প্রকাশিত: ৭:৫৭ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৮, ২০২১
বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের জুতার দেখা মেলে। সেখান থেকে পছন্দসই জুতা বেছে নেন সবাই নিজের জন্য। তবে রাবার, চামড়া, প্লাস্টিকের জুতাই আমাদের দেশে বেশি প্রচলিত। কাঁচামালের সহজলভ্যতা, আবহাওয়া এবং সংস্কৃতির উপর নির্ভর করেই এই ধরনের জুতা বেশি প্রচলিত।
তবে জানেন কি?নেদারল্যান্ডস এর মানুষ কাঠের তৈরি এক ধরনের জুতা পরেন। পুরো বিশ্বের কাছে ডাচরা পরিচিত তাদের রং-বেরঙের টিউলিপ, ডাচ চিজ, উইন্ডমিল আর এই ঐতিহ্যবাহী কাঠের জুতার জন্য।
কাঠের এই ধরনের জুতাকে বলা হয় ‘ক্লোম্পেন’। মধ্যযুগ থেকে যা নেদারল্যান্ডসে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শুধু নেদারল্যান্ডসেই নয়, কাঠের এই ধরনের জুতার ব্যবহার রয়েছে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে। যেমন জাপানের ‘গেটা’ এবং স্পেনের ‘আলবারকাস’। তবে গঠনশৈলীর দিক থেকে সামনের দিকে সুচালো পায়ের আঙুল এবং হাত দিয়ে আঁকা কাঠের জুতা সাধারণত ‘ডাচ ক্লগ’ হিসেবে স্বীকৃত।
ডাচদের সংস্কৃতির সঙ্গে এই কাঠের জুতা গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। এখনো গ্রামীণ অঞ্চলের কিছু মানুষ এই জুতা ব্যবহার করেন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১২০০ শতকে কাঠের তৈরি জুতার ব্যবহার শুরু হয় নেদারল্যান্ডসে। কারখানার শ্রমিক, কারিগর, কৃষক, জেলেদের পা রক্ষার জন্য নকশা করা হয়েছিল এই জুতার।
তবে এই জুতা শুরুতে কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়নি, সে সময় কাঠের ওপর চামড়া ব্যবহার করা হতো। তবে সমস্যা হলো মাঠে, পানিতে ও কারখানায় কাজ করার জন্য সেগুলো উপযোগী নয়। এই সমস্যার সমাধান করতে পরবর্তী সময়ে তারা পুরো জুতাই কাঠ দিয়ে তৈরি করতে শুরু করলেন। তবে পেশার ভিন্নতায় জুতার নকশাতেও ভিন্নতা আসে। যারা খামারে কাজ করে, তাদের পা কাদায় ডুবে যেত। তাই জুতায় একটি বৃহৎ বর্গাকার নাক ব্যবহার করা হতো।জেলেরা ব্যবহার করতেন জুতার সামনের দিকে ধারালো ও সুচালো নাকযুক্ত ক্লগ।
অন্যদিকে সাদাসিধে জুতা ছিল কারখানার কর্মীদের। তবে ধীরে ধীরে এর ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও। বাড়িতে পরার জন্যও জুতা তৈরি শুরু হয়। এমনকি গির্জা ও বিয়ের অনুষ্ঠানে পরার জন্য বিশেষ কাঠের জুতা বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে পুরো নেদারল্যান্ডসে। একপর্যায়ে এমন প্রথা শুরু হলো, পুরুষেরা তাদের বাগদত্তার কাছে এক জোড়া সুন্দর খোদাই করা জুতা দিয়ে প্রপোজ করতো।
এই কাঠের জুতা তৈরির রয়েছে বিশেষ পদ্ধতি। প্রথমে কাঠের একটি টুকরাকে জুতার আকার দেয়া হয় বিশেষ ধরনের কুড়াল দিয়ে। সেটিকে পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয় তিন থেকে চার দিন। এরপর একটি ধারালো ছুরি দিয়ে জুতার পূর্ণাঙ্গ আকার দেয়া হয়। জুতা তৈরির পর তিন সপ্তাহজুড়ে রোদে শুকানো হয়। শুকানো হয়ে গেলে হাতে আঁকা হয় নকশা। জুতা বানানোর মেশিন উদ্ভাবিত হয় শিল্পবিপ্লবের পর। স্বাভাবিকভাবেই তখন উৎপাদন যায় বেড়ে। তবে নেদারল্যান্ডসে এখন হাতে গোনা কয়েকজন এমন জুতা তৈরি করেন। তাদের কারখানায় জুতা তৈরি দেখার সুযোগ রয়েছে।
নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামের অদূরে ঐতিহ্যবাহী ডাচ সংস্কৃতির জন্য জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র জায়ানস শ্যাঞ্চস। এটি একটি ছোট গ্রাম, যেখানে বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে খোলা আকাশের নিচে রয়েছে একটি জাদুঘর। সেখানেই রয়েছে কাঠের জুতা তৈরির কারখানা। কারিগরেরা পর্যটকদের কাছে দারুণভাবে উপস্থাপন করেন তৈরির প্রক্রিয়া। সেখানে জুতা কেনারও ব্যবস্থা রয়েছে। ১৯৮৮ সাল থেকে লাকডাল শহরে, এই কাঠের জুতার একটি জাতীয় জাদুঘর খোলা হয়েছে। যেখানে কাঠের বিভিন্ন জিনিসের প্রদর্শনী করা হয়। সূত্র: নেদারল্যান্ডস ইন্সাইডার।
Published From
Positive International Inc,
73-16, Roosevelt Ave Floor 2, Jackson Heights, New York 11372.
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us