প্রকাশিত: ৬:৫০ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৬, ২০২৩
কুরআন-সুন্নাহর বর্ণনায় অহংকার অনেক বড় গোনাহ। অহংকারের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়েছিল দুনিয়ায় প্রথম পাপ। শয়তানের অনুসরণে যে বা যারা অহংকার করবে তারাও বড় গোনাহগার। যা আল্লাহ তাআলা সহ্য করেন না।
মানুষের যেসব কাজে কবিরা গোনাহ হয়ে থাকে, তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো অহংকার। বুঝে না বুঝে অনেকেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অহংকার করে থাকে। অথচ অহংকার পতনের মূল।
আল্লাহ তাআলা সব ফেরেশতাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তোমরা হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সেজদা কর। সব ফেরেশতা সেজদা করলেও অহংকারবশতঃ ইবলিসই তা অস্বীকার করেছিল এবং অমান্য করেছিল। আর সেটিই ছিল দুনিয়ার প্রথম পাপ।
সে কারণে ইসলামে অহংকার সবচেয়ে বড় গোনাহের একটি। কুরআন-সুন্নাহর একাধিক স্থানে বড় বড় গোনাহের কথা উল্লেখিত হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে অহংকারের ক্ষতি ও শাস্তি।
মানুষ যাতে অহংকারের মতো একটি জঘন্য গোনাহ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারে। তাই কুরআন-সুন্নায় বর্ণিত অহংকার সম্পর্কিত আয়াত ও হাদিসে ঘোষিথ তথ্যগুলো তুলে ধরা হলো। যেখানে রয়েছে অহংকারের কঠোর পরিণাম ও শাস্তির বর্ণনা। আল্লাহ তাআলা বলেন->> ‘তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি (তোমাদের ডাকে) সাড়া দেব। যারা আমার ইবাদত নিয়ে অহংকার করে তারা শীঘ্রই লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সুরা মুমিন : আয়াত ৬০)
যারা আল্লাহ তাআলার দাসত্বকে লজ্জাবোধ করবে কিংবা আল্লাহকে প্রভু বলে মেনে নিতে অহংকার করবে, তাদের পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম ও ফেরেশতাদের উদাহরণ উল্লেখ করে ঘোষণা দেন->> মসীহ (ঈসা) আল্লাহর বান্দা হবেন, তাতে তার কোনো লজ্জাবোধ নেই এবং ঘনিষ্ঠ ফেরেশতাদেরও (আল্লাহর দাসত্ব করবে তাদেরও) লজ্জাবোধ নেই। বস্তুতঃ যারা আল্লাহর দাসত্ববোধকে লজ্জাবোধ করবে এবং অহংকার করবে, তিনি তাদের সবাইকে (পরকালে) নিজের কাছে সমবেত করবেন।অতঃপর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তিনি তাদেরকে পরিপূর্ণ সওয়াব দান করবেন, বরং স্বীয় অনুগ্রহে আরও বেশী দেবেন। পক্ষান্তরে যারা লজ্জা বোধ করেছে এবং অহংকর করেছে তিনি তাদেরকে দেবেন বেদনাদায়ক শাস্তি। আল্লাহকে ছাড়া তারা কোনো সাহায্যকারী ও সমর্থক পাবে না। (সুরা নেসা : আয়াত ১৭২-১৭৩)
অহংকার বশতঃ যদি কেউ আল্লাহ নির্দেশ অমান্য করে তবে সে ব্যক্তি অস্বীকারকারী হিসেবে সাব্যস্ত হবে। যেমনিভাবে ইবলিস আল্লাহর দরবার থেকে বিতাড়িত হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা সে কথা উল্লেখ করে বলেন-এবং যখন আমি হযরত আদম (আঃ)-কে সেজদা করার জন্য ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, তখনই ইবলিস ব্যতিত সবাই সেজদা করলো। সে (নির্দেশ) পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করলো। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৩৪)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অহংকারী দের ব্যাপারে মুমিন বান্দাকে সতর্ক করেছেন। তিনি তার উম্মতকে হুশিয়ার করে দিয়ে জানিয়েছেন কারা হবে জাহান্নামি। হাদিসে এসেছে-হজরত হারিসাহ ইবনু ওহাব খুযায়ী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের জান্নাতীদের সম্পর্কে জানাবো না? (তারা হলেন) : ওই সব লোক- যারা অসহায় এবং যাদের তুচ্ছ মনে করা হয়। তারা যদি আল্লাহর নামে শপথ করে, তাহলে তা তিনি নিশ্চয়ই পুরা করে দেন।আমি কি তোমাদের জাহান্নামীদের সম্পর্কে জানাবো না? তারা হলো->> কর্কশ স্বভাবের অধিকারী;>> শক্ত হৃদয়ের অধিকারী এবং>> অহংকারী।’ (বুখারি)
কুরআন সুন্নাহর আলোকে যেসব কাজে মানুষ দোষী সাব্যস্ত হয় কিংবা দোষের কারণে শাস্তির ঘোষণা পেয়ে থাকে, ইসলামি শরিয়তে সেসব কাজ কবিরা বা বড় গোনাহ হিসেবে সাব্যস্ত। তার মধ্যে অহংকার অন্যতম একটি।
অহংকারের কারণেই ইবলিস বিতাড়িত হয়েছিলেন জান্নাত থেকে। আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাত থেকে বিতাড়িত করতে গিয়েও অহংকারের অপরাধে কথা সুস্পষ্ট করে বলেছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-‘তুমি এ স্থান থেকে নেমে যাও; এখানে থেকে অহংকার করবে তা হতে পারে না। সুতরাং বের হয়ে যাও। তুমি অধমদের অন্তর্ভূক্ত।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ১৩)
অহংকার মানুষকে অন্যায়ের দিকে ধাবিত করে। যে কারণে আল্লাহ তাআলা অহংকারী ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন-‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কোনো উদ্ধত অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা লোকমান : আয়াত ১৮)
হাদিসে কুদসিতে এসেছে অহংকার আল্লাহ তাআলা চাদর। এ চাদর ধরে যারা টানাটানি করে আল্লাহ তাআলা তা সহ্য করেন না। অহংকারকারীকে আল্লাহ তাআলা জাহান্নামে নিক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন। তাই মানুষের উচিত অহংকারের মতো বড় পাপ না করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করে বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন-‘বড়ত্ব আমার চাদর এবং মহানত্ব আমার ইযার (লুঙ্গি)। কেউ যদি এ দুইটির কোনো একটির ব্যাপারে আমার সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হয় তবে আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।’ (মুসলিম, মিশকাত)
যেহেতু অহংকার জান্নাতের অন্তরায় জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ। তাই মুমিন মুসলমানের অহংকারমুক্ত থাকা জরুরি। হাদিসে এসেছে-‘যার অন্তরে এক যাররা (অণু) পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (মুসলিম, মিশকাত)
মনে রাখতে হবেঅহংকারী ব্যক্তিও বড় গোনাহগার। কারণ শয়তানের প্রথম অপরাধই ছিল অহংকার। সুতরাং যে ব্যক্তি অহংকার করলো সে নিজেকে শয়তানের করা প্রথম গোনাহটি করে নিজেকে শয়তানের সঙ্গেই অপরাধী করে নিলো। (নাউজুবিল্লাহ)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত কবিরা গোনাহসমূহের মধ্যে অন্যতম অহংকারের মতো জঘন্য গোনাহ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। অহংকার মুক্ত থাকতে এ দোয়াটি বেশি বেশি করা-رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَউচ্চারণ : রাব্বানা জালামনা আংফুছানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানা কুনান্না মিনাল খাছিরিন। (সুরা আরাফ : আয়াত ২৩)
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! নিশ্চয় আমরা আমাদের নফসের উপর অত্যাচার করেছি, আপনি যদি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন, তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবো।’
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অহংকার মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর ঘোষণা অনুযায়ী দুনিয়া ও পরকালের সফল জীবন লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
Published From
Positive International Inc,
73-16, Roosevelt Ave Floor 2, Jackson Heights, New York 11372.
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us