ফের পানি বাড়ায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যার আশঙ্কা। দুর্ভোগে বানভাসীরা।

প্রকাশিত: ৯:১৬ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৩, ২০২৪

ফের পানি বাড়ায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যার আশঙ্কা। দুর্ভোগে বানভাসীরা।
booked.net

আব্দুল কুদ্দুস:- প্রথম দফার বন্যার পানি নামার আগে ফের ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে হাকালুকি হাওর, মনু ও জুড়ী নদীর পানি বাড়ছে। আশ্রিত মানুষের এখনও ঘরে ফেরা হয়নি। এর আগে পানি বাড়তে থাকায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যার আশঙ্কা করছেন কুলাউড়ার পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ। অন্যদিকে গবাদিপশু নিয়েও পড়েছেন দুর্ভোগে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো পানিবন্দি থাকায় শিক্ষার্থীরা সেখানে যেতে পারছেনা। এতে করে তাদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটছে। সরেজমিনে দেখা গেছে উপজেলার বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজেরও বিঘ্ন ঘটছে। কর্মকর্তারা ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না। গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য মানুষেরও ভিড় নেই খুব একটা বেশি।

 

উপজেলা কৃষি অফিস, নির্বাচন, সাবরেজিস্টার, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, সমবায়, জনস্বাস্থ্য, পল্লী উন্নয়ন অফিস পানিবন্দি। তাছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়স্থ পুরো ভবন পানিবন্দি। এখানকার আবাসিক এলাকার রাস্তায় হাঁটু সমান পানি। কেউ কোন যানবাহন নিয়ে চলাচল করতে পারছে না। ফলে মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই।

 

এদিকে গত ২ সপ্তাহের অধিক সময় ধরে বন্যার পানিতে সরকারি হাসপাতাল প্রাঙ্গণ ও উপজেলা প্রশাসনিক অফিসের আশেপাশের আবাসিক এলাকা নিমজ্জিত থাকায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও সরকারি দাপ্তরিক কার্যক্রমে চরম ব্যাঘাত ঘটছে। পানিবন্দি থেকে চিকিৎসা সেবা ও উপজেলা প্রশাসনিক কাজ-কর্ম করছেন বিভিন্ন দাপ্তরিক কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা। এতে সরকারি অফিস ও হাসপাতালের সেবা গ্রহীতাদের চরম ভোগান্তি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত শুক্র ও শনিবারে বৃষ্টিপাত হলেও হাকালুকি হাওরসহ নদ নদীর পানি কমা শুরু করেছিল। কিন্তু রবি থেকে মঙ্গলবার ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে হাকালুকি হাওরসহ জেলার বিভিন্ন নদ নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে।

 

১৭ জুন থেকে এখনও হাকালুকি হাওরের বন্যার পানিতে কুলাউড়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৪টি ওয়ার্ডের ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সড়ক পানির নিচে ডুবে আছে। ২৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ২ হাজার ৬৩ জন মানুষ ও উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এখানকার মানুষের বাসাবাড়ি সহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে ডুবে আছে। এতে করে এখনও স্বাভাবিক হয়নি মানুষের দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থা। বন্যার শুরু থেকে জনপ্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকেই বন্যার্তদের পাশে রয়েছেন ত্রাণ নিয়ে।

 

এদিকে বন্যার পানি কিছুটা নামতে শুরু করায় হাওর, নদী তীরবর্তী বিভিন্ন গ্রামের ঘরবাড়ি ছাড়া মানুষ নিজ ভিটে ফিরতে শুরু করলেও গত দুই দিন ধরে ফের পানিবৃদ্ধি পাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রে ফিরছেন বানবাসী লোকজন। এলাকাবাসী জানায়, হাকালুকি হাওর তীরবর্তী কুলাউড়া উপজেলায় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। জেলার নদী তীরবর্তী বন্যাকবলিত অন্যান্য এলাকায় কিছুটা উন্নতি হলেও অনেকটাই অপরিবর্তিত রয়েছে হাকালুকি হাওর তীরবর্তী এলাকা। চলমান পরিস্থিতিতে রান্না করা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন, পানিবাহিত রোগবালাই ও গবাদিপশুর খাবার ও বাসস্থান সংকটে চরম দুর্ভোগে বানভাসিরা।

 

কুলাউড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ শিমুল আলী বলেন, বন্যায় যাদের বাড়িঘরে পানি উঠেছে তাদেরকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে রয়েছে প্রশাসন। উপজেলা পরিদ প্রাঙ্গণ প্লাবিত থাকায় আমরা নিজেরা পানি বন্দি থেকে সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। কুলাউড়ায় ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা মিলে প্লাবিত গ্রামের সংখ্যা ১১৬টি। ২৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ হাজার ৬৩ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। সরকারিভাবে নগদ ২ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে ৬২০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ক্ষতি গ্রস্থদের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে।

 

কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ জানান, পৌরসভার ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ ও খাবার সহায়তা প্রদান করা হয়েছে ।

 

ছবিঃ- কুলাউড়া নির্বাচন অফিস।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Ad

Follow for More!