প্রকাশিত: ৮:২৭ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২২
স্বপন কুমার দেব রতনঃ- কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের মেধবী শিক্ষার্থী ঝর্ণা চৌধুরী। তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য আমেরিকায় পাড়ি দেন গত ২৬ ডিসেম্বর। ঝর্ণা অভিযোগ করেছেন, তাকে বিদেশ পাঠানোয় দেশে তার পরিবারকে সমাজচ্যুত করেছে স্থানীয় মসজিদ কমিটি। এই অভিযোগ লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে দিয়েছে ঝর্ণার পরিবার।ঝর্ণার বাবা আব্দুল হাই চৌধুরী সোমবার ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
তবে কুলাউড়া থানার ওসি বিনয় ভুষণ রায় মঙ্গলবার(০১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এ প্রতিবেদককে জানান, বিষয়টি জানার পর আমি ওই মসজিদ কমিটির লোকজন ও ভাটেরা ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ করেছি তার সমাজচ্যুত করার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তারা আমাকে(ওসি) বলেছেন আমরা বিষয়টি সম্পর্কে জানতে মেয়েটির বাবাকে ডেকে ছিলাম তিনি আসেননি।
ঝর্ণার বাবা আব্দুল হাই চৌধুরী ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগে বলেন, ঝর্ণা ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন সামাজিক কাজে যুক্ত ছিলেন। একটি সামাজিক সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কও ছিলেন তিনি। নারী অধিকার নিয়ে তিনি বিভিন্ন কর্মকান্ডে যুক্ত ছিলেন। এ কারণে এলাকার কিছু মানুষের বিরাগভাজন হন ঝর্ণা।
আব্দুল হাই জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝর্ণার নামে কুৎসা রটান কিছু লোক। এ ঘটনায় সিলেটের শাহপরাণ থানায় জিডিও করেছিলেন ঝর্ণা। পরে গত ২৬ ডিসেম্বর উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকা চলে যান।
অভিযোগে বলা হয়, আমেরিকায় অবস্থানরত ঝর্ণার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে এলাকায় নানা অপবাদ প্রচার করে একটি গোষ্ঠি। বলা হয়, ঝর্ণা নাস্তিক হয়ে গেছেন। এরপর স্থানীয় মসজিদ কমিটি সভা ডেকে আব্দুল হাইয়ের পরিবারকে সমাজচ্যুত করার ঘোষণা দেয়। এ ঘটনায় তিনি সামাজিকভাবে চাপে আছেন।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থেকে ঝর্ণা জানান, ‘গত ২৬ ডিসেম্বর আমি উচ্চ শিক্ষার জন্য আমেরিকায় আসি। ২৭ ডিসেম্বর থেকে স্থানীয় একটি মৌলবাদী গোষ্ঠি ফেসবুকে আমাকে নিয়ে কুৎসা রটাতে থাকে। বিদেশ গিয়ে ছোট কাপড় পরছি, নাস্তিক হয়ে গেছি, নানা কিছু গল্প তারা তাদের মতো বানাতে থাকে।
গত শুক্রবার স্থানীয় ভাটেরা বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটি আমার বাবা আব্দুল হাইকে সালিশ বৈঠক ডাকেন। গুরুতর অসুস্থ থাকায় বাবা যেতে পারেননি। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মাখন মিয়া ও সম্পাদক আমিন মিয়ার নির্দেশে আমার পরিবারকে এক ঘরে করে দেয়া হয়েছে।’
ঝর্ণা আরও বলেন, ‘অতি উৎসাহী কিছু মানুষ স্থানীয় মসজিদে আমাকে নিয়ে বিচার ডাকেন। আমার বাবাকে সেই বিচারে উপস্থিত হতে বলেন, কিন্তু ৭০ বছর বয়সী আমার বাবা ইতোমধ্যে তিনবার স্ট্রোক করেছেন। চিকিৎসক বিশ্রামে থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন।’
ঝর্ণা জানান, এ খবর পেয়ে তিনি মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি আমিন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি তাকে জিজ্ঞেস করি আমার বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ কী? জবাবে তিনি জানান, আমি আমেরিকায় এসে আমার এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বী একজনকে বিয়ে করেছি, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তাছাড়া আমার বাবা কেন তাদের নির্দেশ মানেননি, তাই আমার পরিবারকে এক ঘরে করে দেয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয় নিয়ে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এটি সমাধান হয়ে যাবে।’
কুলাউড়ার ইউএনও এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, ‘সামাজিকভাবে যেন কোনো ধরনের হয়রানি না করা হয়, তার জন্য অভিযোগ পাওয়ার পরেই আমি কমিটিকে সতর্ক করে দিয়েছি।’
‘সেই সঙ্গে তাদেরকে আমার অফিসে আসতে বলেছি। স্থানীয় চেয়ারম্যানকেও বলেছি বিষয়টি দেখে দিতে। ঝর্ণার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় থানাকেও অবগত করেছি। ঝর্ণার বাবার সঙ্গে আমি আলাপ করেছি। তিনিও আশ্বস্ত হয়েছেন।’
Published From
Positive International Inc,
73-16, Roosevelt Ave Floor 2, Jackson Heights, New York 11372.
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us