল্প বয়স থেকে দূর্ভাগ্যজনকভাবে একটা শিশুর মনে গেঁথে দেয়া হচ্ছে যে তোমাকে সবার উপরে থাকতে হবে! এটা যদি অন্যান্য প্রাণীদের সাথে হতো, ধরা যাক এটা ছোট ছোট গাছ আর জীবজন্তুদের সাথে হলো। যদি একটা পিপঁড়ে একটা হাতীর মতো হতে চায়, সেটা হবে একটা সাঙ্ঘাতিক হাতি পিপঁড়ে তাই না? ধরুন একটা আম গাছ চায় নারকেল গাছ হয়ে উঠতে, সেটা হবে একটা জঘন্য আম গাছ। তাই নয় কি?
আপনি পিপঁড়েকে অনেক ছোট ভাবেন তাইনা? একটা পিপঁড়েকে যতো মনযোগ সহকারে স্রষ্টা সৃষ্টি করেছেন ঠিক ততোখানি সমান মনযোগ দিয়ে স্রষ্টা আপনাকে আমাকেও সৃষ্টি করেছেন। একেক জনকে একক রকম ক্ষমতা দিয়েছেন। যেমন, পিপঁড়ে তার নিজের ওজনের দশগুণ ওজনের ভারী জিনিস বহন করতে পারে যা মানুষ পারেনা, আবার মানুষ যা পারে পিপঁড়ে তা পারেনা। তবে পার্থক্য করার আপনী আমি কে! পিপঁড়ে হলো তুচ্ছ আর আপনি আমি বিরাট মানুষ হয়ে গেলাম! এ ভাবনা আসে কি করে।
ধরুন, পৃথিবীতে যতো কীটপতঙ্গ বা পেকামাকড় আছে সবাইকে মারা হয়ে গেলো, তাহলে এক থেকে চার বছরের মধ্যে পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীকুল মারা যাবে এমন কি মানুষও। গাছপালা মানুষ কিংবা কোনো প্রাণীই থাকবে না এ ধরণীতে। পৃথিবী বিরানভূমি হয়ে যাবে। কিন্তু ধরুন যদি পৃথিবীর সব মানুষকে মারা হয়ে যায়, তাহলে কোনো প্রাণীকুলেরই কি কোনো ক্ষতি হবে? না, কোনো ক্ষতি হবেনা বরং গোটা পৃথিবীটা আরো সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। গোটা পৃথিবীর প্রকৃতি মানুষের নির্যাতনের হাত থেকে বেঁচে গিয়ে আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হবে। পৃথিবী বাচাঁতে মানব জাতির কোনো প্রয়োজনই নেই বরং মানব জাতিকে বাচাঁতে পৃথিবীর প্রকৃতির আবশ্যিক প্রয়োজন রয়েছে।
গাছপালা আপনাকে আমাকে অক্সিজেন দিচ্ছে আর বায়ূ সে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সরবারহ করছে, আমরা তা গ্রহণ করে শাসপ্রশ্বাস নিচ্ছি। অক্সিজেন ছাড়া এক মহুর্তও আমরা বাচঁবো না। আমাদের চরিত্র দেখেন, যে আমাকে আপনাকে অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখছে, আমরা তারই সর্বনাশ করে যাচ্ছি। গাছ, বায়ূ, পানি কোনো কিছুই আমাদের হাত থেেেক রক্ষা পাচ্ছে না। আমরা সবকিছুর স্বাভাবিক জীনপ্রবাহ শেষ করে দিতে নিজেদের নিছক লাভের জন্য উঠে পড়ে লেগেছি। অথচ রাগ করে কখনো গাছ বা বায়ু অক্সিজেন দেয়া আমাদেরকে বন্ধ করেনি, প্রকৃতির সকল উৎস আমাদেরকে তাদের সেবা অবিরাম দিয়ে যাচ্ছে।
মানব জাতির প্রতি প্রকৃতির এটাই প্রেম! অথচ প্রকৃতির প্রতি মানুষের প্রেম দুরে থাক, তাদের প্রতি আমরা মানুষের কী নির্মমতা। বর্তমানে প্রকৃতিও আমাদের সাথে তা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার নমুনা দেখাতে শুরু করেছে। তাতেই আমরা হাঁপিয়ে উঠছি। প্রকৃতির বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে বাঁচতে নানান পদ্ধতি অনুসরণ করে যাচ্ছি। কিন্তু প্রকৃতির প্রতি অনাচার বন্ধ করছিনা! প্রকৃতির অনুগ্রহ ছাড়া মানুষের পৃথিবীতে বাঁচার সক্ষমতা নেই।
তাই পৃথিবীতে মানুষের বুক ফুলিয়ে হাঁটাচলা কেবলই হাস্যকর ছাড়া আর কিছু নয়। গাছপালা কীটপতঙ্গকে ছোট করে দেখা মানব জাতির শুভা পায়না। প্রকৃতির প্রতি মানুষের কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ নয়কি? প্রকৃতিকে মানুষের লালনপালন করার কোনো প্রয়োজন নেই, মানুষ কেবল প্রকৃতির প্রতি অত্যাচার মন্দ আচরন বন্ধ করে দিক, প্রকৃতি তার আপন মহিমায় নিজেকে উদ্ভাসিত করার সক্ষমতা রাখে। কারণ প্রকৃতি বা সৃষ্টির মাঝেই সৃষ্টা লুকিয়ে আছে। তাই প্রকৃতি থেকে নিজেকে বড় ভাবা মানুষের নির্লজ্জতা বা মূর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়।
তেমনি মানুষও যে পরস্পরকে নীচু করার প্রতিযোগীতা অদম্যভাবে লেগে আছে সেটাও সৃষ্টির সাথে মানানসই নয়। পারস্পরিক মর্যদা সমুন্নত রাখাই মানুষের মনুষত্য বা ধর্ম হওয়া উচিৎ নয় কি?
লেখক: এডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম।
আইনজীবী, কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক ও আইনগ্রন্থ লিখক।
Published From
Positive International Inc,
73-16, Roosevelt Ave Floor 2, Jackson Heights, New York 11372.
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us