প্রকাশিত: ৩:০৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২, ২০২১
অনলাইন ডেস্কঃ- কালা পাহাড়। মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নে হাড়ারগজ পাহাড়সারির সর্বোচ্চ চূড়া বা বিন্দু কালা পাহাড় হচ্ছে বৃহত্তর সিলেট তথা বাংলাদেশের উত্তরাংশের সর্ববৃহৎ পর্বতশৃঙ্গ। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে এই নামে একাধিক পাহাড় থাকলেও দেশের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত স্বল্প উচ্চতার এই কালা পাহাড় ভৌগলিকভাবে যথেষ্ট তাৎপর্য বহন করে।
অবস্থানঃ- এই পাহাড়টির এক পাশে বাংলাদেশের কুলাউড়া-জুড়ী সীমান্ত, অন্য পাশে ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত। উল্লেখিত সংরক্ষিত বন এলাকাকে লোকমুখের ভাষায় ‘লংলা পাহাড়শ্রেণী’ নামে ডাকা হয়। কালা পাহাড় হচ্ছে এখানকার সর্বোচ্চ চূড়ার স্থানীয় প্রচলিত নাম। বাংলাদেশ জিওগ্রাফিক সোসাইটির মতে, এই পাহাড়টি ‘হাড়ারগজ রিজার্ভ ফরেস্ট’ নামেও পরিচিত। দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় অবস্থান করা এই পাহাড়ের প্রায় ৬০% বাংলাদেশ সীমান্তের ভিতরে অবস্থিত এবং বাকি অংশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অন্তর্গত। উত্তর ত্রিপুরায় এই পাহাড়টি রঘুনন্দন পাহাড় নামে বহুল পরিচিত।
ইতিহাসঃ- ২০১৫ সালের দিকে একদল ভ্রমণপিয়াসী অভিযাত্রী ‘BD Explorer’ লংলার বনজঙ্গলে হাইকিং করতে গিয়ে সর্বপ্রথম কালা পাহাড় নামক এই অনিন্দ্যসুন্দর শীর্ষস্থানের খোঁজ পায়। এবং গারমিন চালিত জিপিএস দিয়ে শিখরের সর্বোচ্চ সীমা সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ১১০০ ফুট পরিমাপ করে। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই স্থানটি দেশবাসীর কাছে তখনও সম্পূর্ণ অজানা ছিলো।
ঐতিহাসিক নিদর্শনঃ- পাথরে খোদাইকৃত উপমহাদেশের প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক ধর্মীয় স্থান ঊনকোটি এই পাহাড়ের পাদদেশে ভারতীয় অংশে অবস্থিত। এছাড়া পাহাড়টির উপরিভাগের কাছাকাছি বাংলাদেশ অংশে ছাতাচূড়া নামের একটি বিখ্যাত মাজার আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কালা পাহাড়ের অগ্রভাগে একটি বিমান ভূপাতিত হয়েছিলো।
প্রাকৃতিক আকর্ষণঃ- কালা পাহাড়ের সবচেয়ে উচু স্থান থেকে অসাধারণ সব দৃশ্য চোখে পড়বে। দেখা যাবে দূরে অবস্থান করা বেশ কয়েকটি জনপদ। পাহাড় থেকে উত্তর-পূর্বাংশ কোণে তাকালে দেখা মিলবে দেশের সীমান্তের ভেতরে অবস্থিত জুড়ী উপজেলার অন্তর্গত রাজকি চা বাগান ও ফুলতলা বাজার। হালকা পূর্ব-দক্ষিনে তাকালে দেখা যাবে সীমান্তের ওপারে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর জেলার প্রধান শহর ধর্মনগরের একাংশ। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, শরৎকালে আকাশ পরিষ্কার থাকলে কালা পাহাড়ের চূড়া থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকির স্বচ্ছ নীলাভ জলরাশি স্পষ্টভাবে অবলোকন করা যায়। এমনকি ভারতের মেঘালয়ের দেয়াল সদৃশ পাহাড়সারিও সবসময় দৃশ্যমান থাকে। বর্ষাকালে পাহাড়টির চূড়া থেকে আকাশে মেঘের খেলা একদম কাছাকাছি উপভোগ করা যায়। বৃষ্টির দিনে যাত্রাকালে ঝিরিপথ দিয়ে হাটার সময় বেশ কয়েকটি ছোট ঝর্ণা পাওয়া যায়। এছাড়া আন্ডর বা কুম তৈরী করার জন্য আধিবাসীরা ছড়ার মধ্যে অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখে সপ্তাহে একদিন ফ্ল্যাশ ফ্লাডে বাশের আটি সমতলের বাজারে নিয়া আসার জন্য, ভাগ্য ভালো থাকলে আপনিও ভেলায় চড়ে লোকালয়ে আসতে পারেন। পাহাড়ি মেঠোপথে ছোটো ছোটো খালের উপর গাছের গুড়ির সাঁকো পার হওয়া খুবই আনন্দদায়ক। শীতকালে পাহাড়টি আরও সুন্দরভাবে ফুটে উঠে। কালা পাহাড় একেক ঋতুতে একেক ধরনের রূপ ধারণ করে। ঘন বনে উচু গাছের আড়ালে যখন সূর্য চোখে দেখতে পারবেন না তখন মনে হবে ব্রাজিলের আমাজন জঙ্গলে আছি। কালা পাহাড়ের জঙ্গলে রয়েছে হরিণ, বানর, মেছোবাঘ, ভাল্লুক ও সাপ সহ নানান প্রজাতির জীবজন্তু। পাহাড়ে যাত্রাপথে বিভিন্ন ফলজ গাছ থেকে ফলমূল হালকা নাস্তা হিসেবে খেতে পারবেন।
স্থানীয় সংস্কৃতিঃ- উত্তর থেকে দক্ষিন বরাবর দাড়িয়ে থাকা এই পাহাড়সারির আশপাশ মূলত খাসিয়া ও গারো জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। জনসংখ্যায় খাসিয়ারা বেশি হলেও গারো বসবাসকারীদের সংখ্যা খুবই কম। উল্লেখযোগ্য পাড়াগুলোর মধ্যে বেগুনছড়া পুঞ্জি, লবণছড়া পুঞ্জি, পুটিছড়া পুঞ্জি ও ফানাইছড়া পুঞ্জি অন্যতম। কালা পাহাড়ে যেতে সবচেয়ে কাছের ও সহজতম পথ আজগরাবাদ চা বাগান দিয়ে ঢুকে এই বেগুনছড়া পুঞ্জি হয়েই। পাড়াটি খুবই সুন্দর, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ছিমছাম। এখানে বসবাসকারী প্রায় পাঁচশত পরিবারের মানুষ বেশিরভাগই খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। স্থানীয় আধিবাসীদের প্রধান পেশা হলো পান চাষী। দেশব্যাপী নামকরা খাসিয়া পান-ই হল এখানকার প্রধান অর্থকারী ফসল।
রোডম্যাপঃ- কালা পাহাড় যেতে হলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ট্রেন অথবা বাসে করে প্রথমে কুলাউড়ায় আসতে হবে খুব ভোরে। কুলাউড়া পৌর শহর থেকে কালা পাহাড়ের দূরত্ব আনুমানিক ৩০ কি.মি। শুরুতে কুলাউড়া থেকে গাড়িযোগে পৃথিমপাশার রবিরবাজার হয়ে কর্মধার আজগরাবাদ চা বাগান গেইটে সকাল ৮টার আগে পৌঁছাতে হবে। তারপর এখানে গাড়ি রেখে বাগানের রাস্তা দিয়ে সোজা বরাবর ৪৫ মিনিট পায়ে হেটে বেগুনছড়া পুঞ্জিতে যেতে হয়। এরপর বেগুনছড়া পুঞ্জির দায়িত্বশীল মন্ত্রীর কাছ থেকে স্থানীয় অভিজ্ঞ গাইড নিয়ে টানা ২ ঘন্টা পাহাড় আরোহণ করা লাগবে। গাইড রেডি রাখার ব্যাপারে ট্রিপের আগেরদিন বেগুনছড়া পুঞ্জির দায়িত্বে থাকা হেডম্যান বা মন্ত্রী লেম্বু দাদার সাথে (০১৯৫১৬৪৯৮৮১) যোগাযোগ করে গেলে ভালো হবে। ট্যুরের পূর্বদিন শুধুমাত্র গাইড ম্যানেজ ব্যাতিত জরুরী প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো কিছুর ব্যাপারে তথ্য জানার জন্য উনাকে বারবার কল দিয়ে বিরক্ত না করার অনুরোধ রইলো। উনি কোনো ট্যুর অপারেটর না, আমাদের মতে উনার রিকমেন্ডেড গাইড সবচেয়ে বেশি সিকিউরড। একজন গাইডকে ৪-৫০০ টাকা বা আপনারা খুশি হয়ে যা দিবেন তা সাদরে সে গ্রহণ করবে। কালা পাহাড়ের একদম শীর্ষস্থান যেখানে ট্যুরিস্টরা কলম দিয়ে কাগজে আরোহীদের নাম সহ স্মৃতিচারণ নোট লিখে তা বোতলবন্দী করে গাছে ঝুলিয়ে রাখে, সেই বিখ্যাত সামিট পয়েন্টে গেলেই আপনি মনে করবেন আপনার অসাধ্য সাধন হয়ে গেছে। তখন আশেপাশের স্বর্গীয় ভিউ দেখে এক নিমিষেই পিছনের সব কষ্ট ভুলে যাবেন। কালা পাহাড়ের উপরে উঠার রাস্তা একটা (পাহাড়ি পথ) কিন্তু একই রাস্তা দিয়ে নামার ক্ষেত্রে ঝিরি পথ ও পাহাড়ি পথ দুইটা। বিকাল ৪টা নাগাদ রবিরবাজার এসে দুপুরের লাঞ্চ করতে পারবেন। এখানকার বিখ্যাত মসজিদে নামাজ পড়ার সুযোগ মিস করবেন না। আর হাতে সময় থাকলে বোনাস হিসেবে পৃথিমপাশার ঐতিহ্যবাহী নবাববাড়ি ঘুরে যেতে পারেন। এছাড়া কালা পাহাড়ের চূড়া থেকে আসার সময় অন্য আরেকটি সময়সাপেক্ষ, জুড়ী উপজেলার ফুলতলা বাজারের কাছে অবস্থিত রাজকি চা বাগান হয়েও লোকালয়ে ফিরা যায়। তবে এই রুট অনেক সময়সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
সতর্কতাঃ- নব্বই দশকের আগে একসময় এই গহীন কালা পাহাড়ে পার্শ্ববর্তী ভারতের বিদ্রোহী উগ্রপন্থি দল উলফা(এলএলটিটিএফ) এর সদস্যরা আত্মগোপন করে এখানে বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং করতো। তখন বাংলাদেশি অনেকেই এই পাহাড়ে বিচরণ করতে ভয় পেতেন। কিন্তু বর্তমানে সেনাবাহিনী ও বিজিবি’র মাধ্যমে এসব নিষিদ্ধ সংগঠন আমাদের দেশ থেকে একেবারে নির্মূল হওয়ায় পাহাড়টি সম্পূর্ণ শতভাগ নিরাপদ ট্যুরিজম জোনে পরিণত হয়েছে। ফলে পর্যটকরা এখন নিয়মিত স্বাচ্ছন্দ্যে পাহাড়ের পুরো এলাকায় ভ্রমণ করতে পারছেন। পাশাপাশি স্থানীয় আদিবাসীরাও জীবিকার তাগিদে পাহাড় এলাকায় প্রতিদিন বিভিন্ন কাজকর্ম করে থাকেন। তাছাড়া এই পাহাড়ে অবস্থান করা বুনো হাতিগুলো খুবই শান্তশিষ্ট প্রকৃতির হওয়ায় স্থানীয় ও বহিরাগত কেউ এসব তেমন একটা ভয় পায়না বললেই চলে। মানুষের শব্দ পেলেই ওরা বনের ভিতরে ঢুকে যায়। মাঝেমধ্যে তাদের শুধু দূর থেকেই দেখা যায়। যাত্রাপথে যেসব গোবরের স্তুপ লক্ষ্য করা যায় এগুলো সাধারণত পোষা হাতির বিষ্ঠা। পোষ্য হাতিকে অবশ্য কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করা যায়। আশার কথা হলো, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এখনও পর্যন্ত কালা পাহাড় এলাকায় কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনা হয়নি।
পরামর্শঃ- একা একা না গিয়ে কমপক্ষে ৫ জনের টিম বানিয়ে গেলে বেশি মজা পাবেন। কালা পাহাড় আরোহী প্রত্যেকের নিজস্ব ব্যাকপ্যাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার যেমন কেক, ব্রেড, কলা ও জনপ্রতি কমপক্ষে ২ লিটার পানীয় জল সাথে নিতে হবে। কাপড় হিসেবে ফুল হাতা শার্ট, পাঞ্জাবি, ভারী ড্রেস, শাড়ি, টাইট জিন্স প্যান্ট না পড়ে নরমাল গেঞ্জি ও লোজ ট্রাউজার পড়বেন আর পায়ের জন্য পিছন দিকে ফিতাওয়ালা মজবুত জুতা অথবা যেসব কেডস-শূ ভিজলেও সমস্যা হবেনা; অর্থাৎ এমন জিনিস পরিধান করে যাবেন যাতে পাহাড় এবং খাল দিয়ে সহজে চলাফেরা করা যায়। চূড়ার উপর পর্বত বিজয়ের সুন্দর ছবি তোলার জন্য দলের যেকোনো একজনের সাথে একটি দেশের পতাকা রাখতে পারেন। আর যারা শারীরিক ও মানসিকভাবে কিছুটা দুর্বল প্রকৃতির আপনাদের এই কঠিন চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করতে আমরা নিরুৎসাহিত করছি। তবে পুরুষের পাশাপাশি এখন অনেক অদম্য নারীরা এই অসম্ভবকে নিয়মিত সম্ভব করতেছেন। আসলে আপনার যদি প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকে তাহলে মন থেকে চাইলে যেকোনো বাধা টপকানো অবশ্যই সম্ভব।
নির্দেশনাঃ- প্রকৃতিতে কোনো অপচনশীল আবর্জনা ফেলে পরিবেশ নষ্ট করে আসবেন না। উচ্ছিষ্ট ময়লা ব্যাগের সাথে নিয়ে এসে লোকালয়ের নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবেন। আর দয়া করে পুঞ্জি এলাকায় এমন কোনো আচরণ করবেন না যা স্থানীয় আধিবাসী সম্প্রদায়ের নিজস্ব সংস্কৃতিতে আঘাত হেনে তাদের মনে পীড়া দেয়।
আমন্ত্রণপত্রঃ- বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখন ট্যুরিস্টরা মূলত এক্সট্রিম হিল ট্রেকিং ও এডভেঞ্চারাস ট্রেইলের ট্রিপ এক্সপিডিশন করার জন্য নিয়মিত কালা পাহাড়ে ঘুরতে আসেন। আপনার যদি ঢাকার ফ্যান্টাসি কিংডম কিংবা সিলেটের ড্রীমল্যান্ড পার্ক জাতীয় স্থানগুলো যদি পছন্দ হয় তবে কালা পাহাড় আপনার জন্য আদর্শ না। আপনি যদি পর্বতমালা ভালোবাসেন এবং শহুরে যান্ত্রিকতা ছেড়ে মায়াবী প্রকৃতির নিসর্গ সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে কিছুটা সময়ের জন্য হারিয়ে সৃষ্টিকর্তার অপরূপ পৃথিবী প্রাণভরে উপভোগ করতে চান, তাহলে জীবনে একবার হলেও সুউচ্চ কালা পাহাড় আরোহন করে কল্পনার রাজ্যে নেপালের হিমালয় এভারেস্ট বিজয় স্বাদের সামান্য অনুভূতি এখান থেকে নিতে পারেন। যেকোনো সহযোগিতার জন্য জনপ্রিয়- কুলাউড়া সমস্যা ও সম্ভাবনা পেইজের ইনবক্সে যোগাযোগ করতে পারেন অথবা Kulaura Problem & Prospect গ্রুপে পোস্ট করে বিনামূল্যে কাঙ্ক্ষিত ভ্রমণ সেবা নিতে পারেন। আপনাদের উষ্ণ আতিথেয়তা দেওয়ার জন্য কুলাউড়াবাসী সবসময় মুখিয়ে আছে।
কালা পাহাড়। শ্রেণী- লংলা- হাড়ারগজ পর্বতশ্রেণী।স্থানাঙ্ক- 24°24.586’N | 92°04.792’E উচ্চতা- 1,098 feet (GPS accuracy +/-3 m)।
*তথ্য ও ছবি- সংগ্রহ।
Published From
Positive International Inc,
73-16, Roosevelt Ave Floor 2, Jackson Heights, New York 11372.
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us