বরমচালের ইছলাছড়ায় জুমের পান ও ফলজ গাছ কেটে সামাজিক বনায়নের চেষ্টা।

প্রকাশিত: ৫:২৬ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২২, ২০২২

বরমচালের ইছলাছড়ায় জুমের পান ও ফলজ গাছ কেটে সামাজিক বনায়নের চেষ্টা।
booked.net

আব্দুল কুদ্দুসঃ- কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের ইছলাছড়া জুমে কয়েকশ’ পান, সুপারি ও বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ গাছ কেটে সেখানে সামাজিক বনায়ন করার চেষ্টা করছেন বনবিভাগের বরমচাল বিট কর্মকর্তা, এমন অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ইছলাছড়া পুঞ্জির আদিবাসীরা। তাদের অভিযোগ, মাস তিনেক পূর্বে বরমচাল বিট কর্মকর্তার নেতৃত্বে একদল শ্রমিক জুমে ঢুকে পান ও সুপারি গাছ আবাদ করতে থাকেন। খাসিয়ারা এতে বাধা দেন। বাধা না মানায় খাসিয়ারা বনবিভাগের বিরুদ্ধে সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে একটি স্বত্ত্ব মামলা (নং ১৮৫/২০২২) দায়ের করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বরমচাল ইছলাছড়া পুঞ্জি থেকে সেখানকার জুমের দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। জুমটিতে পান গাছ সহ আকাশি ও সুপারি এবং বিভিন্ন প্রজাতির ফলায়া গাছ রয়েছে। খাসিয়াদের ৭০-৮০টি পরিবার এই জুমে বংশ পরম্পরায় পান চাষ ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করে আসছে। প্রায় দুই-আড়াই মাস পূর্বে হঠাৎ করে বরমচাল বনবিটের বিট কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান সামাজিক বনায়ন করার লক্ষ্যে শ্রমিকদের বিশাল দল নিয়ে জুম আবাদ শুরু করেন। এসময় পুঞ্জির প্রয়াত মন্ত্রী তেল মোহন পথঃমির মেয়ে লিদিয়া স্যাল্লা বাধা দেন। শ্রমিকরা তার বাধা উপেক্ষা করে জোরপূর্বক জুমের পান ও ফলায়া গাছ সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কাটতে থাকেন। এই ঘটনায় গত ২১ জুলাই সিনিয়র সহকারী জজ আদালত কুলাউড়া মৌলভীবাজারে একটি স্বত্ত্ব মামলা দায়ের এবং জুম আবাদে নিষেধাজ্ঞা প্রার্থনা করলে বিজ্ঞ আদালত অস্থায়ী স্থগিতাদেশ জারি করেন।

এ ব্যাপারে বনবিভাগ জানিয়েছে, খাসিয়ারা আদালতে বনায়নকৃত জায়গার মালিকানা দাবী করে রিট করলে আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন। কিন্তু রিটের বিপক্ষে বনবিভাগ ৮ আগস্ট আদালতে আপিল করলে আদালত খাসিয়াদের স্বত্ত্ব মামলা নামঞ্জুর করেন। ফলে সামাজিক বনায়নে আইনগত কোন বাধা না থাকায় উপকারভোগী সদস্য ও বনবিভাগের লোকজন সেখানে চারা রোপন শুরু করেন।

পুঞ্জির মান্ত্রী আলফায়াছ স্যাল্লা জানান, দুইদিনের মাথায় ১০ আগস্ট স্থগিতাদেশের উপর শুনানী হয়। খাসিয়াদের পক্ষে দায়ের করা স্বত্ত্ব মামলায় নিষেধাজ্ঞার প্রার্থনা নামঞ্জুর করে বিজ্ঞ আদালত আদেশ প্রদান করেন। তিনি বলেন, বরমচাল বিট কর্মকর্তা তড়িগড়ি করে ১১ আগস্ট ইছলাছড়া জুমে বনবিটের পক্ষে সামাজিক বনায়নের একটি সাইনবোর্ড স্থাপন করেন। আলফায়াছ স্যাল্লা আরো জানান, খাসিয়াদের পক্ষে দায়ের করা স্বত্ত্ব মামলাটি নামঞ্জুর করে বিজ্ঞ আদালত আদেশ প্রদান করায় এর বিরুদ্ধে তিনি আদালতে বিবিধ আপিল (নং ৪৩/২০২২) দায়ের করেন। আপিল মামলা বিচারাধীন থাকার পরও জুম আবাদ করে স্থানীয় বিট কর্মকর্তা জোরপূর্বক সেখানে গাছ রোপণ করছেন।

পুঞ্জির বাসিন্দা ব্রিনাল স্যাল্লা, ব্রুয়েল লামিন, জান্তিমন প্রসাদ, সুনিত স্যাল্লা, ফেবিন প্রসাদ, অনিমেষ সুয়ের, রুবি লামারাই, লিডিয়া স্যাল্লা ও লক্ষণ সুমের জানান, প্রয়াত তেল মোহন পথঃমি ইছলাছড়া পান পুঞ্জির প্রতিষ্ঠাকালীন মান্ত্রী ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি পুঞ্জি দেখবাল করেছেন। তিনি একজন শালিস বিচারকও ছিলেন। প্রয়াত এই মান্ত্রী জীবিত থাকাবস্থায় কুলাউড়া সরকারি ডিগ্রী কলেজ, বরমচাল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, নন্দনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শ্রীপুর মাদ্রাসায় বিভিন্ন ধরনের অনুদান দিয়েছেন। সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে এলাকায় তার ব্যাপক সুনাম ছিল। তার দায়িত্বকালীন সময়ে অর্থাৎ ১৯৫৬ সাল থেকে পুঞ্জির লোকজন ইছলাছড়া জুমে শান্তিপূর্ণভাবে পানচাষ করেছেন। তিনি মারা যাওয়ার পর তারই উত্তরসূরী আলফায়াছ স্যাল্লা মান্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিও পুঞ্জিতে আদিবাসী লোকজনদের শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস ও জুমে পানচাষ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। পুঞ্জির ওই বাসিন্দারা আরো জানান, জুমের ভিতর পুরাতন বড় একটি ফিসারী রয়েছে। রয়েছে পুরাতন গাছপালা। তাদের দাবি, আপিলের রায়ে বিজ্ঞ আদালত জুম আবাদ করে সেখানে সামাজিক বনায়নের অনুমতি দেননি। কিন্তু জুমটি জোরপূর্বক আবাদ করে সেখানে সামাজিক বনায়ন করতে এবং অযথা বিশৃঙ্খলা ঘটানোর চেষ্টা করছেন স্থানীয় বরমচাল বিট কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান।

এ বিষয় জানতে চাইলে বরমচাল বনবিটের বিট কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ইছলাছড়া পুঞ্জির মান্ত্রী আলফায়াছ স্যাল্লা জানান, স্বত্ত্ব মামলাটি নামঞ্জুর করায় বিজ্ঞ আদালতে বিবিধ আপিল দায়ের করেছি। রায়ের আগ পর্যন্ত সেখানে জুম আবাদ না করতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।

ছবিঃ- ইছলাছড়া পুঞ্জির জুমে বনবিভাগের স্থানীয় বিট কর্মকর্তার নেতৃত্বে এভাবেই পান ও সুপারি গাছ কাটা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Ad