প্রকাশিত: ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩
অনলাইন ডেস্কঃ- মুমিনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ ঈমান। অসৎকাজের কারণে এই সম্পদ দুর্বল হয়ে যায়। ফলে ইবাদতে অবহেলা ও অলসতা তৈরি হয়। এভাবে ধন-সম্পদ, প্রভাব-প্রতিপত্তি, সামাজিক অবস্থান ইত্যাদির পেছনে সারাক্ষণ ছুটে চলা, শরিয়াহবিরোধী কাজে লিপ্ত হওয়ার পরও মনে অনুশোচনা বোধ না হওয়া—এক পর্যায়ে অন্তর পাথরের মতো কঠিন হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর এ ঘটনার পরে তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেছে, তা পাথরের মতো অথবা তদপেক্ষাও কঠিন’। (সুরা বাকারা: ৭৪)
আর মজবুত ঈমান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তুমি বলো- আমি আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছি, অতঃপর তার ওপর অবিচল থাকো’। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় যারা বলে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে—তোমরা ভয় করো না, চিন্তা করো না এবং তোমাদের প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ শোনো’। (সুরা ফুসসিলাত: ৩০)
ঈমানকে তাজা ও শক্তিশালী রাখার জন্য সবসময় নেক আমল করতেন সালাফরা। মুসলিম উম্মাহকেও তাদের অনুসরণ করা উচিত, যাতে মূল্যবান সম্পদে মরিচা না ধরে। ঈমানের দুর্বলতা কাটানোর কয়েকটি সুন্নাহ ভিত্তিক আমল এখানে উল্লেখ করা হলো-
১. এমন লোকদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে, যাদের সংস্পর্শে গেলে আমল বেড়ে যায়। ‘হে ঈমানদাররা, আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো। (সুরা তাওবা: ১১৯)
২. কোরআন তিলাওয়াত করা, শোনা এবং চিন্তা-গবেষণা করা দুর্বল ঈমানের উত্তম চিকিৎসা। এ মর্মে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘…আর যখন তাদের সামনে তাঁর (আল্লাহর) আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায়..। (সুরা আনফাল: ২)
৩.বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করা। দুর্বল ঈমানের সুস্থতা ফিরিয়ে আনতে জিকির খুবই উপকারী। আল্লাহর জিকির অন্তরে ঈমানের বীজ বপন করে। মুমিনের অন্তর জিকিরের মাধ্যমে প্রশান্ত হয়। ‘যারা ঈমানদার এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে। জেনে রেখো, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়। (সুরা রাদ: ২৮)
৪. সীরাত ও সাহাবায়ে কেরামের জীবনী পড়া। কেননা মহানবী (স.) ও সাহাবায়ে কেরামের অন্তর প্রশান্ত করার জন্য পবিত্র কোরআনে পূর্ববর্তী নবীদের ঘটনা বর্ণনা করেছেন মহান আল্লাহ। আর তিনি সাহাবায়ে কেরামের ঈমানকে আমাদের ঈমানের জন্য আদর্শ বানিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করো, তোমাদের জন্য তাদের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার জানা উচিত যে, আল্লাহ অভাবমুক্ত ও প্রশংসিত।’ (সুরা মুমতাহিনা: ৬)
৫.ভালোবাসা বা ঘৃণা সব কিছু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, যে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, আল্লাহর জন্য ঘৃণা করে, আল্লাহর জন্য প্রদান করে এবং আল্লাহর জন্য প্রদান থেকে বিরত থাকে, সে ঈমান পরিপূর্ণ করেছে। (আবু দাউদ: ৪৬৮১)
৬. আল্লাহর নিদর্শন ও নেয়ামতগুলো নিয়ে সবসময় গভীর চিন্তাভাবনা করা। ‘নিশ্চয়ই আসমান ও জমিন সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য। (সুরা আলে ইমরান: ১৯০)
৭. নফল ইবাদতের প্রতি যত্নশীল হওয়া। কারণ, তা আল্লাহর নৈকিট্যলাভের মাধ্যম। ‘ফরজ-ওয়াজিব-এর মধ্যে যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়, সুন্নত ও নফলের মাধ্যমে তা পূরণ করে দেওয়া হয়’। (তিরমিজি)
৮. তাহাজ্জুদ পড়া। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে তাহাজ্জুদে চোখের পানি ফেলে দোয়া করা খুবই কার্যকরী আমল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করুন, এটি আপনার জন্যে অতিরিক্ত কর্তব্য। হয়ত বা আপনার পালনকর্তা আপনাকে মাকামে মাহমুদে পৌঁছাবেন। (সুরা বনী ইসরাঈল: ৭৯)
৯. ফরজ বিধানে অর্থাৎ সরাসরি আল্লাহর নির্দেশকে উপেক্ষা না করা। এতে বান্দার অন্তরে পর্দা ফেলে দেওয়া হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশ মান্য করো, যখন তোমাদের সে কাজের প্রতি আহবান করা হয়, যাতে রয়েছে তোমাদের জীবন। জেনে রেখো, আল্লাহ মানুষের এবং তার অন্তরের মাঝে অন্তরায় হয়ে যান। বস্তুত: তোমরা সবাই তাঁরই নিকট সমবেত হবে। (সুরা আনফাল: ২৪)
১০. অধিক পরিমাণে মৃত্যুকে স্মরণ করা। কারণ, তা হঠাৎ এসে পড়বে। তাই কবর জেয়ারত করার কথা বলা হয়েছে হাদিসে, যাতে দিল নরম হয় এবং মৃত্যুর কথা স্মরণ হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, আমি তোমাদেরকে ইতোপূর্বে কবর জেয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম কিন্তু এখন তোমারা কবর জেয়ারত করো, কেননা, কবর জেয়ারতে মৃত্যুর স্মরণ রয়েছে। (আবু দাউদ)
১১. ইলমি মজলিসে বসা। যেমন: গুরুত্বপূর্ণ ইসলামি বয়ান, নাসিহা ইত্যাদি। বুখারি শরিফে এ প্রসঙ্গে দীর্ঘ হাদিসের উল্লেখ রয়েছে, যাতে বলা হয়েছে- এতে গুনাহ মাফের সুযোগ রয়েছে।
১২. গোপনে নেক আমল করা। যে আমল সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানবে না। গোপন নেক আমলকে বলা হয় শক্ত ঈমানের দলিল। কেয়ামতের কঠিন দিনে যাদের আল্লাহ আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন—সাত প্রকারে সেই সৌভাগ্যবানদের মধ্যে দুইপ্রকার হলো—যে এমনভাবে দান-সদকা করে যে, তার ডান হাত কী দান করছে, তার বাম হাতও টের পায় না। অপরজন হলো—নির্জনে-নিভৃতে আল্লাহকে স্মরণ করে; আর তার চোখ দিয়ে অবিরত অশ্রু বয়ে যায়।” (বুখারি, আস-সহিহ: ১৪২৩; মুসলিম: ১০৩১) লক্ষণীয় বিষয় হলো দুটি আমলেরই অভিন্ন বৈশিষ্ট্য হলো, তাদের আমলে গোপনীয়তা লক্ষণীয়।
১৩.গুনাহের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা এবং আল্লাহকে ভয় করা, এটি দুর্বল ঈমানের চিকিৎসার জন্য উপকারী পদক্ষেপ। আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর শাস্তি থেকে বেঁচে থাকে, তারাই কৃতকার্য। (সুরা নুর: ৫২)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঈমানি দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠতে বেশি বেশি নেক আমল করার তাওফিক দান করুন এবং সকলের ঈমান সুদৃঢ় করে দিন। আমিন।
Published From
Positive International Inc,
73-16, Roosevelt Ave Floor 2, Jackson Heights, New York 11372.
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us