প্রকাশিত: ৭:১৪ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১২, ২০২১
ডেস্কঃ-প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে গেছে মানুষের অভ্যাস, জীবনযাত্রা। বদলে গেছে নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্রের ধরনও। কোনোটি বাদ পড়ে গেছে আবার কোনোটি নতুন যুক্ত হয়েছে। কোনোটির আবার হয়েছে আধুনিকায়ন। দৈনন্দিন জীবনে পরিধান করার কিছু উপকরণের আধুনিকায়ন থেকেই উদ্ভব পরিধানযোগ্য প্রযুক্তির। ২০২১ সালে এসে ফাইভ-জি মোবাইল নেটওয়ার্কের প্রসারে পরিধানযোগ্য প্রযুক্তি বা ওয়্যারেবল টেকনোলজির নতুন মাত্রা দেখা যাচ্ছে।
সায়েন্স ফিকশন মুভিতে আমরা প্রায়ই দেখি, কোনো চরিত্রের হাতে জুড়ে দেওয়া সুন্দর স্ক্রিন দিয়ে কারো সাথে ভিডিও কলে কথা বলছে, কিংবা কারো চোখে চশমায় স্ক্রিনের মাধ্যমে সে দেখে নিচ্ছে দূরে কোথাও কী হচ্ছে! এসব দৃশ্য সিনেমার পর্দায় অনেক আগে থেকেই দেখে আসলেও, বাস্তবে রূপ নিতে বেশ কিছুটা দেরিই হয়েছে। হবেই বা না কেন? প্রযুক্তির আজকের যে অবস্থান তা তো আর একদিনে হুট করেই আসে নি!
পরিধানযোগ্য প্রযুক্তি বা ওয়্যারেবল টেকনোলজি নামটা প্রযুক্তির জগতে একেবারে নতুন কিছু নয়। চিকিৎসাক্ষেত্রে শরীরে পরার জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তি অনেক আগে থেকেই চালু ছিল। শুরুতে রোগীর শরীরের রক্ত সঞ্চালন, রক্তচাপের হ্রাস-বৃদ্ধি, তাপমাত্রার তারতম্য- ইত্যাদি মাপার জন্য পরিধানযোগ্য প্রযুক্তি ব্যবহার হতো।
বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্য ২০১২ সালে গুগল ঘোষণা দেয় ‘গুগল গ্লাস’ এর যা ২০১৩ সালে সাধারণের ক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এই গুগল গ্লাস সাধারণ চশমার মতোই পরা যেত এবং এতে সাধারণ লেখা বা নোটিফিকেশন দেখা যেত। এতে ছিল ৫ মেগাপিক্সেলের একটি ক্যামেরা এবং তা দিয়ে এইচডি ভিডিও রেকর্ডও করা যেত। উচ্চ মূল্য এবং আরও কিছু খুঁটিনাটি সমস্যার কারণে গুগলের এই প্রজেক্ট সফলতার মুখ না দেখলেও পরিধানযোগ্য প্রযুক্তির জগতে এটি ছিল একটি মাইলফলকস্বরূপ।
এরপরে আরও বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন ধরনের পরিধানযোগ্য প্রযুক্তি নিয়ে আসে। যার শুরুটা হয় ভিআর গ্লাস বা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি গ্লাসের হাত ধরে। এরপরে একে একে বাজারে আসতে থাকে স্মার্টওয়াচ, ফিটনেস ট্র্যাকার, এআর গ্লাস বা অগমেন্টেড রিয়েলিটি গ্লাস ইত্যাদি।
স্মার্টওয়াচ সাধারণ ঘড়ির মতই হাতে পরিধানযোগ্য হলেও এতে রয়েছে নোটিফিকেশন দেখা, কথা বলা, মেসেজ পাঠানো ইত্যাদির মত প্রয়োজনীয় ফিচার। এর পাশাপাশি হার্টবিট রেট, শরীরের তাপমাত্রা, ব্যায়াম ইত্যাদি পরিমাপ করার ফিচারও দেখা যায় এগুলোতে। বর্তমানে স্মার্টওয়াচের বাজারের বেশিরভাগ অংশই অ্যাপল, হুয়াওয়ে ও শাওমির দখলে। আধুনিক ও ক্লাসিক উভয় ডিজাইনেই পাওয়া যায় আজকালকার স্মার্টওয়াচগুলো।
স্মার্টওয়াচের মতোই আরেক পরিধানযোগ্য প্রযুক্তি ফিটনেস ট্র্যাকার বা ফিটনেস ব্যান্ড। এটির কার্যক্রম মূলত ফিটনেসকেন্দ্রিক। কতটুকু হাঁটা হল, কতটুকু সাইক্লিং করা হলো কিংবা কতটুকু ঘুমানো হলো—এসবের তথ্য রাখাই ফিটনেস ট্র্যাকারের কাজ। ফিটনেস ট্র্যাকার হিসেবে শাওমির ‘মি ব্যান্ড’ সিরিজ বেশ জনপ্রিয়। এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও ফিটনেস ট্র্যাকারের জনপ্রিয়তা দিনদিন বাড়ছে।
কিছুদিন আগেই চীনা কোম্পানি শাওমি ঘোষণা দেয় তাদের নতুন স্মার্ট গ্লাসের। সাধারণ সানগ্লাসের মতই দেখতে এই গ্লাসটির ওজন মাত্র ৫১ গ্রাম। এতে রয়েছে মেসেজ, নোটিফিকশন দেখা, কল করা, ছবি তোলা, অনুবাদ করা- ইত্যাদি ফিচার। যদিও এই পণ্যটি সাধারণ ক্রেতাদের জন্য এখনো বাজারজাত করেনি শাওমি, কিন্তু নিকট ভবিষ্যতেই যে এধরনের গ্লাস বাজারে অহরহ দেখা যাবে- সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
পরিধানযোগ্য প্রযুক্তির বাজারে বড় বড় হার্ডওয়্যার কোম্পানিগুলোর আগমনে বসে নেই ফেসবুকও। সম্প্রতি তারাও ঘোষণা দেয় তাদের স্মার্ট গ্লাসের। তারা এর নাম দেয় ‘রে-ব্যান স্টোরিজ’। তারা বিখ্যাত চশমা প্রস্তুতকারক কোম্পানি রে-ব্যান এর সাথে যৌথভাবে তৈরি করে এই রে-ব্যান স্টোরিজ। এতে রয়েছে কল করা বা কল রিসিভ করা, ছবি বা ভিডিয়ো ধারণ করা, গান শোনা- ইত্যাদি ফিচার।
পরিধানযোগ্য প্রযুক্তি এখন আর শুধু প্রয়োজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এটি এখনও ফ্যাশনেরও অন্তর্ভুক্ত। নিত্যনতুন ফ্যাশন ট্রেন্ডের সাথে তাল মিলিয়ে নির্মাতারা নজর দিচ্ছেন ডিজাইনেও। স্টাইলিশ ও ট্রেন্ডি ডিজাইন দিয়ে বাজারে লড়াই করছে কোম্পানিগুলো। প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে স্মার্ট প্রযুক্তিতেও মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়বে। পরিধানযোগ্য প্রযুক্তিগুলোও দিনদিন মানুষের জন্য আরো বেশি সহায়ক হবে। নিত্যপরিবর্তনশীল প্রযুক্তির দুনিয়ায় পরিধানযোগ্য প্রযুক্তি ভবিষ্যতে যে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে আরো অনেকটা জায়গা দখল করবে- এ কথা বলাই যায়!
PUBLISHED FROM
2152-B WESTCHESTER AVE BRONX
NEW YORK 10462 USA
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum Mintu
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us