প্রকাশিত: ৭:০১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৯, ২০২১
হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা আর সাফল্য-ব্যর্থতার মহাকাব্য শেষে পর্দা নেমেছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রীড়া আসর অলিম্পিক গেমসের। জমকালো সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রবিবার টোকিওর অলিম্পিক স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে সতেরো দিনের মিলনমেলা ভেঙ্গেছে টোকিও অলিম্পিকের। আবারও দেখা হবে ২০২৪ সালে। প্যারিসে বসবে অলিম্পিকের পরবর্তী আসর।
জাপানের রাজধানী টোকিওতে বসেছিল ১১ হাজারেরও বেশি অ্যাথলেটের মিলনমেলা। শুরুতেই ছিল বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণকারী ক্রীড়াবিদদের আনন্দমুখর উপস্থিতি। সঙ্গে ছিল আরো কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। আয়োজক, সম্প্রসারক, স্বেচ্ছাসেবক থেকে শুরু করে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষের কর্মযজ্ঞ।
২০৬টি দেশের মোট ১১ হাজার ৬৫৬ জন অ্যাথলেট অংশগ্রহণ করেন এবারের অলিম্পিকে। করোনার কারণে ছিল কড়া বিধি-নিষেধ। যে কারণে অলিম্পিক ভিলেজে নানা সমালোচনারও শিকার হতে হয় আয়োজকদের।
জাপানের টোকিওতে এবার আয়োজিত অলিম্পিক গেমসের আসরটি হচ্ছে ৩২তম। শুরু হয় ২৩ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট, মোট ১৬ দিনে ৫০টি ডিসিপ্লিনে মোট ৩৩৯টি স্বর্ণের লড়াই অনুষ্ঠিত হয়।
বরাবরের মতো এবারের ৩২তম গেমসেও শেষ দিনে চমক দেখিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
অথচ গেমসের প্রথম ষোলো দিন একবারের জন্যও এক নম্বরে উঠতে পারেনি দেশটি। এই সময়ে ১৪ দিন চীন ও দুই দিন শীর্ষে ছিল স্বাগতিক জাপান। অবশেষে শেষ দিকে স্বরূপে ফিরে শীর্ষস্থান নিয়েই মিশন শেষ করেছে অলিম্পিকের ইতিহাসের সর্বকালের সেরা সাফল্যের দেশ যুক্তরাষ্ট্র।
এর ফলে আরেকবার মার্কিন সাম্রাজ্য গুঁড়িয়ে দিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করার যে স্বপ্ন বুনছিল এশিয়ার গর্বের প্রতীক চীন সেটা পূরণ হয়নি। তাদেরকে দ্বিতীয় স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। ২০০৮ সালে নিজ দেশের বেজিং আসরে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার এক নম্বর স্থান অর্জন করেছিল চাইনিজরা। ২০১৬ রিও আসরে ষষ্ঠ হওয়া স্বাগতিক জাপান এবার তৃতীয় হয়েছে।
এবারের অলিম্পিকে স্বর্ণসহ সব পদক মিলিয়ে আমেরিকা পদক জিতেছে ১১৩টি। এর মধ্যে স্বর্ণপদক ৩৯টি। অন্যদিকে ৩৮টি স্বর্ণসহ মোট ৮৮টি পদক নিয়ে দ্বিতীয় হয়েছে চীন। ২৭টি স্বর্ণসহ মোট ৫৮টি পদক জয় করে তৃতীয় হয়েছে স্বাগতিক জাপান। চতুর্থ অবস্থানে আছে যুক্তরাজ্য।
এবারের টোকিও অলিম্পিকের বেশির ভাগ দিন স্বর্ণপদক জয়ের শীর্ষস্থানে ছিল চীন। কিন্তু রবিবার শেষ দিন মাত্র একটি স্বর্ণ বেশি জয় করে চীনকে টপকে শীর্ষস্থানে উঠে আসে আমেরিকা। তারা সর্বশেষ রিও অলিম্পিকে ৪৬টি স্বর্ণপদক জয় করে সেরা হয়েছিল।
চীন চেয়েছিল এবার সেরা হতে। কিন্তু শেষ দিন তারা পিছিয়ে পড়ে। চীন ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকেও ৩৮টি স্বর্ণ জিতেছিল। এবারো ৩৮টি স্বর্ণ জিতে নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয়বার সর্বোচ্চ স্বর্ণ জয় করেছে। রিও অলিম্পিকে তারা জিতেছিল ২৬টি স্বর্ণ। ফলে এবার তাদের উন্নতি হয়েছে।
পদক জয়ের দিক দিয়ে আমেরিকাকে সেরা বানাতে বেশি অবদান রেখেছেন দেশটির নারী অ্যাথলেটরা। ১১৩টি পদকের মধ্যে তারা এনে দিয়েছেন ৬৬টি পদক। আমেরিকার মতো চীনের পদকেও সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন দেশটির নারী অ্যাথলেটরা। চীনকে প্রায় ৭০ ভাগ স্বর্ণপদকই এনে দিয়েছেন তারা।
এবারের অলিম্পিকে বাস্কেটবলের নারী ইভেন্টের ফাইনালে জাপানকে হারিয়ে টানা সপ্তম স্বর্ণ জিতেছে আমেরিকার নারী দল, তাছাড়া ওয়াটার পোলো দল টানা তৃতীয় স্বর্ণ জিতেছে এবং নারী ভলিবল দল এ ইভেন্টে দেশটিকে প্রথম স্বর্ণ এনে দিয়েছে।
মহিলাদের ৪০০ মিটার হার্ডেলসে সিডনি ম্যাকলাফলিন জিতেছেন স্বর্ণপদক, সিমিসা বাইলস, গ্যাবি ডগলাস, নাস্তিয়া লিউকিন ও কার্লি প্যাটারসনের পর সুনিসা লি জিমন্যাস্টিকসে আমেরিকাকে পঞ্চমবারের মতো ও টানা চতুর্থবারের মতো স্বর্ণ এনে দেন। মলি সেডেল আমেরিকাকে ম্যারাথনে ব্রোঞ্জপদক এনে দেন এবং অ্যালিসন ফেলিক্স নিজেদের পঞ্চম অলিম্পিকে ৪০০ মিটারে ব্রোঞ্জ এবং ৪০০ মিটার রিলেতে স্বর্ণ জয় করেন, যা তার ক্যারিয়ারের ১০তম এবং ১১তম অলিম্পিক পদক।
এ আসরে সবচেয়ে সফল ক্রীড়াবিদ এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ৫টি স্বর্ণপদক জিতেছেন মার্কিন সাঁতারু কেলেব ড্রেসেল। আর সবচেয়ে বেশি ৭টি পদক জিতেছেন অস্ট্রেলিয়ার নারী সাঁতারু এমা ম্যাককিওন। ১৯৭৬ অলিম্পিকে রোমানিয়ার জিমন্যাস্ট নাদিয়া কোমানচির পর এবারের আসরে ‘পারফেক্ট’ টেন স্কোর করে ইতিহাস গড়েন চীনের কিশোরী ডাইভার কুয়ান হংচেন।
সিরিয়ার টেবিল টেনিস খেলোয়াড় হেন্দ জাজা ছিলেন এবারের অলিম্পিকের সর্বকনিষ্ঠ এ্যাথলেট (১২ বছর)। আর বয়োজ্যেষ্ঠ এ্যাথলেট ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ড্রেসেজ রাইডার ম্যারি হান্না (৬৬ বছর)।
অলিম্পিকের ইতিহাসে ভাই-বোন জুটির স্বর্ণজয়ের ঘটনা এবারই দেখা গেছে। তারা হলেন জাপানের দুই ভাই (হিফুমি আবে)-বোন (উতাআবে)। সিরিয়ার টেবিল টেনিস খেলোয়াড় হেন্দ জাজা ছিলেন এবারের অলিম্পিকের সর্বকনিষ্ঠ এ্যাথলেট (১২ বছর)। আর বয়োজ্যেষ্ঠ এ্যাথলেট ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ড্রেসেজ রাইডার ম্যারি হান্না (৬৬ বছর)।
এদিকে রবিবার ওয়াটার পোলোতে পুরুষদের ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সার্বিয়া। ফাইনালে গ্রিসকে ১৩-১০ পয়েন্টের ব্যবধানে হারিয়ে এ পদক জিতে নেয় দলটি। রাশিয়ান অলিম্পিক কমিটিকে হারিয়ে এ ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতেছে হাঙ্গেরি।
হ্যান্ডবল নারীদের ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেছে ফ্রান্স। ফাইনালে এদিন রাশিয়ান অলিম্পিক কমিটিকে ৩০-২৫ পয়েন্টের ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। সুইডেনকে হারিয়ে ব্রোঞ্জপদক জিতেছে নরওয়ে।
বক্সিংয়ে পুরুষদের সুপার হেভিওয়েট ইভেন্টে স্বর্ণ জিতে নিয়েছেন উজবেকিস্তানের বাখোদির জালোলোভ। ফাইনালে যুক্তরাষ্ট্রের রিচার্ড টোরেসকে ৫-০ ব্যবধানে হারিয়ে এ পদক জিতে নেন তিনি। এ ইভেন্টে ব্রোঞ্জপদক জিতেছেন গ্রেট ব্রিটেনের ফ্রেজার ক্লার্ক ও কামশিবেক কুনকাবেয়াভ।
নারীদের মিডলওয়েট ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেছেন গ্রেট ব্রিটেনের লরেন প্রাইস। ফাইনালে এদিন চীনের লি কিয়ানকে ৫-০ ব্যবধানে হারিয়ে এ পদক জিতে নেন তিনি। এ ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতেছেন রাশিয়ান অলিম্পিক কমিটির জেনফিরা মাগোমেদালিভা ও নেদারল্যান্ডসের নৌচকা ফন্তিন।
নারীদের লাইটওয়েট ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেছেন আয়ারল্যান্ডের কেলি হ্যারিংটন। ফাইনালে এদিন ব্রাজিলের বিয়াত্রিজ ফেরেইরাকে ৫-০ ব্যবধানে হারিয়ে এ পদক জিতে নেন তিনি। এ ইভেন্টে থাইল্যান্ডের সুদাপর্ন সেশনডি ও ফিনল্যান্ডের মিরা পতকোনেন পেয়েছেন ব্রোঞ্জ।
সাইক্লিং ট্র্যাকে নারীদের ওমনিয়াম ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেছেন আমেরিকার জেনিফার ভেলেন্তি। ফাইনাল রাউন্ডে এদিন ১২৪ পয়েন্ট পেয়ে প্রথম হন তিনি। ১১০ পয়েন্ট নিয়ে জাপানের কাজিহারা ইউমি জিতেছেন রৌপ্যপদক। ব্রোঞ্জ জিতেছেন নেদারল্যান্ডসের কারস্টেন উইল্ড।
জিমন্যাস্টিক রিদমিকে নারীদের গ্রুপ অলরাউন্ড ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেছে বুলগেরিয়া। ফাইনাল রাউন্ডে এদিন ৯২.১০০ পয়েন্ট পেয়ে স্বর্ণ জয় করে দলটি। ৯০.৭০০ পয়েন্ট নিয়ে রৌপ্য জিতেছে রাশিয়ান অলিম্পিক কমিটি। ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে ইতালি।
সাইক্লিং ট্র্যাকে নারীদের স্প্রিন্ট ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেছেন কানাডার কেলসি মিচেল। ফাইনালে এদিন ইউক্রেনের ওলেনা স্তারিকোভাকে হারিয়ে এ পদক জিতে নেন তিনি। ১০.৯০৬ সেকেন্ডে প্রথম রেস এবং ১০.৯৯৫ সেকেন্ডে দ্বিতীয় রেস শেষ করেন এ কানাডিয়ান। হংকংয়ের লি ওয়াই সজি জিতেছেন ব্রোঞ্জ। সাইক্লিং ট্র্যাকে পুরুষদের কেইরিন ইভেন্টে স্বর্ণপদক জিতে নিয়েছে গ্রেট ব্রিটেনের জ্যাসন কেনি। ফাইনাল রাউন্ডে এদিন ঘণ্টায় ৬৮.৬৯৬ গতিতে ১০.৪৮১ সেকেন্ড সময় নিয়ে প্রথম হয়েছেন এ ব্রিটিশ সাইক্লিস্ট। তার চেয়ে ০.৭৬৩ সেকেন্ড বেশি সময় নিয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন মালয়েশিয়ার আজিজুল হাসনি আওয়াং। নেদারল্যান্ডসের হ্যারি লিভারিসেন ব্রোঞ্জ জিতেছেন।
অ্যাথলেটিকসে পুরুষদের ম্যারাথনে স্বর্ণপদক জিতেছেন কেনিয়ার ইলিউড কিপচোগ। ২ ঘণ্টা ৮ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে প্রথম হন এ কেনিয়ান। তার চেয়ে ১ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময় বেশি নিয়ে রৌপ্যপদক জিতেছেন নেদারল্যান্ডসের আব্দি নাগেয়ি। বেলারুশের বশির আব্দি জিতেছেন ব্রোঞ্জ। নারীদের ম্যারাথনেও এবার স্বর্ণ জিতেছে কেনিয়া। শুধু ম্যারাথন দৌড়ের জন্য অ্যাথলেট তৈরি করে কেনিয়া। এবারো তারা প্রত্যাশা অনুযায়ী সেরাই হয়েছে।
মহামারী করোনাভাইরাসের বাধা সত্ত্বেও গত ২৩ জুলাই মনোমুগ্ধকর, নয়নাভিরাম, জমকালো, বর্ণিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পর্দা উঠেছিল টোকিও অলিম্পিকের। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এ ক্রীড়া আসরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন জাপানের নারুহিতো।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে সবার মধ্যে বাড়তি আগ্রহ থাকলেও সমাপনী নিয়ে সচরাচর তেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায় না। সনাতন এই নিয়মের বেড়াজাল থেকে ২০০৮ সালে বেরিয়ে এসেছিল বেজিং। এরপর ২০১২ সালে লন্ডন ও ২০১৬ সালে রিও একই পথ অনুসরণ করেছিল।
তিনটি শহরই উদ্বোধনী যজ্ঞের মতো সমাপনীতেও চমক দেখিয়েছিল। কিন্তু টোকিওর দুর্ভাগ্য, করোনার কারণে উদ্বোধনী ও সমাপনী কোনো অনুষ্ঠানই মনের মতো করতে পারেনি।
করোনা মহামারীর মধ্যেও রীতি অনুযায়ী মশাল জ্বালিয়ে শুরু হয়েছিল টোকিও অলিম্পিক। সতেরো দিন পদকের লড়াই শেষে রবিবার রাতে মশাল নিভিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে পর্দা নেমেছে আধুনিক অলিম্পিকের ৩২তম আসরের।
বিদায়ী ভাষণে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) সভাপতি টমাস বাখ বলেন, খেলাধুলার ঐক্যবদ্ধ শক্তি দিয়ে আপনারা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছেন। মহামারীর কারণে টোকিওর আয়োজকদের যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিল, এ কারণে এটি আরও বেশি অসাধারণ। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার তৃপ্তি প্রকাশ করেন টোকিও অলিম্পিকের আয়োজক কমিটির প্রধান সেইকো হাশিমোতো। তিনি এ্যাথলেট, কোচ ও ভলান্টিয়ারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে নানাভাবে উপস্থাপন করা হয় জাপানের সংস্কৃতি, লোকাচার, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উত্থানকে। একই সঙ্গে দেখানো হয়েছে কিভাবে দেশটি মারাত্মক সব ভূমিকম্প, সুনামি ও ২০১১ সালে ঘটে যাওয়া পারমাণবিক বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
সমাপনী অনুষ্ঠানের শুরুতে টিভি পর্দায় তুলে ধরা হয় এবারের আসরের নানা ইভেন্টের খন্ড খন্ড চিত্র। এ্যাথলেটদের অর্জনের উল্লাস, আনন্দাশ্রু, আলিঙ্গন, বিচিত্র উদ্যাপনের দৃশ্যগুলো। টোকিওর অলিম্পিক স্টেডিয়ামের মাঝখানে করা বৃত্তে প্রতিটি দেশের পতাকাবাহকদের প্রবেশ দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। যেসব দেশের প্রতিনিধিরা ছিলেন না, সেসব দেশের পতাকা বহন করেন ভলান্টিয়াররা। এরপর একে একে মাঠে প্রবেশ করেন বিভিন্ন দেশের এ্যাথলেটরা। আলো-আঁধারি আবহে প্রতিটি দেশের পতাকার রং ফুটিয়ে তোলা হয় ভার্চুয়ালি।
এরপর সুর-গানের তালে বিভিন্ন খেলা, কসরত তুলে ধরে জাপানীরা। সমাপনী অনুষ্ঠানে পদক তুলে দেয়া হয় ম্যারাথনে বিজয়ীদের হাতে। অনুষ্ঠান শেষ হতেই সাদা ও সোনালি রংয়ের আতশবাজিতে ভরে ওঠে টোকিও অলিম্পিক স্টেডিয়ামের চারপাশ। দর্শকহীন স্টেডিয়ামে খেলা আয়োজন করার কারণেই এই রংকে বেছে নেয়া হয় আতশবাজির জন্য।
বরাবরের মতো এবারও বিশ্বের সর্ববৃহৎ এ মিলনমেলায় অংশগ্রহণ করেন বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে তাবত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। বিচিত্র ভাষা, বিচিত্র পোশাক, আচার-আচরণ সবকিছুকে ছাপিয়ে এখানে উত্থিত হয় মিলনের সুর, ভালোবাসা, ভালোলাগার জয়গান।
টানা সতেরো দিন বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের এই জয়গানে মুখরিত ছিল গোটা টোকিও। জাপানিজরা স্মরণকালের অন্যতম সেরা আয়োজনের মধ্য দিয়ে সবাইকে এক সুতোয় গেঁথে রাখতে সক্ষম হয়। করোনার থাবা, ছোট-খাটো ত্রুটি-বিচ্যুতি, মান-অভিমান ছাড়া এবার সার্বিকভাবে সফল একটি আসর শেষ করেছে জাপান। চার বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বিশ্বদরবারে উপস্থিত হয় দ্য বিগেস্ট শো অন দ্য আর্থ।
উদ্বোধনের পর টানা দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় পদকের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন ২০৬ দেশের ১১০৯০ ক্রীড়াবিদ। বিশ্বের নানা প্রান্তের নামী-দামী, অখ্যাত ও বিখ্যাত এ্যাথলেটরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৩৩টি খেলার ৫০টি ডিসিপ্লিনের ৩৩৯টি ইভেন্টে। এবার দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন সা¤্রাজ্য গুঁড়িয়ে দিয়ে অলিম্পিকে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করার পথেই ছিল চীন। কিন্তু শেষ দিনে তাদেরকে টপকে সেরা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এক নম্বর হওয়ার পথে মার্কিনীরা জিতেছে ৩৯ স্বর্ণ, ৪১ রৌপ্য, ৩৩ ব্রোঞ্জসহ মোট ১১৩টি পদক।
দ্বিতীয় হওয়া চীন জয় করেছে ৩৮ স্বর্ণ, ৩২ রৌপ্য, ১৮ ব্রোঞ্জসহ মোট ৮৮টি পদক।
তৃতীয় হওয়ার পথে স্বাগতিক জাপানের ভা-ারে জমা হয়েছে ২৭ স্বর্ণ, ১৪ রৌপ্য, ১৭ ব্রোঞ্জসহ মোট ৫৮টি পদক।
গত আসরে দ্বিতীয় হওয়া গ্রেট ব্রিটেন এবার হয়েছে চতুর্থ। ব্রিটিশ এ্যাথলেটরা জিতেছেন ২২ স্বর্ণ, ২১ রৌপ্য, ২২ ব্রোঞ্জসহ মোট ৬৫টি পদক।
পঞ্চম হওয়া রাশিয়ান অলিম্পিক কমিটির শোকেসে জমা হয়েছে ২০ স্বর্র্ণ, ২৮ রৌপ্য, ২৩ ব্রোঞ্জসহ মোট ৭১টি পদক।
সমাপণী অনুষ্ঠান শেষ হতেই সাদা এবং সোনালী রঙয়ের আতশবাজিতে ভরে ওঠে টোকিও অলিম্পিক স্টেডিয়ামের চারপাশ। দর্শকহীন স্টেডিয়ামে খেলা আয়োজন করার কারণেই এই রঙকে বেছে নেয়া হয় আতশবাজির জন্য।
টোকিও অলিম্পিকের সমাপনি অনুষ্ঠানে নানাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে জাপানের সংস্কৃতি, লোকাচার, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উত্থানকে। আগামী অলিম্পিক গেমস ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হবে ফ্রান্সের প্যারিসে।
Published From
Positive International Inc,
73-16, Roosevelt Ave Floor 2, Jackson Heights, New York 11372.
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us