প্রকাশিত: ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১১, ২০২৪
ধর্ম ডেস্ক:-মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব। মহান আল্লাহ নিজ কুদরতি হাতে সৃষ্টি করেছেন মানুষকে। তাই মানুষের প্রাণের অনেক মর্যাদা। এই প্রাণ বিনাশ করার অধিকার কারো নেই। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ যে প্রাণ হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করো না।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ৩৩)
নিরাপত্তার সঙ্গে বাাঁচার নিশ্চয়তা দেয় ইসলাম। মানুষ মানুষকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসবে। এর মাধ্যমে সে পুরো মানবজাতীকে প্রাণে বাঁচানোর সওয়াব পাবে। আর অন্যায়ভাবে একজন মানুষ হত্যা করা বিশ্ব মানবতাকে হত্যা করার মতো অপরাধ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষ হত্যা অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে (অন্যায়ভাবে) হত্যা করলে সে যেন পৃথিবীর গোটা মানবজাতিকে হত্যা করল। আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবজাতিকে রক্ষা করল।’ (সুরা মায়েদা: ৩২)
রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন প্রথম বিচার অনুষ্ঠিত হবে মানুষের রক্তক্ষরণ তথা হত্যার ব্যাপারে। (বুখারি: ৬৮৬৪, মুসলিম: ১৬৭৮)
শিশু হত্যা আরও কঠিন অপরাধ। কেননা শিশুরা এমনিতেই নিষ্পাপ। তার ওপর তারা বাড়তি নিরাপত্তা, যত্ন ও মমতা পাওয়ার হকদার। এজন্য রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ছোটকে স্নেহ করে না সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ: ৪৯৪৩) হাদিস থেকে জানা যায়, শিশুর সঙ্গে স্নেহশীল আচরণ না করায় মহানবী (স.) এক পিতাকে ভর্ৎসনা করেন। রাসুলুল্লাহ (স.) উম্মতকে শিশুদের প্রহার ও বকাঝকার পরিবর্তে উত্তম আচরণ ও শিক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি নিজেও এই নীতি অনুসরণ করতেন। হজরত আনাস (রা.) তাঁর শৈশবের দীর্ঘ ১০ বছর রাসুল (স.)-এর সেবায় কাটিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য হলো, “আমার কোনো কাজে আপত্তি করে তিনি কখনো বলেননি ‘এমন কেন করলে বা এমন কেন করলে না’।” (মুসলিম: ২৩০)
ইসলামি আইনে অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যার শস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড। এই শাস্তি দুনিয়ায় কার্যকর করা জরুরি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা! নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাসের (মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার) বিধান দেওয়া হয়েছে…।’ (সুরা বাকারা: ১৭৮)
এই কঠোর শাস্তির মধ্যে নিহিত আছে সমাজ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা! কিসাসের মধ্যে তোমাদের জন্য আছে জীবন, যাতে তোমরা সাবধান হতে পারো।’ (সুরা বাকারা: ১৭৯)
কিসাস বলতে বোঝানো হয়- প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং সব রকমের জখমের জন্য সমপর্যায়ের বদলা। (সুরা মায়েদা: ৪৫)
তবে যদি ভিক্টিমের প্রতিনিধি ক্ষমা করে দেয় বা শাস্তি কিছুটা হ্রাস করে দেয়, তাহলে অপরাধী কোনো রকম কার্পণ্য ছাড়াই ‘দিয়াত’ (রক্তপণ/ক্ষতিপূরণ) প্রদান করবে। (সুরা বাকারা: ১৭৮)
দিয়াত বা ক্ষতিপূরণ হলো- ১০০ উট আর মুদ্রার মাধ্যমে দিলে (হানাফি মাজহাব মতে) ১০ হাজার দিরহাম (এক দিরহাম সমান ২.৯৭৫ গ্রাম রুপা) অথবা এক হাজার দিনার (এক দিনার সমান ৪.২৫ গ্রাম স্বর্ণ) বা তার মূল্যমান দ্রব্য কিংবা অর্থ প্রদান করতে হবে। (হিদায়া: ৪/৪৬০; রাওয়াইয়ুল বয়ান ফি তাফসিরি আয়াতিল আহকাম, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা-৩৬০; ফাতহুল কাদির: ৮/৩০৪)
উল্লেখ্য যে, রৌপ্য মুদ্রার ক্ষেত্রে হানাফি মাজহাব ছাড়া বাকি তিন মাজহাব মতে, ১২ হাজার দিরহাম পরিশোধ করতে হবে। ২০০ গরু বা দুই হাজার বকরি বা তার মূল্য দিয়েও দিয়াত আদায় করা যায়। (আল-মুগনি: ১২/৬-৮)
এই ক্ষতিপূরণ দিতে অপরাধী অসমর্থ হলে অভিভাবক বা নিজ সম্প্রদায় তা বহন করবে। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক: ১৫৬৯) হত্যাকারীর পরিবার এই ক্ষতিপূরণ দিতে ব্যর্থ হলে ইসলামি সরকার তা বহন করবে। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক: ১৫৫৮)
তবে, ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বল প্রয়োগ ছাড়া ক্ষমা করে দেওয়া হয়, তাহলে শুধু এই ক্ষমা করে দেওয়া গ্রহণযোগ্য হবে। (সুরা নিসা: ৯২; সুরা : আলে ইমরান: ১৩৪)
ইসলামী রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও তার দায়িত্বশীলদের দায়িত্ব হলো, আইনের শাসন কায়েম করা। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘ইসলামি দণ্ডবিধি প্রয়োগ করা ছাড়া সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ (যার নির্দেশ কোরআনে দেওয়া হয়েছে) পূর্ণতা লাভ করে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ শাসকের মাধ্যমে সেসব বিষয় সংশোধন করেন, যা কোরআনের মাধ্যমে করেন না। ইসলামি দণ্ডবিধি যথাযথভাবে প্রয়োগ করা মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব তখনই পালন করা হয় যখন করণীয় কাজ ত্যাগ এবং বর্জনীয় কাজে লিপ্ত হওয়ার কারণে শাস্তি দেওয়া হয়।’ (আল-হিসবাহ, পৃষ্ঠা-৪৫)
পরকালেও রয়েছে নিরপরাধ মানুষ হত্যার কঠিন শাস্তি। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, যেখানে সে স্থায়ী হবে এবং তার প্রতি আল্লাহর গজব ও অভিশাপ এবং তিনি তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রাখবেন।’ (সুরা নিসা: ৯৩)
অন্যায় হত্যাকাণ্ডের বিচার পরকালে কেমন হবে, তার কিঞ্চিৎ ধারণা হাদিসে দিয়েছেন মহানবী (স.)। তিনি বলেন, ‘হত্যাকৃত ব্যক্তি হত্যাকারীকে সঙ্গে নিয়ে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার সামনে উপস্থিত হবে। হত্যাকৃত ব্যক্তির মাথা তার হাতেই থাকবে। শিরাগুলো থেকে তখন রক্ত পড়বে। সে আল্লাহ তাআলাকে উদ্দেশ্য করে বলবে—হে আমার রব, এই ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে। এমনকি সে হত্যাকারীকে আরশের খুব কাছে নিয়ে যাবে।’ শ্রোতারা এই হাদিসের বর্ণনাকারী সাহাবি হজরত ইবনে আব্বাস (রা.)-কে ওই হত্যাকারীর তওবা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ওপরে উল্লিখিত সুরা নিসার ৯৩ নম্বর আয়াতটি তেলাওয়াত করে বললেন, ‘এই আয়াত রহিত হয়নি। পরিবর্তনও হয়নি। অতএব তার তওবা কোনো কাজেই আসবে না।’ (তিরমিজি: ৩০২৯)
Published From
Positive International Inc,
73-16, Roosevelt Ave Floor 2, Jackson Heights, New York 11372.
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us