প্রকাশিত: ৮:২৭ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১৩, ২০২১
এখন যখন গ্রামে যাই তখন প্রয়াত কবি বন্দে আলী মিয়ার “আমাদের গ্রাম” কবিতার বৈশিষ্টমন্ডিত গ্রামটি আর খুঁজে পাইনা। মনের মধ্যে অনেক কষ্ট জাগ্রত হয়। আমাদের বর্তমান ও অতীত প্রেক্ষাপটের আলোকে আজকে এ কবিতার উপর একটু আলোকপাত করে মনের কিঞ্চিৎ জ্বালা জুড়ানোর চেষ্টা করছি।
অনেকেরই হয়তো “আমাদের গ্রাম” কবিতাটির কথা মনে আছে। এ প্রজন্ম তো কবিতাই ভালবাসে না মনে আর থাকবে কি! ছোটবেলায় কোনোও এক ক্লাসের পাঠ্যবইয়ে এ কবিতাটি ছিল বলে কতো মন দিয়ে কবিতাটি পড়েছিলাম পরীক্ষায় আসলে লিখবো বলে।
তখনকার সময়ে গ্রামেগঞ্জে এমনিতেই ভালবাসার কমতি ছিলনা, ছিলনা কোনো হিংসা বিদ্বেষ। তারপরও কবিতাটি গ্রামের প্রতি কীরকম জানি এক প্রেম জন্মাতে সাহায্য করেছিল। তখনকার গ্রাম্য লোকজনের মন ছিল সরলতায় মোড়ানো এক প্রেমের ছবি।
মানুষের মনে ছিলনা কোনো স্বপ্ন, ছিলনা স্বপ্ন ভঙ্গের হতাশাও। সারা বছর পেটপুরে খেয়েধেয়ে বেচেঁ থাকতে পারলেই ব্যাস্, স্বপ্নের এখানেই পরিতৃপ্ত সমাপ্তি। তবে এর ব্যতিক্রমী স্বপ্ন মানুষ একবারেই যে দেখেনি তা কিন্তু নয়, স্বপ্ন দেখেছে, তবে তা কোনো মানসিক চাপ না নিয়ে, ছিল সাধ্যের মধ্যে।
তাই তো মানুষ গ্রামের নির্মল বাতাসে প্রাণভরে অক্সিজেন নিতে পেরেছে, হেসেছে, খেলেছে, পরস্পরকে মন থেকে ভালবাসতে পেরেছে আর মিলেমিশে আত্মীয়ের মতো বসবাসও করতে পেরেছে।
তাইতো কবি অনুভব করতে পেরেছিলেন, “আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর, থাকি সেথা সবে মিলে নাহি কেহ পর, পাড়ার সকল ছেলে মোরা ভাই ভাই, একসাথে খেলি আর পাঠশালে যাই। হিংসা ও মারামারি কভূ নাহি করি, পিতামাতা গুরুজনে সদা মরা ডরি।” কবি তখন ছোটছোট ঘর নিয়েই আনন্দিত ছিলেন। তাঁর অট্টালিকার প্রয়োজন ছিলনা, তিনি পারস্পরিক সম্প্রীতি ও মিলবন্ধনকে বড় করে দেখেছেন, প্রত্যেকেই প্রত্যেককে আপন ভেবেছেন, যা আজকের সমাজে কেবলই অচল পঁয়সা।
“আমাদের ছোট গ্রাম মায়ের সমান, আলো দিয়ে বায়ু দিয়ে বাচাঁইয়াছে প্রাণ। মাঠ ভরা ধান তার জল ভরা দিঘী, চাঁদের কিরণ লেগে করে ঝিকিমিকি।” আহ্, কী হৃদয়স্পর্শী বাণী! কবি তাঁর সরল মনে গ্রামের মায়া-মমতা ও পারস্পরিক সম্প্রীতির যে চিত্র প্রাণের পরশ দিয়ে এ কবিতায় তুলে ধরেছেন, অন্তরানুভূতি দিয়ে কবিতটি পড়লেই তা বুঝা ঝায়।
কবি’র কবিতার যে মর্মবাণী বা বিষয়বস্তু তা অতীতে বাংলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই বিরাজমান ছিল বলেই কবি এরকম একটি হৃদয়ছোঁয়া কবিতা রচনা করতে পেরেছিলেন। আরও অনেক কবি গ্রামবাংলার সৈান্দর্য্য ও ভালবাসা নিয়ে অনেক কবিতা বা গদ্যসাহিত্য লিখেছেন বা লিখে গেছেন। আমরা কালের পরিক্রমায় এগুলো আজ প্রায় ভূলতে বসেছি। আগের মানুষ পেটে ক্ষুধা, পিঠে কাপড়ের চাহিদা নিয়েও উপভোগ করেছে প্রমান্তিময় জীবন।
বৈশ্বিক চাকচিক্যের মোহে মানুষ ধীরেধীরে জীবন থেকে সরে আসতে শুরু করে। এভাবে দিন যতোই গড়িয়ে যাচ্ছে আমরাও ক্রমক্রেমে ভোগবাদী মানসিকতায় পৌঁছে গিয়ে ভোগবাদী নিষ্ঠুর সমাজ গড়ে তুলছি। স্বপ্ন পূরণের সামর্থ থাকুক বা না থাকুক এখন আমাদের স্বপ্ন পাহাড়সম। তাই অসম স্বপ্নের জাল বুনার আকাঙ্খা আমাদের মধ্যে শুরু হয়ে যায় আর আমরা হারাতে থাকি আমাদের প্রমান্তিময় জীবন।
আজ মানুষ নিজ গন্ডি বা সামর্থ্যের বাইরে স্বপ্ন বুনতে গিয়ে কী পরিমাণ অস্থিরতায় জর্জিত তা আমরা প্রত্যক্ষ করছি। আজ মানুষের সব থেকেও কি যেনো নেই। মানুষ তার জীবনের প্রকৃত অর্থ হারিয়ে ফেলছে। বাহিরের বেশভুষায় চাকচিক্য দেখা গেলেও অন্তরের চিত্রে কোনো চাকচিক্য নেই।
ভোগবাদি সমাজ আজ আমাদেরকে আস্তাকুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। পরিত্রাণের সহজ কোনো রাস্তা নেই। তারপরও রাস্তা খুঁজতে হবে, মনের প্রশান্তি ও হৃদয়ের প্রশস্ততা আমাদেরকে আবার আবিষ্কার করতে হবে।
পরকাল থেকে কবি বন্দে আলী মিয়া হয়তো ভাবছেন কী সুন্দর গ্রামবাংলার ছবি আমি রেখে আসলাম, আবেগে আপ্লুত হয়ে আমি বা আমরা কতোই না সুন্দর সুন্দর কবিতা রচনা করলাম কিন্তু আজ এ কি দেখছি! মানুষ তার পরম অস্তিত্বকে হারিয়ে কী খুঁজে বেড়াচ্ছে? স্রষ্টা তো তাকে এভাবে নির্দেশ দেননি? তবে কেন—-??
এডভোকেট মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম।
Published From
Positive International Inc,
73-16, Roosevelt Ave Floor 2, Jackson Heights, New York 11372.
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us