প্রকাশিত: ৮:১৭ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪
মিথ্যাকে বলা হয় সব পাপের জননী। মুনাফিকের অন্যতম অভ্যাস। কোনো মিথ্যা হাজারো মিথ্যার জন্ম দেয়। মিথ্যা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে মানুষ হাজারো পাপে লিপ্ত হয়। নিম্নে মানবজীবনে মিথ্যার কিছু কুপ্রভাব তুলে ধরা হলো—
মানসিক শান্তি কেড়ে নেয়- মিথ্যা মানুষের মানসিক শান্তি কেড়ে নেয়। মানুষকে সার্বক্ষণিক দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলে রাখে। তাই শান্তিময় জীবনের জন্য মিথ্যা ত্যাগ করা জরুরি। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবুল হাওরা আস-সাদি (রহ.) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, হাসান ইবনু আলী (রা.)-কে আমি প্রশ্ন করলাম, আপনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কোন কথাটা মনে রেখেছেন? তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এই কথাটি মনে রেখেছি—‘যে বিষয়ে তোমার সন্দেহ হয়, তা ছেড়ে দিয়ে যাতে সন্দেহের সম্ভাবনা নেই তা গ্রহণ করো। যেহেতু, সত্য হলো শান্তি ও স্বস্তি এবং মিথ্যা হলো দ্বিধা-সন্দেহ। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫১৮)
অন্তরকে রোগাক্রান্ত করে- মিথ্যা অন্তরকে রোগাক্রান্ত করে। যে রোগ মানুষকে হক থেকে বঞ্চিত করে এবং জাহান্নাম পর্যন্ত নিয়ে যায়। পবিত্র কোরআনে মুনাফিকদের এই রোগের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর মানুষের মধ্যে কিছু এমন আছে, যারা বলে, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি, অথচ তারা মুমিন নয়। তারা আল্লাহকে এবং যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে ধোঁকা দিচ্ছে। অথচ তারা নিজদেরই ধোঁকা দিচ্ছে এবং তারা তা অনুধাবন করে না। তাদের অন্তরে আছে ব্যাধি, অতঃপর আল্লাহ তাদের ব্যাধি বাড়িয়ে দিয়েছেন আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি, কারণ তারা মিথ্যাবাদী। ’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ৮-১০)
জীবন সংকুচিত করে দেয়- বাহ্যিকভাবে মিথ্যুকদের অনেক সফল মনে হলেও মূলত তারা বঞ্চিত ও ব্যর্থ। কারণ হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মাতা-পিতার সঙ্গে সদাচরণ দীর্ঘায়ু হওয়ার কারণ।মিথ্যাচারিতা জীবিকা সংকুচিত করে দেয় এবং দোয়া দ্বারা ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে। (আত তারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস : ৪৪৮৮)
ফেরেশতারা দূরে সরে যায়- যারা মিথ্যা বলে, ফেরেশতারা তাদের এই মিথ্যার দুর্গন্ধে তাদের থেকে দূরে সরে যায়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হজরত ইবন উমার (রা.) সূত্রে নবী (সা.) বলেছেন, বান্দা যখন মিথ্যা কথা বলে, ফেরেশতারা তার কাছ থেকে দুর্গন্ধের কারণে এক মাইল দূরে চলে যায়। (আত তারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস : ৪৪৮৯)
পাপাচারে লিপ্ত করে- হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা মিথ্যাচার বর্জন করো। কেননা মিথ্যা পাপাচারের দিকে ধাবিত করে এবং পাপাচার জাহান্নামে নিয়ে যায়। কোনো ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা বলতে থাকলে এবং মিথ্যাচারকে স্বভাবে পরিণত করলে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নিকট তার নাম মিথ্যুক হিসেবেই লেখা হয়। আর তোমরা অবশ্যই সততা অবলম্বন করবে। কেননা সততা নেক কাজের দিকে পথ দেখায় এবং নেক কাজ জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। আর কোনো ব্যক্তি সর্বদা সততা বজায় রাখলে এবং সততাকে নিজের স্বভাবে পরিণত করলে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে তার নাম পরম সত্যবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৮৯)
হিদায়াত থেকে বঞ্চিত হয়- যারা অধিক মিথ্যা বলে এমন সীমা লঙ্ঘন করে মহান আল্লাহ তাদের হিদায়াত থেকে বঞ্চিত করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে হিদায়াত দেন না, যে সীমা লঙ্ঘনকারী, মিথ্যাবাদী। ’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ২৮)
আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করে- মিথ্যাবাদী আল্লাহর অপছন্দের পাত্র। এ জন্যই মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবিবকে খ্রিস্টানদের অতিরঞ্জিত মিথ্যা তথ্য প্রদান ও তর্কের মোকাবেলায় মুবাহালার শিক্ষা দেন। মুবাহালার অর্থ হলো, দুই পক্ষের একে অপরের প্রতি অভিসম্পাত করা। অর্থাৎ দুই পক্ষের মধ্যে কোনো বিষয়ের সত্য ও মিথ্যা হওয়ার ব্যাপারে তর্কবিতর্ক হলে এবং দলিলাদির ভিত্তিতে মীমাংসা না হলে, তারা সবাই মিলে আল্লাহর কাছে এই বলে দোয়া করবে যে, ‘হে আল্লাহ! আমাদের উভয়ের মধ্যে যে মিথ্যাবাদী, তার ওপর তোমার অভিশাপ বর্ষণ হোক!’
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, “অতঃপর তোমার নিকট জ্ঞান আসার পর যে তোমার সঙ্গে এ বিষয়ে ঝগড়া করে, তবে তুমি তাকে বলো, এসো আমরা ডেকে নিই আমাদের সন্তানদের ও তোমাদের সন্তানদের। আর আমাদের নারীদের ও তোমাদের নারীদের এবং আমাদের নিজেদের ও তোমাদের নিজেদের, তারপর আমরা বিনীত প্রার্থনা করি, ‘মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর লানত করি’। ”(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৬১)
Published From
Positive International Inc,
73-16, Roosevelt Ave Floor 2, Jackson Heights, New York 11372.
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us