প্রকাশিত: ৯:১১ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৮, ২০২৩
সেলফি কী? নিজের প্রতিকৃতির ইংরেজিই সেলফি। একটি ছবি (আলোকচিত্র), যা নিজেরই তোলা নিজের প্রতিকৃতি, সাধারণত স্মার্টফোন বা ওয়েব ক্যামেরায় ধারণ করা এবং তা কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড (তুলে) দেওয়া।
ইসলামে বিশেষ প্রয়োজনে ছবি তোলা বৈধ। অপ্রয়োজনে যেকোনো জায়গায় ছবি বা সেলফি তোলা অন্যায়। দারুল উলুম দেওবন্দের প্রধান আল্লামা মুফতি আবুল কাসেম নোমানী তাঁর ফতোয়ায় উল্লেখ করেন, পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট তৈরির মতো একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ইসলামে ছবি তোলা হারাম। কোরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াসের ভিত্তিতে পৃথিবীর সব ইমাম ও ফিকহ বিশেষজ্ঞ ও সমকালীন মুফতিদের অভিমত হলো, অতি প্রয়োজন ছাড়া ছবি তোলা, আঁকা এবং তা প্রকাশ করা জায়েজ নয়। (ফিকহি মাকালাত; তকি উসমানী : ৪/১২৩)
অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, বর্তমানে ইবাদত-বন্দেগিতেও সেলফির অনুপ্রবেশ ঘটে যাচ্ছে। এটি আমল ধ্বংসে মারাত্মকভাবে ভূমিকা রাখছে। অনেকের মাঝে পবিত্র হজ পালন করতে গিয়েও আল্লাহর ঘরের সামনে সেলফি তোলার প্রবণতা দেখা যায়। নামাজের মতো অঙ্গভঙ্গি করে কিংবা জুমার নামাজ পড়তে গিয়ে মসজিদে বসে সেলফি তোলেন কেউ কেউ! অথচ পবিত্র কোরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘পূর্ব ও পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফেরানোতে কোনো পুণ্য নেই; পুণ্যবান তো সেই, যে আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছে, ঈমান এনেছে শেষ দিবসের ওপর এবং সব ফেরেশতা, কিতাবসমূহ ও নবীগণের ওপর।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭৭)
প্রত্যেক ঈমানদারের জন্য এ আয়াতে এই গভীর শিক্ষা রয়েছে, মুমিনের ইবাদত-বন্দেগি যেন শুধু অঙ্গভঙ্গিতে রূপান্তরিত না হয়। তার প্রতিটি আমলই হয় যেন শুধু আল্লাহর জন্য, মানুষকে দেখানোর জন্য নয়। কারণ আল্লাহ সবার অন্তর দেখেন।
অন্যত্র মুমিনদের উদ্দেশ করে মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না তার (কোরবানির প্রাণীর) গোশত ও রক্ত; বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া…।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৩৭)
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি লোক দেখানো ইবাদত করে, আল্লাহ এর বিনিময়ে তার লোক দেখানো উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দেবেন।’ (সহিহ বুখারি : ৬৪৯৯)
তা ছাড়া সেলফি তোলার মূল উদ্দেশ্যই হলো আত্মপ্রদর্শন। এটাকে শরিয়তের ভাষায় ‘রিয়া’ বলে। এই প্রদর্শন যদি হয় ইবাদতের ক্ষেত্রে তা হতো আমাদের ঈমানকে ধ্বংস করার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার।
হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসে উল্লেখ আছে, মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, তিনি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, ‘সামান্যতম রিয়াও (লোক দেখানো আমল) শিরক।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৯৮৯)
কোরআন ও হাদিসের আলোকে আলেমরা বলেন, সেলফি হলো, আত্মতৃপ্তি ও আত্মপ্রদর্শনের একটি মাধ্যম। আর ইবাদত হলো সম্পূর্ণ আল্লাহর জন্য। তাই ইবাদতের মধ্যে সেলফির অনুপ্রবেশ ঘটানো মোটেই সমীচীন নয়। এতে আমল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুধু ইবাদতের ক্ষেত্রেই নয়, ব্যক্তিজীবনেও সেলফি আসক্তি মানুষের জীবন কেড়ে নিতে পারে কিংবা ঘটিয়ে দিতে পারে অনেক বড় কোনো বিপদ।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বাণীতে তো আরো কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হাশরের দিন সর্বাধিক আজাবে আক্রান্ত হবে তারাই, যারা কোনো প্রাণীর ছবি তোলে অথবা আঁকে।’ (বুখারি : ৫/২২২২)
Published From
Positive International Inc,
73-16, Roosevelt Ave Floor 2, Jackson Heights, New York 11372.
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us