প্রকাশিত: ১০:২১ পূর্বাহ্ণ, মে ২, ২০২১
প্রিয় পাঠক শুভেচ্ছা। টাকাওয়ালারাই কেবল নারীবাজি করে একথা সত্য নয়। সর্ব শ্রেণীতেই এ ব্যাধিটা আছে। আমি এ সপ্তাহের দুটো ঘটনার কথা বলছি। একটা হলো- টাকাওয়ালার নারীবাজির জের হিসাবে মেসারাত মুনিয়া নামের একটি মেয়ের আত্মহত্যা ও এর প্রেক্ষিতে বাংলার ধনাঢ্য এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা, যা বর্তমানে টক অব দ্যা কান্ট্রি এবং সকলেই অবগত।
অন্যদিকে আরেকটি ঘটনা আমার মনে প্রচন্ড দাগ কেটেছে কিন্তু ঘটনাটি টক অব দ্যা কান্ট্রি হয়নি এবং সবাই জানেও না। কারণ এটি একটি গরীবের ঘটনা। এবিষয়ে দুয়েকটি পত্রপত্রিকায় সাধারণ রিপোর্ট হয়েছে, সেখান থেকে আমি জেনেছি। তবে এ দুই ঘটনার প্রেক্ষাপট নারীবাজি হলেও ভিন্নতা আছে।
ঘটনাটি বলি, একজন ভাঙ্গাড়ী ব্যবসায়ীর তিন নম্বর স্ত্রী ঝগড়ার একপর্যায়ে স্বামীর অন্ডকোষে লাথি মেরে তাকেই প্রাণে মেরেই ফেলে। অন্য স্ত্রীর সন্তানরা এর বিরুদ্ধে একটি হত্যামামলাও দায়ের করে। ভাঙ্গড়ী ব্যবসা কি তা আপনারা জানেন, এটি অত্যন্ত ছোটপর্যায়ের একটি কারবার। প্রিয় পাঠক- এ কথা কি ভাবতে পারেন? এতো ছোটপর্যায়ের একজন কারবারী মাসে বড়জোর দশ/পনেরো হাজার টাকা আয় করতে পারেন। এতেই যদি তার তিনজন নারীর প্রয়োজন হয়, তবে তো যিনি মাসে কোটি কোটি টাকা আয় রোজগার করেন তার তো তিনলক্ষ নারীও কম পড়বে, তাইনা! এখানে মূল প্রশ্ন হলো- নীতি, নৈতিকতা ও আদর্শের।
সম্প্রতি মৌঃ মামুনুল হকের মতো এতো বড়মাপের একজন ধর্মীয় নেতার নারীবাজির বিষয়টিও আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। তিনিও নীতি, নৈতিকতা ও আদর্শের সীমানার মধ্যে থাকতে পারেননি। প্রত্যেক বীর্যবান পুরুষ অবশ্যই জানেন যে, জীবনে নারী যে কতবড় একটা গুরুত্তপূর্ণ ফ্যাক্টর। নীতি, নৈতিকতা, সামাজিক রীতিনীত ও ধর্মীয় সীমারেখার দেয়াল যদি না থাকতো, তবে এ তাবৎ দুনিয়াতে এমন কোনো বীর্যবান পুরুষ খুঁজে পাওয়া যেতোনা যিনি একাধিক নারীবাজি করতেন না। আর পয়সা বা ক্ষমতাওলারা তো নারীবাজির নহর বইয়ে দিতো, কি বলেন! অতীতের অনেক রাজাবাদশা, জমিদার, তালুকদার, জায়গীরদারদের মধ্যেও আমরা দেখেছি, বিবাহ হোক বা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক হোক, তারা নারীবাজির বন্যা বসিয়ে দিত। আসলে এগুলো মনুষ্য আদিম চাহিদা। বর্তমান যুগকেও এর বাইরে রাখবেন কি করে।
এবার পুরান কথায় ফিরি, প্রথম ঘটনার মুনিয়া নামের মেয়েটি ধরে নিলাম আত্মহত্যাই করেছে, তবে সে তার আত্মাহুতির দ্বারা সমাজ বা রাষ্ট্রকে বা মনুষ্যজগতকে কি ম্যাসেজ বা বার্তা দিতে চেয়েছে? আনভীর আমার সাথে অন্যায় করেছে, তোমরা তার বিচার কর; নাকি বার্তা দিতে চেয়েছে, হে নারী সমাজ, পয়সাওলার পিছনে দৌড় দিয়ে আমি যে ভূল করেছি, তোমরা সে ভূল করোনা; নাকি বলে গেছে, বিবাহের পূর্বে আমার মতো তোমরা অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়োনা, এটি পাপ, এটি জীবন ও সম্মান দুটোকেই শেষ করে দেয়; নাকি আর্তনাদ করে গেছে, যে বীর্যবান পুরুষগুলো বেপরওয়া তারা শুধু আমার মতো তোমাদেরকে ব্যবহার করবে বিনিময়ে কিছু দেবেনা আর তার ভার সইতে না পেরে তোমরা আমার মতো আত্মহুতি দিবে! নাকি বলেছে, খবরদার! আমার মতো দুর্বল মানসিকতার না হয়ে তোমরা সবল মানসিকতা নিয়ে বেঁচে থেকে এসব অন্যায় ও অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর! নাকি বার্তা দিল, আমার বয়স ছিল একুশ, আইনসঙ্গতভাবে আমার ভালমন্দ, লোভলালসা, প্রতারণার কৌশল প্রভৃতি বুঝার বয়স হওয়া সত্তে¡ও আমি নিজের দোষে লোভে পড়ে তা আমি বুঝিনি বা বুঝেও বুঝার চেষ্টা করিনি, আমি এও বুঝতে ব্যর্থ হয়েছি- আনভীর কোথায় আর আমি কোথায়! তেলপানি তো মেশানো বড়ই কঠিন কাজ, আানভীরদের কাছে তো এগুলো অতি তুচ্ছ ও সাধারণ কাজ, তাই তোমরা এ ভূল করোনা, ভালমন্দ বুঝতে শেখো; নাকি বলে গেলো, আমি কী কারণে আত্মহুতি দিলাম তার মর্মার্থ তোমাদের বলতে চাইনা, তোমরা জ্ঞানবুদ্ধি খাটিয়ে বুঝে নিও!
এবার দ্বিতীয় ঘটনায় স্ত্রী তার স্বামীর অন্ডকোষে লাথি মেরে স্বামীকে মেরে ফেলে সমাজ ও রাষ্ট্রকে কী বার্তা দিতে চেয়েছে? আমরা প্রায় অনেকেই জানি, পুরুষের অন্ডকোষ হলো পুরুষদেহের যৌনক্রিয়া প্রসেসিংয়ের প্রধান যন্ত্র। যেটিদ্বারা টেস্টরিন সৃষ্টি হয়ে যৌনউত্তেজনা তৈরী করে।
সেকি লাথিমারা দ্বারা এটা বুঝাতে চেয়েছিল যে, তোর যে যৌনযন্ত্রের প্রভাবে তিনটা বিয়ে করিস, আমি তোর সেই যৌনযন্ত্রটাই শেষ করে দিলাম, কিন্তু তুই মরে যাবি তা আমি জানতাম না; নাকি বার্তা দিচ্ছে, হে রাষ্ট্র বা হে সমাজ, তোমরা এদের সামলা দাও, না হয় এসব ঘটনা তোমরা সামাল দিতে পারবেনা, আর আমার মতো কতো যে নারীরা প্রতিশোধ নিতে গিয়ে হত্যা বা আঘাতদানের আসামী হয়ে জেলের ঘানি টানবে তা আমি জানিনা, এর দায় বহন থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র বাদ যাবেনা!
প্রিয় পাঠক, মেয়েটি তার আত্মহুতির মাধ্যমে বা নারীটি তার স্বামীর অন্ডকোষে লাথি মেরে কী বার্তা দিতে চেয়েছিল সত্যিই আমি তা জানিনা। এসবগুলোই আমি আমার কল্পনা থেকে লিখেছি। আপনাদেরও আমার মতো যদি কোনো কাজ না থাকে তবে আপনারাও আপনাদের জ্ঞান ও কল্পনার জগতকে প্রসারিত করে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে পারেন, এবং এসব অনাকাঙ্খিত ঘটনা যেনো সমাজে আর না ঘটে নিজের বিচক্ষণতাকে সে পথে হাঁটাতে পারেন, যদি ভাল লাগে। ধন্যবাদ।
লেখক- এড্ মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট।
সাবেক সহসভাপতি (১৯৯৩-৯৪)- জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা, ঢাকা।
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি- জুড়ী প্রেসক্লাব(১৯৯৮), মৌলভীবাজার।
কলামিস্ট ও আইনগ্রন্থ লেখক।
PUBLISHED FROM
2152-B WESTCHESTER AVE BRONX
NEW YORK 10462 USA
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum Mintu
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us