অবৈধ আয়ের অর্থ দান করলেও ‘পাপ’ মোছে না।

প্রকাশিত: ১২:৫৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৪, ২০২২

অবৈধ আয়ের অর্থ দান করলেও ‘পাপ’ মোছে না।
booked.net
Manual6 Ad Code

ডেস্কঃ- শরিয়তে সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান বিষয় হলো ঈমান-আকিদা। এরপর যথাক্রমে ইবাদত, মুআমালাত ও মুআশারাতের স্থান। তবে সব  কটি বিষয় পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত। যেমন—রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যার আমানতদারি নেই, তার ঈমান নেই। যার প্রতিশ্রুতি ঠিক নেই, তার দ্বিন নেই। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১২৩৮৩)।

লেনদেনে পরিচ্ছন্ন হওয়ার গুরুত্ব : শরিয়ত যাবতীয় হক বা অধিকারকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। এক. আল্লাহর হক। দুই. বান্দা বা মানুষের হক। আল্লাহর হকের ক্ষেত্রে যদি বান্দার কোনো ত্রুটি হয়ে যায় আর সে যদি তাওবা করে নেয় অথবা ক্ষেত্রবিশেষে তাওবা ছাড়াও আল্লাহর ইচ্ছা হলে সে ক্ষমা পেতে পারে। কিন্তু বান্দার হকের ব্যাপারে কেউ ত্রুটি করলে সেটা আল্লাহ ক্ষমা করেন না, যতক্ষণ না অপরাধী নিজেই হকদারের সঙ্গে লেনদেন পরিষ্কার করে নেয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা মাপে কম দেয়। যারা মানুষের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, পূর্ণমাত্রায় নেয়। আর যখন অন্যকে মেপে বা ওজন করে দেয়, তখন কমিয়ে দেয়। তারা কি চিন্তা করে না, তাদের এক মহাদিবসে জীবিত করে ওঠানো হবে? যেদিন সব মানুষকে বিশ্বজাহানের রবের সামনে দাঁড়াতে হবে।’ (সুরা মুতাফফিফিন, আয়াত : ১-৬)।

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা পরস্পর একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস কোরো না। তবে পারস্পরিক সম্মতিক্রমে কোনো ব্যবসা করা হলে (তা বৈধ)।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ২৯)।

Manual7 Ad Code

অঙ্গীকার রক্ষা লেনদেনের প্রধান স্তম্ভ : লেনদেনের প্রধান স্তম্ভ অঙ্গীকার রক্ষা করা। আল্লাহ অঙ্গীকার রক্ষা করাকে মুমিনের বৈশিষ্ট্য আখ্যা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং যারা তাদের সাক্ষ্য যথাযথভাবে দান করে।’ (সুরা মাআরিজ, আয়াত : ৩২-৩৩)।

অস্বচ্ছ লেনদেনের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি : নবীজি (সা.) অস্বচ্ছ লেনদেন ও অবিচারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যে ব্যক্তি তার কোনো ভাইয়ের সম্মানহানির মাধ্যমে বা অন্য কোনোভাবে তার ওপর জুলুম করেছে। সে যেন আজই তার সঙ্গে লেনদেন পরিষ্কার করে নেয়—ওই দিন আসার আগে, যেদিন তার কাছে কোনো দিনার-দিরহাম (টাকা-পয়সা) থাকবে না। সেদিন যদি তার কাছে কোনো নেক আমল থাকে, তাহলে তার জুলুম পরিমাণ সেখান থেকে নিয়ে নেওয়া হবে। আর যদি কোনো নেক আমল না থাকে, তাহলে যার ওপর অবিচার করেছে তার পাপের বোঝা জুলুম অনুযায়ী তার ঘাড়ে চাপানো হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৪৪৯)।

Manual1 Ad Code

অন্য হাদিসে এসেছে, কিয়ামতের ময়দানে কোনো বান্দা তার এক পাও নড়াতে পারবে না, যতক্ষণ না তাকে পাঁচটি প্রশ্ন করা হবে—১. সে তার জীবন কোন পথে শেষ করেছে, ২. যতটুকু দ্বিনি জ্ঞান অর্জন করেছে তার ওপর কতটুকু আমল করেছে, ৩. সম্পদ কোন পথে আয় করেছে, ৪. কোন পথে ব্যয় করেছে, ৫. নিজের যৌবনকে কোন পথে শেষ করেছে। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৭)।

অবৈধ আয়ের চেয়ে নিঃস্ব জীবন ভালো : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ওই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ মানুষের কাছে হাত পাতার চেয়ে উত্তম হলো সে তার রশি নিয়ে পাহাড়ে যাবে এবং কাঠ সংগ্রহ করবে। অতঃপর তা পিঠে বহন করে এনে বিক্রি করবে এবং আহারের ব্যবস্থা করবে। আর তোমাদের কেউ হারাম খাওয়ার চেয়ে উত্তম হলো নিজের মুখে মাটি ভরা। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৭৪৯০)।

দানে অবৈধ আয়ের পাপ মোছে না : সমাজের বহু মানুষ অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে এবং একই সঙ্গে তারা দান করে। এমন ব্যক্তির দান গ্রহণযোগ্য নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ পবিত্রতা ছাড়া নামাজ কবুল করেন না এবং আত্মসাতের সম্পদ থেকে দান করলে কবুল করেন না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ২২৪)।

হারাম উপার্জনে পুষ্ট শরীর জান্নাতে যাবে না : জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, এমন শরীর কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যা হারাম দ্বারা বর্ধিত। জাহান্নামই তার উপযুক্ত স্থান। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৪৪৪১)।

Manual4 Ad Code

স্বচ্ছতা ও সততার পুরস্কার জান্নাত : কেউ যদি স্বচ্ছতা ও সততার সঙ্গে লেনদেন করে, তবে আল্লাহ তাকে পরকালে মর্যাদাপূর্ণ স্থান দান করবেন। ইরশাদ হয়েছে, সত্যবাদী বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সঙ্গে থাকবে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১২০৯) আল্লাহ সবাইকে আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা অর্জনের তাওফিক দিন। আমিন।

Manual2 Ad Code

Ad

Follow for More!