ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)।

প্রকাশিত: ৩:২১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৯, ২০২১

ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)।
booked.net
Manual4 Ad Code

ডেস্কঃ- রবিউল আউয়াল মাস। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ফিরে যাওয়ার মাস। প্রতি বছর এ মাসে মুসলিম উম্মাহ ক্ষণিকের জন্য হলেও ফিরে যায় প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্মৃতিবিজড়িত দিনগুলোয়। কারণ মাসটি যে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর মাস। বিশ্বনবির শুভাগমন উপলক্ষ্যে বিশ্বমানবতার আনন্দ-উৎসবের মাস।

১৪৪৩ হিজরির ১২ রবিউল আউয়াল হচ্ছে ২০ অক্টোবর (বুধবার)। দিনটি যথাযথযোগ্য মর্যাদায় দেশব্যাপী উদযাপন করা হবে। কেউ কেউ মাসব্যাপী প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম, বেড়ে ওঠা, নবুয়ত, হিজরত, রাষ্ট্রগঠন, ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, রাজনৈতিক জীবন, আন্তর্জাতিক জীবন, সমাজ সংস্কারসহ জন্ম থেকে ইন্তেকাল পর্যন্ত জীবনের বিভিন্ন দিক ও বিষয় নিয়ে সীরাতুন্নবি ও উসওয়াতুন্নবী শিরোনামে অনুষ্ঠান উদযাপন করবেন। এছাড়া কেউ কেউ মাজিউন্নবী আবার কেউ কেউ ৬৩দিন ব্যাপী ঈদে মিলাদুন্নবী শীর্ষক আলোচনা সভাও অব্যাহ রাখে। যা রবিউল আউয়াল মাসেই উদযাপন করা হয়।

প্রায় দেড় হাজার বছর আগে হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র নগরী মক্কার বিখ্যাত বনু হাশিম বংশে রবিউল আউয়াল মাসের দ্বিতীয় সোমবার (ফীলের বছর) দিনের রাতের মহাসন্ধিক্ষণ ‘সুবহে সাদেক’-এ শুভ জন্মগ্রহণ করেন। আবার একই দিনে তিনি ইন্তেকাল করলেও মুসলিম উম্মাহর কাছে এ দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে পরিচিত।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শুভ জন্মের দিন ও বছর নিয়ে হাদিসে পাকে আছে সুস্পষ্ট বক্তব্য। তিনি ইংরেজি পঞ্জিকার হিসেব মতে, ৫৭১ খ্রিস্টাব্দের ২০ অথবা ২২ এপ্রিল জন্ম গ্রহণ করেন।

বার ও জন্ম বৎসর নিয়ে হাদিসে সুস্পষ্ট বক্তব্য থাকলেও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুনির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কে হাদিসে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। এ কারণে পরবর্তী যুগের আলেম এবং ঐতিহাসিকগণ এ সম্পর্কে মতভেদ করেছেন।

প্রিয় নবীর জন্ম সম্পর্কে মা আমিনার কথা-

হজরত ইবনে সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যখন তাঁর জন্ম হয়েছিল তখন আমার শরীর থেকে এক জ্যোতি বের হয়েছিল; যাতে শামদেশের অট্টালিকাসমূহ আলোকিত হয়েছিল। ইমাম আহমাদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ইরবায বিন সারিয়া কর্তৃক অনুরূপ একটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। (মুখতাসারুস সিরাহ)

জগৎ আলো করে প্রিয় নবির শুভাগমনে কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনাও ঘটেছিল। যা ছিল নবুওয়তের পূর্বাভাস। তা ছিল-

* তাঁর শুভ জন্মের মুহূর্তে কিসরার প্রাসাদের চৌদ্দটি সৌধচূড়া ভেঙ্গে পড়ে;

Manual8 Ad Code

*প্রাচীন পারসিক ধর্ম যাজকমন্ডলীর উপাসনাগারগুলোতে যুগ যুগ ধরে প্রজ্জ্বলিত হয়ে আসা অগ্নিকুণ্ডগুলো নিভে যায়;

*বাহিরা পাদ্রীদের সরগম গীর্জাগুলো নিস্তেজ ও নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে। ইমাম বায়হাকি, তাবারি ও অন্যান্যরা তা উল্লেখ করেন।

আলেম-ওলামা এবং ঐতিহাসিকদের মতে ঈদে মিলাদুন্নবী-

বিশ্ববিখ্যাত সীরাত গ্রন্থসমূহের মধ্যে ‘আত-তানবির ফি মাওলিদিল বাশির আন নাযির’; ইবনে সাদ : আত-তাবাকাতুল কুবরা; ইবনে কাসির : আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া; ইবনে ইসহাক : সীরাতে ইবনে হিশাম; কাস্তালানিসহ ঐতিহাসিক সীরাত গ্রন্থের তথ্য ও বিবৃতি থেকে যা জানা যায়; তাহলো-

Manual3 Ad Code

১. ২য় হিজরির ঐতিহাসিক মুহাদ্দিস আবু মাশার নাজিহ এর মতে, তিনি রবিউল আউয়াল মাসের ২ তারিখ (প্রথম সোমবার) পৃথিবীতে শুভাগমন করেন।

২. হজরত ইবনে আব্বাস এবং যুবাইর ইবনে মুতইম রাদিয়াল্লাহু আনহুমা সাহাবাদ্বয় বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রবিউল আউয়াল মাসের ৮ তারিখ জন্মগ্রহণ করেন। মুহাম্মদ ইবনে যুবাইর ইবনে মুতইম, আল্লামা কাস্তালানি ও যারকানির বর্ণনার এ মতটি অধিকাংশ মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকগণ গ্রহণ করেছেন। মিলাদের ওপর প্রথম গ্রন্থ রচনাকারী আল্লামা আবুল খাত্তাব ইবনে দেহিয়া (৬৩৩হি.) তার রচিত ‘আত-তানবির ফি মাওলিদিল বাশির আন নাজির’ গ্রন্থেও এ মতটিকে গ্রহণ করেছেন।

৩. তারিখে খুযরি ও রাহমাতুল্লিল আলামীন গ্রন্থদ্বয়ে ৯ রবিউল আউয়াল (ফিলের বছর) সোমবার দিন-রাতের মহাসন্ধিক্ষণে সুবহে সাদেকের সময় জন্মগ্রহণ করেন।

৪. হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর পৌত্র মুহাম্মদ ইবনে আলি আল বাকের (১১৪হি.) ও মুহাদ্দিস আমির ইবনে শারাহিল আশ-শাবি (১০৪হি.) বর্ণনায় তিনি ১০ রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেন।

Manual2 Ad Code

৫. হিজরি ২য় শতাব্দির প্রখ্যাত ঐতিহাসিক মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক-এর (১৫১হি.) বণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ শুভাগমন করেন।

উল্লেখ্য, ইবনে ইসহাক রচিত সীরাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের সব বিষয়গুলো সাধারণত সনদসহ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এ তথ্যটির কোনো সনদ তিনি উল্লেখ করেননি।

৬. হিজরি ৩য় শতকের ঐতিহাসিক যুবাইর ইবনে বাক্কার (২৫৬হি.)-এর মতে, তিনি রমজান মাসে জন্ম গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, যেহেতু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪০ বৎসর বয়সে রমজান মাসে নবুয়্যতপ্রাপ্ত হন, সেহেতু তিনি অবশ্যই রমজান মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন।

Manual3 Ad Code

৭. কারো কারো মতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মহররম, সফর, রবিউস সানি, রজব মাসে জন্ম গ্রহণ করেছেন মর্মে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন।

সর্বোপরি উপমহাদেশের সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমান রবিউল আউয়াল মাস এবং ১২ তারিখকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মমাস ও দিন হিসেবে জানে এবং সর্বাধিক সনদে রচিত রাসুলের জীবনীগ্রন্থ প্রণেতা ইবনে ইসহাক রবিউল আউয়াল মাস এবং ১২ তারিখকে ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে উল্লেখ করেছেন, সে হিসেবে এ উপমহাদেশের অধিকাংশ মুমিন মুসলমান ১২ রবিউল আউয়ালকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম তারিখ হিসেবে জানেন।

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম তারিখ ও মাস নিয়ে মতভেদ থাকলেও তিনি সোমবার সুবহে সাদেকে জন্ম গ্রহণ করেছেন এটি চিরন্তন সত্য। এ ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নেই। তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিক ও বিশ্লেষকদের মতে তিনি রবিউল আউয়াল মাসে জন্ম গ্রহণ করেছেন মর্মে তাদের মতামত তুলে ধরেন।

সুতরাং রবিউল আউয়াল মাস মুসলিম উম্মাহর জন্য এক মহান মাস। এ মাসের একটি দিন প্রিয় নবির জন্ম উৎসবে আনন্দ নয় বরং মাসজুড়ে প্রিয় নবির আদর্শে নিজেদের রঙিন করে বছরজুড়ে সুন্নাতের আলোকে জীবন পরিচালনার উৎস হোক পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী।

ঈদে মিলাদুন্নবীর মাস, তারিখ নিয়ে যতই মতভেদ থাকুক না কেন; প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শুভাগমন থেকে ইন্তেকাল পর্যন্ত পুরো জীবন হোক মুসলিম উম্মাহর জন্য আদর্শ।

আল্লাহ তাআলা বিশ্ব মানবতার সব ধর্ম বর্ণ গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবার জন্য প্রিয় নবির আদর্শ হৃদয়ে ধারণ করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর পুরোপুরি অনুসরণ, অনুকরণ এবং বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অটুট বন্ধন বজায় রাখার তাওফিক দান করুন। প্রতিটি মানুষের হৃদয়কে রহমত দিয়ে ঢেকে দিন। আমিন।

Ad

Follow for More!