শীতে প্রবীণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যত্নশীল হোন।

প্রকাশিত: ৭:১৩ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০২৩

শীতে প্রবীণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যত্নশীল হোন।
booked.net

ডেস্কঃ- শীতে পরিবেশের তাপমাত্রা অনেক বেশি ওঠানামা করে। এটি মানবদেহের স্বাভাবিক পিএইচ, তাপমাত্রা, হরমোন, এনজাইমের কার্যক্রম কে নষ্ট করে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় প্রবীণরা শীতে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন। তাই আসুন জেনে নেই, কিভাবে তাদের যত্ন নেওয়া যায়-

সঠিক পোশাক নির্বাচন করে দিনঃ- প্রবীণদের শীতের পোশাক হতে হবে আরামদায়ক। মোটা কাপড় পরার চেয়ে কয়েকটি পাতলা আরামদায়ক কাপড় নির্বাচন করুন এ ক্ষেত্রে। এতে ঠাণ্ডা কম লাগবে। কারণ, কাপড়ের স্তরে স্তরে বাতাস জমা থেকে শরীর থেকে তাপ বাইরে বের হতে বাধা দেবে। শীতে প্রবীণদের শরীরের তাপমাত্রা কমে গিয়ে হাইপোথারমিয়া হতে পারে, যার ফলে অজ্ঞান হওয়া থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত হয়। তাই শীত-পোশাক পরার ক্ষেত্রেও সচেতন হওয়া দরকার। একটি মোটা কাপড় পরার চেয়ে কয়েকটি পাতলা কাপড় পরলে শীত কম লাগবে। রাতে গলা ও কানে পাতলা কাপড় জড়িয়ে ঘুমান, এতে ঠাণ্ডা লাগবে না।

বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষ খেয়াল রাখুনঃ- বয়স্করা অনেক সময় বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন। ডিমেনশিয়া, আলঝেইমার ইত্যাদি। তাই তাদের আনন্দে রাখার চেষ্টা করুন। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখুন। বেশি শীতে বয়স্ক লোকদের দরকার ছাড়া বাইরে বের হতে দেবেন না। এতে শরীরের নির্দিষ্ট তাপমাত্রা কমে গিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে পারে।

বেশি করে শাকসবজি খেতে দিনঃ- শীতের শাকসবজি বয়স্কদের বেশি করে খেতে দিন। কারণ, গাজর, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ভিটামিন, মিনারেল অভাব পূরণ করে শীতে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে। শীতে খাওয়া-দাওয়ায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। ঠাণ্ডা খাবার অবশ্যই বাদ দিতে হবে। নিয়মিত লেবু দিয়ে চা খাওয়া যেতে পারে। এটি শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের কাজ করবে। এ ছাড়া ফল ও ফলের রস খেতে হবে। এটি শরীরের নিস্তেজভাব দূর করবে। ফলে প্রচুর ভিটামিন-সি থাকে, যা শরীরে শক্তি যোগাতে সাহায্য করবে। এ সময় বাজারে প্রচুর শাকসবজি ওঠে, এগুলোও ডায়েট চার্টে রাখুন।

ত্বকের যত্ন নিনঃ- শীতে বয়স্কদের ত্বক, ঠোঁট, হাত-পা, নখসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে বাঁচাতে বিভিন্ন ক্রিমসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহার করুন। শীতে শরীরের অয়েল গ্ল্যান্ড থেকে তেল কম নিঃসৃত হয় বলে ত্বক খসখসে ও শুষ্ক হয়ে পড়ে। ত্বকের সুরক্ষায় ময়েশ্চারাইজার লোশন, ভ্যাসলিন, গ্লিসারিন, অলিভ অয়েল এগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। যখনই মুখ পানি দিয়ে পরিষ্কার করবেন, তখনই কোনো ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার মুখে ব্যবহার করুন।

ঘরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখুনঃ- প্রবীণ ব্যক্তিটির ঘরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখুন। যতটা সম্ভব ঘর গরম রাখুন। এতে শীত কম লাগবে, আরাম অনুভব হবে।

পান করতে দিন কুসুম গরম পানিঃ- গরম খাবারের পাশাপাশি গরম পানি খেতে দিন। গরম পানি দিয়ে গোসল, অজু ও অন্যান্য কাজ করতে দিন। এতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। এতে বাড়ির প্রবীণ মানুষটি আরাম পাবে। এ সময় শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তাই শীতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। এক্ষেত্রে গরম দুধ, ফলের রস, বিভিন্ন ধরনের স্যুপ খাওয়া যেতে পারে।

হালকা ব্যায়াম করানঃ- শীতে বয়স্কদের সক্রিয় রাখুন। শীতের দিন শুধু শুয়ে-বসে না থেকে প্রবীণ মানুষটিকে ঘরের ভেতর হালকা ব্যায়াম করতে বলুন। ঘরের মধ্যে হাঁটাহাঁটিসহ হাত-পা নাড়াচড়া করতে বলুন। এতে শরীরে তাপ উৎপন্ন হবে, শীত কম লাগবে। প্রবীণ বয়সে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও কর্মক্ষমতা কমে যায়। তাই এ সময়টায় তাদের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। তীব্র শীতে অ্যালার্জি, হাঁপানি, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিসের মতো রোগ হয়ে থাকে। যদি কারো রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অস্টিও আর্থ্রাইটিস এই ধরনের সমস্যা থাকে, তবে শীতে সেটি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এসব রোগ প্রতিকারে এ সময় হালকা ব্যায়াম করতে হবে। ঠাণ্ডার কারণে যদি বাইরে নাও বের হন, তবে ঘরের মধ্যে হাঁটাহাঁটি, হাত-পা নাড়াচাড়া করুন। এতে শরীরে তাপ উৎপন্ন হবে। ব্যায়াম করলে সর্দি-কাশি-জ্বর ইত্যাদি রোগ কম হয়।

ভিটামিন ডি-এর অভাব দূর করুনঃ- ভিটামিন ডি-এর ৯০ ভাগ উৎস হচ্ছে সূর্যের আলো। শীতে প্রবীণরা যেহেতু বাইরে বের কম হন, তাই ভিটামিনের অভাব দেখা দিতে পারে। তাই এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে বাঁচতে নিয়মিত সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রোদে থাকুন। সূর্যের আলো ভিটামিন ডি-এর প্রধান উৎস। ভিটামিন ডি-এর অভাবে শ্বাসতন্ত্রে ঘন ঘন সংক্রমণ হতে পারে। হাড়ের গিঁটে গিঁটে ব্যথা ও আড়ষ্টতা অনুভব হতে পারে। এছাড়াও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এতে করে বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ হওয়া বেড়ে যায়। তাই ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণের জন্য সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত ১০-২০ মিনিট রোদ গায়ে লাগাতে হবে। প্রবীণদের হালকা রোদে সামান্য ব্যায়ামও করতে উৎসাহ দিতে হবে।

পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে বলুনঃ- বয়স্কদের প্রতিদিন আট ঘণ্টা ঘুম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ঠাণ্ডা-কাশি থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে। তাই তাঁদের পর্যাপ্ত ঘুমাতে বলুন। এ ছাড়া বয়স্কদের মদ্যপান, ধূমপান, অতিরিক্ত চা-কফি থেকে বিরত রাখুন।

পরিমাণমতো পানি খেতে বলুনঃ- শীতে পানির চাহিদা কম থাকায় বয়স্করা পানি কম খান। এটি কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা তৈরি করে। তাই শীতে বয়স্কদের প্রয়োজনীয় পানিসহ কেমিক্যালমুক্ত বিভিন্ন দেশি ফলের রস খেতে বলুন।

Ad