বই আজ কই!

প্রকাশিত: ১:৪৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ১, ২০২১

বই আজ কই!
booked.net

Manual2 Ad Code

গাঁয়ের মাটির চুলোয় পোড়া কেটলি থেকে ধোঁয়া উড়া চা দোকানে, কিংবা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নিত্যপণ্যের দোকান অথবা মলিন কাপড়-অজান্তে ক্ষুরটি মাটিতে পড়ে থাকা সেলুনে; আবার বাড়ী-ঘরে বাঁশের বেড়ার সাথে রবীন্দ্রনাথ কিংবা নজরুল, কখনো কখনো নীল ব্যাকগ্রাউন্ডে শরৎচন্দ্রের সাদা একটা ছবি ঝুলে থাকার দৃশ্যটা কী খুব পুরনো?

আবার বিয়ে, জন্মদিনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নানা রঙের রেপিং পেপার দিয়ে মুড়িয়ে বই উপহার দেয়ার স্মৃতিও কী খুব বেশী দিনের? কিংবা বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে ধার করে নিয়ে বই পড়া, বই আটকে রাখা নিয়ে বাদানুবাদ, লোভ সামলাতে না পেরে স্কুল লাইব্রেরি কিংবা বন্ধুর বইয়ের তাক থেকে বই চুরি, বই লেনদেন থেকে বন্ধুত্ব, বইয়ের ভেতর প্রেমপত্র, চিরকূট চালান- এসব তো কোনো প্রাগৈতিহাসিক কালের ঘটনা নয়।

যদি বলি, রেলস্টেশনে অপেক্ষারত বেঞ্চে, স্কুলে টিফিনের ফাঁকে, বাসে, ট্রেনে ভ্রমণ ব্যাগে এমনকি পরীক্ষা শেষে মামার বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার সময়ও ক’টা বই সঙ্গী থাকতো, তাহলে কী তা যুগ যুগ আগের কোনো দিনের কথা বলা হবে?

Manual2 Ad Code

আরো পড়ুনঃ মোবাইল ফোনের চার্জ দীর্ঘ সময় ধরে রাখার কার্যকরী পরামর্শ।

কিন্তু বই আজ কই, পাড়ার পাঠাগার কই, বই নিয়ে বন্ধুত্ব-প্রেম কই। অনেক পরিবর্তন আমাদের; ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের এগিয়ে যাওয়ায় আনন্দ আছে কিন্তু বাড়ির বুক সেলফ গেল কই, ‘আউট বই’ পড়ুয়া সন্তানটি কেন মোবাইল স্ক্রিনে হারিয়ে গেল, বিয়ের উপহারে জায়গা নিল দামী ডিনারসেট।

Manual5 Ad Code

স্কুল লাইব্রেরিগুলো গাইড বইয়ে সয়লাব হয়ে গেল, পাড়ার পাঠাগারটি হয়ে গেল মোবাইল শপ, আর চা দোকানের বেঞ্চ দখলে নিলো রাজনৈতিক আড্ডা।


পাঠাভ্যাসের উন্নতি ছাড়া মানুষের মনোজগতের বিকাশ সম্ভব না। একটি দেশের নাগরিকের রুচি কিংবা ভাবনার উপর সে দেশ সম্পর্কে অন্য দেশের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারিত হয়। সে হিসেবে বলতে হয়, আমরা যদি একটি সৃজনশীল, নন্দন তাত্ত্বিক সমাজের স্বপ্ন দেখি তাহলে অবশ্যই বই পড়াকে সমাজের সর্বস্থরের মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

তবে শুধু পাঠাগার প্রতিষ্ঠাই এই স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেবে না, পাঠে আগ্রহী করে তুলতে হবে নানা বয়সী মানুষকে, জ্ঞানের যে মাধুর্য, বইয়ের যে অপরূপ সৌন্দর্য্য, তা সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে।


জীবনে গতি এসেছে অভাবনীয়ভাবে, বিজ্ঞান নিয়ে এসেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। পৃথিবী এখন একটি গ্রাম। সময় এখন ল্যাপটপ, স্মার্ট ফোন, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম এর। আঙুলের স্পর্শের কাছে বন্ধী পৃথিবী।
আমাদের দেশটাও এগিয়ে যাচ্ছে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে।

অতএব মাননীয় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী, আমরা কী প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে একটি পাঠাগার পেতে পারি না? মাননীয় রেলপথ মন্ত্রী, প্রতিটি স্টেশনে রেলের ইতিহাস, ভ্রমণ সাহিত্যভিত্তিক একটি পাঠাগার স্থাপন তো অসাধ্য নয়?  স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয়, দেশের প্রতিটি হাসপাতালে, ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত বইপত্র, জার্নাল নিয়েও একটা পাঠাগার হতে পারে। ফার্মেসিতে বিক্রি হতে পারে বই।

মাননীয় দায়িত্বশীলগণ, আমাদের কৃষি অফিসগুলোতে কৃষি বিষয়ক, প্রকৌশল অফিসগুলোতে প্রকৌশল বিষয়ক, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পাট, সেচ, বিআইডব্লিউটিএ অফিসগুলোতেও সংশ্লিষ্ট বিষয়ভিত্তিক প্রকাশনা নিয়ে সমৃদ্ধ পাঠাগার হতে পারে। দেশের সবগুলো সিটি করপোরেশন বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের অনুমোদনে শর্ত জুড়ে দিতে পারে, বইয়ের দোকান থাকতে হবে, আমাদের মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডায় পাঠাগার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। বিচ্ছিন্নভাবে কোথাও কোথাও আছে কিন্তু তদারকি নেই, নেই পাঠকের সম্পৃক্ততা।

এমনও তো হতে পারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠাগার চর্চা মানোত্তীর্ণ না হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ শাস্তির খড়গ বসাতে পারেন। যেখানেই মানুষের সম্মিলন, সেখানেই একটি পাঠাগার থাকা চাই। আবার কিছু বই আর আসবাবপত্র দিয়ে সাজালেই হবে না, পাঠক সৃষ্টি করতে হবে, বইপড়ায় উদ্ধুদ্ধ করতে হবে নানাভাবে।

Manual4 Ad Code

পরিবার থেকে শুরু রাস্ট্র, সবার দায়িত্ব এটি। আশার কথা ইদানীং সরকারীভাবে কিছু পাঠাগার স্থাপনের পাশাপাশি বেসরকারি পাঠাগারগুলোকেও পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। কিন্তু সরকারী গ্রন্থগারগুলো সেভাবে পাঠককে আকৃষ্ট করতে পারছে না। আবার ‘মুজিব বর্ষ’কে কেন্দ্র করে সারাদেশে ‘মুজিব কর্ণার’ স্থাপনের হিড়িক পড়েছে। এটা নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু কথা হলো এগুলোর ব্যবহার নিয়ে, কার্যকারিতা নিয়ে।

Manual8 Ad Code

পাঠাভ্যাসের উন্নতি ছাড়া মানুষের মনোজগতের বিকাশ সম্ভব না। একটি দেশের নাগরিকের রুচি কিংবা ভাবনার উপর সে দেশ সম্পর্কে অন্য দেশের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারিত হয়। সে হিসেবে বলতে হয়, আমরা যদি একটি সৃজনশীল, নন্দন তাত্ত্বিক সমাজের স্বপ্ন দেখি তাহলে অবশ্যই বই পড়াকে সমাজের সর্বস্থরের মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

তবে শুধু পাঠাগার প্রতিষ্ঠাই এই স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেবে না, পাঠে আগ্রহী করে তুলতে হবে নানা বয়সী মানুষকে, জ্ঞানের যে মাধুর্য, বইয়ের যে অপরূপ সৌন্দর্য্য, তা সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। সেজন্য বইমুখী প্রজন্ম তৈরির লক্ষ্যে প্রয়োজন একটি মহা পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে দৃঢ় সংকল্প।

 

  • প্রণবকান্তি দেব। সহকারী অধ্যাপক, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও প্রধান উদ্যোক্তা, ইনোভেটর বইপড়া উৎসব।

Ad

Follow for More!