প্রকাশিত: ৯:১৮ পূর্বাহ্ণ, জুন ১০, ২০২১
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শ্বাসতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি শরীরের প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ অংশ রোগটির ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। ত্বকে র্যাশ, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের সমস্যা, হৃদযন্ত্র কিংবা বৃক্কের গঠনগত ক্ষয় ইত্যাদি সমস্যার সঙ্গে করোনা ভাইরাসের সম্পর্ক পাওয়া গেছে। তবে যে শুধু শারীরিক তা কিন্তু নয় , কোভিড-১৯ রোগীর মস্তিস্কের উপর এর ক্ষতির মাত্রাটাও অনেকাংশে কম নয়।
ইতিপূর্বে ভিন্ন ধরনের করোনা ভাইরাস আক্রমণের ভিত্তিতে গবেষকরা দাবি করেন, ‘কোভিড-১৯’ থেকে সুস্থ হতে থাকা একজন মানুষ বিভিন্ন মানসিক সমস্যায় ভুগবেন যেমন-হতাশা ও ‘পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি)’।
জনস্বাস্থ্য-বিষয়ক সংস্থা ‘গ্যাভি, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন্স অ্যান্ড ইমিউনাইজেইশন’য়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গবেষণার প্রতিবেদন অবলম্বনে নিম্নে কোভিড-১৯’য়ের মানসিক প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিতঃ-
আরো পড়ুনঃ করোনা আপডেট: কুলাউড়ায় নতুন করে আরও ১৩ জনের করোনা ভাইরাস শনাক্ত।
ভিন্ন ভিন্ন সমস্যায় ভিন্ন চাহিদা
গবেষক দল জানায়, “কোভিড-১৯’ আর মস্তিষ্কের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে যতটুকু তথ্য আছে তার বেশির ভাগের’ই ভিত্তি হলো হাতে গোনা গুটিকয়েক রোগীর তথ্য।
“এজন্য ‘নিউরোলজি’ ও ‘সায়কায়াট্রি’ নিয়ে হওয়া অসংখ্য গবেষণার ভেতর থেকে ২১৫টি গবেষণা আমরা বেছে নেই পর্যালোচনার জন্য। সমষ্টিগতভাবে এখানে মোট অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা প্রায় এক লাখ পাঁচ হাজার, যারা ছড়িয়ে আছেন ৩০টি দেশে।”
গ্যাভি’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, সবচাইতে বেশি মাত্রায় যে ‘নিউরোসায়কায়াট্রিক’ উপসর্গ রোগীদের মাঝে দেখা গেছে সেগুলো হলো- স্বাদ ও ঘ্রাণশক্তি হারানো, শারীরিক দুর্বলতা, অবসাদ ইত্যাদি।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩০ শতাংশ রোগী ঘ্রাণশক্তি হারিয়েছেন এবং শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন। এ থেকে বোঝা যায় ‘কোভিড’১৯’য়ে আক্রান্ত হলে ‘নিউরোসায়কায়াট্রিক’ উপসর্গ দেখা দেওয়াটা স্বাভাবিক ঘটনা, দুর্লভ কিছু নয়।
তবে মস্তিষ্কের কোনো গুরুতর সমস্যা যেমন- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মস্তিষ্কের স্নায়ুকে আক্রমণ করার মতো ঘটনা বেশ দুর্লভ।
গ্যাভি’য়ের প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, “কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানসিক সমস্যা যেমন- হতাশা, মানসিক অস্থিরতা ইত্যাদি প্রায় ২৫ শতাংশ ‘কোভিড-১৯’ রোগীর মধ্যেই বিদ্যমান ছিল।
আরো পড়ুনঃ ট্রেন থেকে ঝাপ দিয়ে রিনা পালের আত্নহত্যা।
সুস্থ হওয়ার পরও এই রোগগুলো তাদের জন্য বড় ধরনের বোঝা হয়ে থাকতে পারে দীর্ঘদিন। এমন রোগীর অনুপাতের হিসেবটা ছোট মনে হলেও, ‘কোভিড-১৯’য়ের এত বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে যে সেই সামান্য অনুপাতটাই সংখ্যা হিসেবে অনেক বড় হয়ে দাঁড়ায়।”
“মৃদুমাত্রায় ‘কোভিড-১৯’য়ে যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মাঝে শরীর ব্যথা আর ঘ্রাণশক্তি হারানো উপসর্গ দেখা দেওয়ার হার খুব বেশি ছিল, যা প্রত্যাশার বিপরীত। এমনকি অবসাদ, মাথাব্যথার কারণে শয্যাশায়ী হতে হয়েছে এমন অনেক ‘কোভিড-১৯’ রোগী আছেন, যাদেরকে কখনই হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়নি।”
তাহলে পরিস্থিতি যা দাঁড়ালো?
গবেষণার ফলাফল পড়ে মনে প্রশ্ন জাগবে, তাহলে কীভাবে বোঝা যাবে ওপরে উল্লেখ করা সমস্যাগুলো আসলে ‘কোভিড-১৯’য়ের কারণেই হয়েছে?
‘কোভিড-১৯’ আমাদের মাঝে আসার বহু আগে থেকেই হতাশাগ্রস্ততা মানবজীবনের একটি বড় হুমকি হিসেবে স্বীকৃত ছিল। তবে কি হতাশা থেকেই ‘কোভিড-১৯’য়ের ঝুঁকি বাড়ে?
‘কোভিড-১৯’য়ে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে তুলনা করতে হলে আগে প্রয়োজন ঠিক ততজন বা তার বেশি ওই রোগে আক্রান্ত নন এমন মানুষ।
তুলনা করার আদর্শ পরিবেশ হবে তখনই যখন বেশ কয়েকজন মানসিক রোগীকে চিহ্নিত করে তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। দেখা হবে যে,তারা যদি ‘কোভিড-১৯’য়ে আক্রান্ত হন তাহলে কি ঘটে।
তবে এখন পর্যন্ত যতগুলো গবেষণা করা হয়েছে তার কোনোটাই পুরোপুরি নিরপেক্ষ নয় বলে দাবী করা হচ্ছে।
পাশাপাশি গবেষণা করা হচ্ছে হাসপাতালে আসা রোগীদের নিয়ে। কিন্তু বাস্তবতা হলো অধিকাংশ ‘কোভিড-১৯’ রোগী হাসপাতালের ধারে কাছেও আসেন না।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী আগে থেকেই বিভিন্ন দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত, ফলে ‘কোভিড-১৯’য়ের দীর্ঘমেয়াদি পরিণতি বোঝাও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। গবেষণায় অংশ নেওয়া মানুষগুলো চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ইত্যাদি উন্নত দেশের বাসিন্দা।
তৃতীয় বিশ্বের মানুষগুলোর তথ্য ওই গবেষণার বিবেচনায় নেই।
শুধু এতটুকুই নিশ্চিত যে, ‘কোভিড-১৯’য়ে আক্রান্ত রোগীদের বিভিন্ন মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। তাই চিকিৎসকদের সেই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে, রোগীদের সতর্ক করতে হবে।
Published From
Positive International Inc,
73-16, Roosevelt Ave Floor 2, Jackson Heights, New York 11372.
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us