প্রকাশিত: ৮:১০ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৪, ২০২১
নিউজ ডেস্কঃ শিক্ষার্থীদের ওপর ‘বাড়তি চাপ সৃষ্টি করা’ প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাদ দেওয়ার দাবি নতুন নয়। অনেক দিন ধরেই শিক্ষাবিদ সহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থা এ পরীক্ষা স্থায়ীভাবে বাদ দেওয়ার জন্য বলে আসছে। কিন্তু সরকার সে দাবি গ্রহণ করেনি। এখন সরকারের উদ্যোগে হওয়া প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেটের (জেএসসি) মতো কোনো পরীক্ষা রাখা হয়নি।
নতুন শিক্ষাক্রম আগামী বছর পরীক্ষামূলক ভাবে এবং পরের বছর (২০২৩) থেকে বাস্তবায়ন শুরু হবে। এ অবস্থায় শিক্ষাবিদ সহ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পিইসির সঙ্গে শিক্ষাক্রমের রূপরেখার আলোকে জেএসসি পরীক্ষাও স্থায়ীভাবে বাদের ঘোষণা দেওয়া দরকার। এ বিষয়ে বাড়তি যুক্তি হিসেবে তাঁরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে গত বছর এসব পরীক্ষা হয়নি। এ বছরও জেএসসি পরীক্ষা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। পিইসি পরীক্ষাও না হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। তাই এখনই স্থায়ীভাবে এসব পরীক্ষা বাদের ঘোষণা দেওয়াই ভালো মনে করছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটির সদস্য এম তারিক আহসান বলেন, শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় পিইসি ও জেএসসির মতো কোনো পাবলিক পরীক্ষার অস্তিত্ব নেই। একেবারে দশম শ্রেণিতে গিয়ে পাবলিক পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হবে। তখন থেকেই এসব পরীক্ষা স্থায়ীভাবে বাদ দিতে হবে। তবে সে সিদ্ধান্ত এখনই জানিয়ে দেওয়া উচিত। পাশাপাশি আগামী বছর বিদ্যালয়গুলোয় মূল্যায়নের তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা উচিত।
অবশ্য এ বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন আছে।
জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষা বোর্ডগুলো। জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন গতকাল রোববার বলেন, প্রথমত জেএসসি-জেডিসি পাবলিক পরীক্ষা নয়। এটি নির্বাহী আদেশে চালু হয়েছিল। এখনো এ পরীক্ষার বিষয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হবে পর্যায়ক্রমে। নতুন শিক্ষাক্রম অষ্টম শ্রেণিতে বাস্তবায়নের আগে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পরীক্ষামূলকভাবে দেখা হবে। তখন জেএসসি পরীক্ষার বিষয়ে বিবেচনা করা যাবে। কিন্তু এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
পিইসি পরীক্ষা হয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে। অধিদপ্তরের একটি সূত্রে জানা গেছে, এ বছর এই পরীক্ষা হবে কি না, সে বিষয়ে সরকারপ্রধানের কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানো হতে পারে। তখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। আর স্থায়ীভাবে এ পরীক্ষা বাদ হবে, নাকি থাকবে, সেটিও সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়।
২০০৯ সাল থেকে পিইসি পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে সরকার। পরে মাদ্রাসার সমমানের শিক্ষার্থীদের জন্য ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাও চালু করা হয়। প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থী এসব পরীক্ষায় অংশ নেয়। আর ২০১০ সালে জেএসসি–জেডিসি পরীক্ষা চালু হয়। এ পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ২৬ লাখের বেশি। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এসব পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে এবং বৃত্তির জন্য সব পরীক্ষার্থীই অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। এ ছাড়া ঝরে পড়াও কমছে।
কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এসব পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বেশি সমস্যা হচ্ছে। ২০১৫ সালে বেসরকারি সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযানের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, পিইসির প্রস্তুতির জন্য দেশের ৮৬ শতাংশের বেশি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোচিং করতে হয়। আবার ৭৮ শতাংশ সরকারি বিদ্যালয়ে এ পরীক্ষার জন্য কোচিং ছিল বাধ্যতামূলক।
এ ছাড়া এ পরীক্ষার জন্য প্রাইভেট পড়ার ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে, পাঠ্যবইকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে গাইড বই। এ পরীক্ষা ভালোর পরিবর্তে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য বাড়তি চাপ ও সমস্যা হিসেবে হাজির হয়েছে। এর পর থেকে এ পরীক্ষা না থাকার দাবিটি আরও জোরালো হয়। এ ছাড়া ২০১০ সালে করা জাতীয় শিক্ষানীতিতেও এখনকার মতো পিইসি পরীক্ষা নেওয়ার কথা নেই। প্রায় সর্বজনস্বীকৃত এ শিক্ষানীতিতে পঞ্চম শ্রেণি শেষে উপজেলা, পৌরসভা বা থানা পর্যায়ে সবার জন্য অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এখন পিইসি পরীক্ষা হয় কেন্দ্রীয়ভাবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে।
এখন করোনার কারণে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা নেওয়া যাচ্ছে না। আবার নতুন শিক্ষাক্রমেও এসব পরীক্ষার কথা না থাকায় এসব পরীক্ষা বাতিলের বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ বলেন, পিইসি পরীক্ষা বাদ দেওয়ার জন্য তাঁরা বারবার বলে আসছেন। কিন্তু কাজ হয়নি। এ কারণে মুখস্থনির্ভরতা ও কোচিং–বাণিজ্য বেড়েছে। এটি অবশ্যই পরিবর্তন হতে হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এ পরীক্ষা স্থায়ীভাবে বন্ধ করা উচিত। সে ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ে অন্য উপায়ে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়নের (ন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্ট) অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
Published From
Positive International Inc,
73-16, Roosevelt Ave Floor 2, Jackson Heights, New York 11372.
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us