রোজার আমল ও কয়েকটি দোয়া।

প্রকাশিত: ৮:৫৭ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২৮, ২০২৩

রোজার আমল ও কয়েকটি দোয়া।
booked.net

Manual8 Ad Code

রোজার প্রথম আমল হলো রোজা রাখার নিয়ত করা। হাদিসে বলা হয়েছে : ফজরের আগে রোজা রাখার নিয়ত না করলে রোজা হয় না (সুনানে নাসায়ি, হাদিস নম্বর : ২৩৪১)।

বোঝা যাচ্ছে, রোজা একটি সচেতন প্রয়াস, অভ্যাসবশত করে বসা কোনো আমল নয়। রোজা পালন করতে হয় অনুভূতি সজাগ রেখে, অমনোযোগী বা অচেতনভাবে নয়। একই কথা ধর্মের ক্ষেত্রেও, ধর্ম সর্বাংশে সচেতন অনুভূতির সঙ্গে সম্পর্ক রাখে। সেই ব্যক্তিই প্রকৃত ধার্মিক যিনি সচেতন অনুভূতি সহকারে ধর্মীয় নির্দেশনা মেনে চলেন।

রোজাদার কে সুবহে সাদিকের আগে খাবার খেয়ে নিতে হয়, একে আরবিতে বলা হয় ‘সেহরি’।

হাদিসে বলা হয়েছে: তোমরা সেহরি খাও, কারণ সেহরিতে বরকত রয়েছে (সহি বুখারি, হাদিস নম্বর : ১৯২৩)।

ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রা.) নামের একজন সাহাবি বলেন যে, আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাকে সেহরি খেতে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, ‘এসো, বরকতময় খাবার খাও।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস নম্বর: ২৩৪৪)।

Manual2 Ad Code

আরও একজন সাহাবি বলেন, রমজান মাসে ফজরের আগে আমি রাসুল (সা.)-এর কাছে যখন গেলাম, তখন তিনি সেহরির খাবার খাচ্ছিলেন। তিনি আমাকে বলেন : সেহরি হচ্ছে বরকত, যা আল্লাহ তোমাদের দান করেছেন। এটাকে ছেড়ে দিয়ো না।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস নম্বর : ২১৬২)।

Manual7 Ad Code

ফজরের আগে সেহরি খাওয়া আসলে এই কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া যে, আল্লাহ যখন কোনো কঠিন কাজের নির্দেশ দেন, তখন একই সঙ্গে ব্যক্তির জন্য কাজটি সহজে সম্পাদনের পথও বলে দেন। তিনি রোজার নির্দেশ দিলে সঙ্গে সেহরির নির্দেশও দেন। ধর্ম প্রচারের নির্দেশ দিলে প্রচারিতের (মাদুউর) মোকাবিলায় প্রচারকের (দা’য়ির) সুরক্ষার দায়িত্বও তিনি গ্রহণ করেন।

আল্লাহর দেওয়া নির্দেশে বাহ্যিক কষ্ট বা কাঠিন্য দেখা গেলে, ঈমানদারদের তার ওপর নির্ভরের পথ বেছে নিয়ে অগ্রসর হওয়া উচিত। কারণ আল্লাহ শুধু হুকুম দেন না, বরং নিজের হুকুমের চাহিদাও তিনি পূর্ণ করেন। তিনি মানুষকে পরীক্ষায় ফেলেন, আবার উদ্ধারও করেন। তিনি পরীক্ষার সঙ্গে মানুষকে সাহায্যের ব্যবস্থাও করেন।

সেহরি বা অন্যভাবে বললে শেষ খাবার খেয়ে ঈমানদার ব্যক্তিরা তাদের দিন শুরু করেন। দৈনন্দিন যে সমস্ত কাজকর্ম রোজাহীন অবস্থায় করতেন, একই কাজ এবার তিনি রোজারত অবস্থায় করেন। ফলে তার সমস্ত কাজে নতুন এক প্রাণ আসে।

তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, কুরআন পাঠ করেন, আল্লাহকে স্মরণ করেন, মানুষের সঙ্গে নানারকম লেনদেন করেন। বাহ্যিকভাবে সমস্ত কাজই যথানিয়মে হয়; কিন্তু আত্মিকভাবে এখন তার সমস্ত কাজ এক নতুন অনুভূতির সঙ্গে সাধিত হয়। আগে যে সমস্ত কাজ দৈনন্দিন রুটিন হিসেবে করা হতো, এবার তাতে এক নতুন প্রাণ সঞ্চার হয়। আগে যে সমস্ত কাজ নিরসভাবে করা হতো এবার সে সমস্ত কাজ মনোযোগের সঙ্গে হতে থাকে। রোজা একজন ঈমানদার ব্যক্তির সাধারণ কাজকে অসাধারণ করে তোলে।

এভাবেই একজন ঈমানদার ব্যক্তি তার সময় কাটাতে থাকেন। সন্ধ্যা হয়, ইফতারের সময় আসে। এবার আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করে তিনি খাদ্য ও পানীয় মুখে নেন। যে আল্লাহর নির্দেশে খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছিলেন, এবার তিনি আল্লাহর নির্দেশেই খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করে নিজেকে সফলকাম করে তোলেন।

এই পর্যায়ে রাসুল (সা.) থেকে বর্ণিত কিছু দোয়া পড়া ঈমানদার ব্যক্তির জন্য বিশেষ উপকারী। হাদিসে বলা হয়েছে: সারাদিন রোজা রাখার পর সন্ধ্যায় নবী (সা) যখন ইফতার করতেন তখন এসব দোয়া পড়তেন।

কয়েকটি দোয়া: আলহামদুলিল্লা হিল্লাজি আয়া নানি ফা ছুমতু ওয়া রযাকানি ফাআফ তারতু।

অর্থাৎ কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি সাহায্য করায় আমি রোজা রেখেছি এবং রিজিক দান করায় ইফতার করেছি। (শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নম্বর : ৩৬১৯)

আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযকিকা আফতারতু।

অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমি তোমার জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমার দেওয়া খাদ্য দিয়ে ইফতার করেছি। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নম্বর: ২৩৫৮)

Manual2 Ad Code

আলহামদুলিল্লাহি যাহাবাজ্জামায়ু ওয়াবতাল্লাতিল উরুকু ওয়া ছাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ।

অর্থাৎ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, তৃষ্ণা মিটেছে, শিরা-উপশিরা সিক্ত হয়েছে, আর আল্লাহ যদি চান প্রতিদান নিশ্চিত হয়েছে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নম্বর: ২৩৫৭)।

দোয়ার এই শব্দগুলো রোজার আসল সারমর্মকে বোঝার জন্য বেশ সহায়ক। এই দোয়াগুলো মূলত রোজা রাখার কারণে বান্দার ভেতর যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তার বহিঃপ্রকাশ।

Manual3 Ad Code

আল্লাহর একজন বান্দা আল্লাহর জন্য সারাদিন ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় থাকেন, তার পর সন্ধ্যায় খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করার মাধ্যমে যখন নিজের ক্ষুধা ও তৃষ্ণা মেটান তখন তার হৃদয়ে আপন প্রতিপালকের জন্য যে অবস্থার সৃষ্টি হয়, তা এই ধরনের শব্দের মাধ্যমেই প্রকাশ করা যেতে পারে, যার একটি নমুনা এই দোয়াগুলোতে দেখা যায়।

Ad

Follow for More!