সরকারী ভাতা জোটেনি ভাগ্যে। কর্মধায় নোনছড়া পুঞ্জিতেই ১০ প্রতিবন্ধী!

প্রকাশিত: ১০:২৩ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৫, ২০২২

সরকারী ভাতা জোটেনি ভাগ্যে। কর্মধায় নোনছড়া পুঞ্জিতেই ১০ প্রতিবন্ধী!
booked.net
Manual5 Ad Code

আব্দুল কুদ্দুসঃ- কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের নোনছড়া পুঞ্জিতে ১০ জন প্রতিবন্ধী  মানবেতর জীবন-যাপন করছে। শিশু থেকে শুরু করে মহিলাও রয়েছেন প্রতিবন্ধীর এই তালিকায়। স্থানীয় লোকজন জানান এরা সবাই জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী। এদের মধ্যে কেউ শারিরীক, কেউ বাক্ প্রতিবন্ধী কেউ বা আবার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী।

দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় বসবাস কারী ওই এলাকার অসুস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য স্থানীয় লোকজন অন্তত ৩/৪ কিলোমিটার দূরের রাস্তা কাঁধে বহন করে নিয়ে গাড়ীতে তুলতে হয়। এতে করে একদিকে যেমন পুঞ্জির লোকজনের কষ্টের সীমা থাকেনা, অন্যদিকে কেউ কেউ আবার প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে রোগের সাথে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া অর্থের অভাবে প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা খরচ বহন করতে পারছে না পরিবারের লোকজন। ফলে ওইসব প্রতিবন্ধীরাও খুবই দুঃখ ও কষ্টে জীবন-যাপন করছেন।

Manual3 Ad Code

নোনছড়া পুঞ্জির প্রতিবন্ধী ১০ জন ব্যক্তি হলেন- রুপসি ইয়ালাংয়ের ছেলে ফিনিস ইয়ালাং (১১), মৃত মেরী খংলার ছেলে পিউস খংলা (৩০), ছিয়াংয়ের ছেলে সেএন ডো মারছিয়াং (২৩), মেরী নাল লামিনের ছেলে হিমেল লামিন (১৪), ফ্রমসি লাকাছিয়াং (৪৮), পের নাম লাকাছিয়াংয়ের ছেলে মে বা আই লাকাছিয়াং (৮),মিতালী ডিকারের ছেলে সিরোপ ডিকার (১৬) ওয়ানকি ডিকার (১৮), সাইলেন খংলার মেয়ে পিডিয়াংহুন খংলা (১৮) এবং প্রমিস ফাওয়ার মেয়ে সাটিস্ফাই (১৯)। এসব তথ্য জানিয়েছেন পুঞ্জির হেডম্যান ববরিন তংপেয়ার ও প্রতিবন্ধী পরিবারের লোকজন।

Manual1 Ad Code

প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, নোনছড়ার ফিনিস ইয়ালাং জন্মগত ভাবেই শারিরীক ও বাক্ প্রতিবন্ধী। দরিদ্র বাবা প্রতিনিয়ত জুমে অন্যের কাজ করেন। ৬ সদস্যের পরিবারে ভরন-পোষণ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। তার উপর আবার প্রতিবন্ধী শিশুর চিকিৎসার ব্যয়ভার। প্রতিবন্ধী শিশুর ভাতার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে একবার আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ভাতা পাননি। বাক্ ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী পিউস খংলার কোন ঘর নেই পুঞ্জিতে। মা-বাবার ঘরে সে-ই একমাত্র ছেলে। শুধু নোনছড়া পুঞ্জিতেই কাজ করে জীবন চলছে তার। কাজ করতে না পারলেও অনেক সময় পুঞ্জির লোকজন তাকে খাইয়ে দেন। এমনকি  তারও ভাগ্যে জোটেনি একটি ভাতার কার্ড।

Manual2 Ad Code

মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে সেএন ডো মারছিয়াং বুদ্ধি ও বাক্ প্রতিবন্ধি। পুঞ্জি এলাকায় কোন রকম কাজ করে সে। প্রতিবন্ধী ভাতা পেতে ইউনিয়ন পরিষদে আবেদন করলেও ভাতার কার্ড জোটেনি তার ভাগ্যে। এদিকে হিমেল লামিনের পরিবার চলে একমাত্র পিতা ও তার ভাইয়ের রোজগারের উপর। সেও একজন বাক্ ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী ভাতা থেকে’ও সে বঞ্ছিত। আরেক জন স্বামী পরিত্যক্তা ফ্রমসি লাকাছিয়াং একজন বাক্ প্রতিবন্ধী মহিলা। বর্তমানে ৩ মেয়ের সংসার নিয়ে কোন রকম জীবন কাটছে পুঞ্জি এলাকায় অন্যের কাজ করে। তিনিও কোন ধরনের ভাতা পাননি সরকার থেকে।

সিরোপ ডিকার ও ওয়ানকি ডিকার দুজনই জন্মগত ভাবে শারিরীক ও বাক্ প্রতিবন্ধী। তাদের বাবা জানান, প্রতিবন্ধী দুই ছেলের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, জন্মগত ভাবে প্রতিবন্ধী থাকায় বিছানা থেকে তারা উঠার উপায় নেই। এরমধ্যে গত ৩ বছর যাবৎ ওয়ানকি ডিকার  কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও সিরোপ কোন ভাতা পাননি। একই অবস্থা পিডিয়াংহুন খংলা’র। তিনিও একজন বুদ্ধি ও বাক্ প্রতিবন্ধী। ইউনিয়ন পরিষদে কয়েকবার ধরনা দিয়ে’ও  এখন পর্যন্ত কোন সরকারি ভাতা জুটেনি তার ভাগ্যে।

Manual3 Ad Code

বাক্ প্রতিবন্ধী প্রমিস ফাওয়ার মেয়ে সাটিস্ফাই।
প্রতিবন্ধী ভাতা পায়নি এই মেয়েটি। তাছাড়া নোনছড়া পুঞ্জির রিয়িং লাকাছিয়াং (৫৭) প্রায় ২০ বছর থেকেই বিধবা। স্বামী বেফুত সুতিং মারা যাওয়ার পর পুঞ্জিতে পান গুছানোর কাজ করছেন তিনি। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর এখন ঘরে একাই তার বসবাস। তারও ভাগ্যে জোটেনি একটি বিধবা ভাতা।
পুঞ্জির হেডম্যান (পুঞ্জিপ্রধান) ববরিন তংপেয়ার জানান, নোনছড়া পুঞ্জিতে শিশু, যুবক ও নারী মিলে ১০ জন প্রতিবন্ধী রয়েছেন। এরা বুদ্ধি, শারিরীক ও
বাক্ প্রতিবন্ধি। তিনি বলেন,’আমরা পুঞ্জি এলাকায় তাদের কাজের সুযোগ করে দিয়েছি’।

পুঞ্জির হেডম্যান (পুঞ্জি প্রধান) ববরিন তংপেয়ার সরকারিভাবে এই সব প্রতিবন্ধীদের ভাতা প্রদানের জোর দাবী জানান।

ছবিঃ- নোনছড়া পুঞ্জিতে পরিবারের সদস্যদের সাথে কয়েকজন প্রতিবন্ধী।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Ad

Follow for More!