ধোঁকা – প্রতারণা ইসলামে নিষিদ্ধ৷

প্রকাশিত: ৬:০০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২, ২০২১

ধোঁকা – প্রতারণা ইসলামে নিষিদ্ধ৷
booked.net

ধোঁকা দেওয়া কিংবা প্রতারণা করা ইসলামে নিষিদ্ধ। আদর্শ বিবর্জিত ইসলামে নিষিদ্ধ এ কাজটি দুনিয়ার প্রচলিত নিয়মেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

ইসলামি শরিয়তে ধোঁকা বা প্রতারণায় ৩টি মারাত্মক অপরাধ সংঘটিত হয়। এ কারণে ধোকাবাজ সম্পর্কে কঠিন ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বনবি। একাধিক হাদিসে তিনি বলেছেন- যে আমাদের ধোঁকা দেয় সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (মুসলিম)

২. অন্য হাদিসে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, ‘এরূপ করাও প্রতারণা যে- তোমরা ক্রেতাকে প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে দাম বাড়াবে না।’

৩. মানুষকে কেনা-বেচায় ধোঁকা দিতে নিষেধ করেছেন বিশ্বনবি। হাদিসে পাকে এসেছে-

‘বাজারে পৌঁছার আগেই (অল্প দামে) কেনার জন্য ব্যবসায়ী কাফেলার সঙ্গে সাক্ষাৎ (শলা-পরামর্শ) করবে না। পশুর স্তনে দুধ জমিয়ে রাখবে না এবং কেউ অন্যের পণ্য চালানোর জন্য প্রতারণার অপচেষ্টা করবে না।’ (তিরমিজি)

শুধু তা-ই নয়, বেচার সময় ওজনে কম দেওয়া এবং নেওয়ার সময় ওজনে বেশি নেওয়া দুনিয়া ও পরকালের জন্য মারাত্মক অপরাধ। এ সম্পর্কে কোরআনের সুস্পষ্ট ঘোষণা এসেছে-যারা মাপে কম করে, তাদের জন্যে দুর্ভোগ, যারা লোকের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, তখন পূর্ণ মাত্রায় নেয় এবং যখন লোকদেরকে মেপে দেয় কিংবা ওজন করে দেয়, তখন কম করে দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে। সেই মহা দিনে, যেদিন মানুষ দাঁড়াবে বিশ্ব পালনকর্তার সামনে। এটা কিছুতেই উচিত নয়, নিশ্চয়ই পাপাচারীদের আমলনামা সিজ্জিনে আছে।’ (সুরা মুতাফফিফিন : আয়াত ১-৭)

ধোঁকা-প্রতারণা এক মারাত্মক ব্যাধি। রাষ্ট্রীয় আইনেও এটি জঘন্য অপরাধ। দেশের প্রচলিত আইনে ৪১৫ ও ৪২০ ধারায় এ অপরাধ চিহ্নিত। এ ছাড়াও ৪০৬, ৪০৮ এবং ৪০৯ ধারায় বিশ্বাস ভঙ্গের অপরাধ দমন করা হয়। ধোঁকা-প্রতারণায় ৪২০ ধারায় সবচেয়ে বেশি মামলা হয়। এ আইনে যার শাস্তি সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদন্ড ও অর্থদন্ডের বিধান রয়েছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসব অপরাধে ১০ বছর পর্যন্ত কারদন্ড ও অর্থদন্ডের বিধান রয়েছে।

আর ইসলামি শরিয়তে ধোঁকা বা প্রতারণায় ৩ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে। যার প্রতিটি মারাত্মক অপরাধ বলে বিবেচিত। তাহলো-

১. হারাম

প্রথমত এটি নীতি বিবর্জিত হারাম কাজ হলো ধোঁকা বা প্রতারণা। হারাম ও অনৈতিক কাজ হওয়ার কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা দিয়েছেন-

مَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا

‘যে ব্যক্তি ধোঁকা দেয় বা প্রতারণা করে সে আমাদের (মুসলিমদের) অন্তর্ভূক্ত নয়।’ (মুসলিম)

২. হক্কুল ইবাদ নষ্ট

দ্বিতীয়ত অন্যায়ভাবে কারো ক্ষতি করা কিংবা প্রতারণার মাধ্যমে অন্যের সম্পদ গ্রাস করার কারণে এটি হক্কুল ইবাদ বা বান্দার অধিকার হরণের শামিল। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি অনেক ভয়ংকর অপরাধ। যে অপরাধ আল্লাহ ক্ষমা করবেন না।

যার হক নষ্ট করা হবে তার সঙ্গেই সমঝোতা করতে হবে। ধোঁকা-প্রতারণায় বান্দার হক নষ্ট করার যথাযথ সমাধানে ব্যর্থ হলে পরকালে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।

ফলে পরকালে বিচারের দিন মহান আল্লাহ ন্যায় বিচারের মাধ্যমে ধোঁকা বা প্রতারণাকারীর নেকিগুলো যার সঙ্গে ধোঁকা দেওয়া বা প্রতারণা করা হয়েছে তাকে দিয়ে দিতে হবে। এখানেই শেষ নয়- প্রতারিত ব্যক্তির গোনাহগুলো ধোঁকাবাজ-প্রতারকের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হবে।
সুতরাং ধোঁকাবাজ-প্রতারক হয়ে পড়বে আমলহীন-নিঃস্ব। অবশেষে প্রতারক ব্যক্তি জাহান্নামে নিক্ষেপিত হবে।

আর যদি প্রতারক বা ধোঁকা দেয়া ব্যক্তি দুনিয়ায় প্রতারণার সম্পদ ও সংঘটিত বিষয়ের সমাধান করে ক্ষমা প্রার্থনা করে তবে সে এ অপরাধ থেকে মুক্ত হবে। পরকালের এ ভয়াবহ অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে।

৩. শান্তি বিনষ্টকারী অপরাধ

তৃতীয়ত ধোঁকা-প্রতারণা প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন ও শান্তি বিনষ্টকারী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দেশের প্রচলিত আইনে ৪১৫ ও ৪২০ ধারায় এ অপরাধ চিহ্নিত। এ ছাড়াও ৪০৬, ৪০৮ এবং ৪০৯ ধারায় বিশ্বাস ভঙ্গের অপরাধ দমন করা হয়।

ধোঁকা-প্রতারণায় ৪২০ ধারায় সবচেয়ে বেশি মামলা হয়। রাষ্ট্রীয় আইনে যার শাস্তি সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসব অপরাধে ১০ বছর পর্যন্ত কারদন্ডের বিধান রয়েছে।

জনগণের জান ও মালের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্র ও সরকারের উপর অর্পিত। তাই রাষ্ট্রের কোনো নাগরিক যদি অন্য কোনো নাগরিকের সঙ্গে বস্তু, সম্পদ বা যে কোনো বিষয় নিয়ে ধোঁকা বা প্রতারণার আশ্রয় নেয় তবে ওই ব্যক্তির শান্তি, নিরাপত্তা ও সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে এ দুইটি ধারায় শাস্তি ও জরিমানার বিধান রেখেছে রাষ্ট্র।

প্রতারক বা ধোঁকা দেয়া ব্যক্তিকে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করে থাকে। সে কারণেই দুনিয়ার সব দেশেই ধোঁকা বা প্রতারণা ঠেকাতে জেল-জরিমানাসহ কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।

মনে রাখতে হবে

ধোঁকা বা প্রতরণার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ দিয়ে দান-সহযোগিতা, ধর্মীয় কাজ কুরবানি, মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ, জনসাধারণের জন্য রাস্তাঘাট-কালভার্ট নির্মাণ কোনোটিই বৈধ নয়। আর এতে সাওয়াবও মিলবে না।

কেননা দান-সহযোগিতা, সমাজ সংস্কারসহ জনকল্যাণমূলক কাজ কোনো ব্যক্তির জন্য আবশ্যক নয় বরং তা মোস্তাহাব বা নেকির কাজ। আর ইসলামে ধোঁকা ও প্রতারণা হারাম ও নিষিদ্ধ কাজ।

সে কারণে ধোঁকা ও প্রতারণায় অর্জিত সম্পদ ধর্মীয় যে কোনো কাজে ব্যবহারের যেমন কোনো নিয়ম নেই তেমনি দুনিয়ার কল্যাণমূলক কোনো কাজেও তা ব্যবহার যোগ্য নয়। আর তাতে সাওয়াব লাভেরও কোনো সুযোগ নেই।

হারাম কাজের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ দিয়ে মোস্তাহাব বা নেকির কাজের দিকে ধাবিত হওয়া কোনো মুমিন মুসলমানের কাজ হতে পারে না। বরং ধোঁকা ও প্রতারণার সব কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখা সাওয়াব ও নেকির কাজ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ধোঁকা বা প্রতারণার মতো জঘন্য নিষিদ্ধ ও দুনিয়ার শাস্তিযোগ্য কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। হাদিসের নির্দেশনা মোতাবেক ধোঁকা ও প্রতারণামুক্ত থেকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দলভূক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Ad