প্রকাশিত: ৩:১৯ অপরাহ্ণ, জুন ১১, ২০২২
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ- নিয়ম না মেনেই কুলাউড়ার হাজীপুর ইউনিয়নে হাজীপুর সড়ক সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির সরকারি সড়কে গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে। গত ৫ জুন থেকে ৯ জুন পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত আকাশমনি ও বেলজিয়াম গাছ কর্তনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় উপকারভোগীরা ক্ষোভে ফুঁঁসে উঠেছেন। তবে ৫০টি গাছ কর্তনের খবর জানেনি স্থানীয় বনবিভাগ। তারা বলছেন, বনবিভাগকে ঝড়ে ভাঙ্গা এবং শুকনো রকমের ২/৩টা গাছ কর্তনের কথা মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট কাউকে না জানিয়ে সমিতির সদস্য উপকারভোগী আবরার উজ্জামান, আবুল হোসেন, মকদ্দছ আলী ও প্রয়াত আব্দুল বারীর ছেলে সানি ঝড়ে পড়ে যাওয়ার কথা বলে বনায়নের ৫০টি গাছ কেটে ফেলেন এবং বন বিভাগের অনুমতি না নিয়েই তারা এ কাজ করেছেন বলে দাবী করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য ও উপকারভোগী নূর আহমদ চৌধুরী বুলবুল। তিনি বলেন, সামসুল হক সামাদের নেতৃত্বে প্রথমদিন (৫ জুন) ৭/৮ জন শ্রমিককে গাছ কাটতে দেখেন। এসময় উপকারভাগেী মৃত আব্দুল বারীর ছেলে সানি, উপকারভোগী আবরার উজ্জামান, আবুল হোসেন ও মকদ্দছ আলী উপস্থিত ছিলেন। তিনি তাদেরকে গাছ কাটতে বাধা দেন। কিন্তু তারা বাধা মানেনি, সাথে সাথে তিনি হাজীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা, গাজীপুর বনবিটের বিট কর্মকর্তা আহমদ আলীকে এবং পরবর্তীতে বনবিভাগের কুলাউড়া রেঞ্জার রিয়াজ উদ্দিনকে বিষয়টি অবহিত করেন।
যদিও বনবিভাগের পক্ষ থেকে শুক্রবার (১০ জুন) পর্যন্ত কেউ ঘটনাস্থলে যাননি। তবে শুক্রবার বিকেলে বনবিভাগের এক কর্মকর্তা মুঠোফোনে জানান, কাঁচা গাছ কর্তনের বিষয়টি আমাদেরকে জানানো হয়নি। ইউপি সদস্য আরো বলেন, কর্তনকৃত ৫০টি গাছের বাজার মূল্য ৩ লক্ষ টাকা হবে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মুরইছড়া বনবিটের আওতাধীন মনু তিলকপুর রাস্তা থেকে মজমপুর (সিকিরজান পুল) পর্যন্ত এবং হাজীপুর রাস্তা থেকে সোনা দিঘিরপাড় পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তায় আকাশমনি ও বেলজিয়াম প্রজাতির গাছ রয়েছে। উপকারভোগীরা জানান, ২০১১ সালের ৩০ জুন সামাজিক বনায়নের আওতায় উল্লেখিত রাস্তার দুইপাশে গাছ রোপণের চুক্তি হয়। এই সমিতির আওতায় ২৫ জন সদস্য রয়েছেন। বর্তমানে গাছগুলো অনেক মূল্যবান ও বড় হয়েছে।
স্থানীয় অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সামাজিক বনায়নের বড় এবং ভালো মানের অনেক কাঁচা গাছ গত কয়েকদিন আগে দিনের বেলা কাটতে দেখছেন। গাছগুলো কাটতে কারো অনুমতি ছিল কি-না তারা তা জানতেন না। অতি সম্প্রতি কাটা এসব গাছের বড় বড় গোড়ালি পড়ে থাকতে দেখা গেছে। স্থানীয় এলাকার গরীব লোকেরা গাছের এসব গোড়ালি জালানি কাঠ হিসেবে তুলে নিচ্ছেন। সরেজমিন হাজীপুর স’মিলের পাশে, হাজীপুর বাজার এবং পাইকপাড়া বাজারে কর্তনকৃত গাছের তিনটি স্তুপ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বাকী কাঠ রাতের আঁধারে অন্যত্র বিক্রি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ইউপি সদস্য ও উপকারভোগী নূর আহমদ চৌধুরী বুলবুল। তিনি এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অভিযুক্ত সানি বলেন, আমার বাবা আব্দুল বারী বনায়ন সমিতির অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর আমাদেরকে ভাগ থেকে বঞ্ছিত করতেই আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সানি বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান ওদুদ বক্সের ভাই উপকারভোগী ছালিক বক্স এবং আব্দুল মোহিত গাছ এসব গাছ কাটার সাতে জড়িত। সানির অভিযোগ অস্বীকার করে আব্দুল মোহিত বলেন, গাছগুলো ঝড়ে পড়ে ছিল। সকল উপকারভোগীর মতামতের ভিত্তিতে ঝড়ে পড়া ও শুকনো গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্ত হয়। যা ইউপি চেয়ারম্যান ওদুদ বক্স সহ বনবিভাগকে জানানো হয়েছে। আর সে হিসেবে পাইকপাড়ায় আমার প্রতিষ্ঠানের সামনে রাস্তার পাশের কয়েকটি গাছ কেটে আমি স্তুপ করে রেখেছি। তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, সানি, মকদ্দছ, আবুল ও আবরার মিলেই গাছ কেটেছেন।
সমিতির সভাপতি ফারুক আহমদ পান্না বলেন, এতগুলো কাঁচা গাছ কাটার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তের কথা আমি জানিনা। জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান ওদুদ বক্স মুঠোফোনে বলেন, গাছ কাটার বিষয়টি তিনি জানেন। ঝড়ে এসব গাছ ও ডালপালা ভেঙ্গে পড়ায় রাস্তায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে যায়। গরু-ছাগলের উপর পড়ে মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া যেগুলো কাটা হয়েছে তা শুকনো গাছ। সমিতির লোকজনই এগুলো কাটছেন। কিন্তু সামাজিক বনায়নের কাঁচা গাছগুলো কর্তনে আপনার অনুমতি ছিল কি-না এমন প্রশ্ন করলে তিনি অনেকটা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন!
মুরইছড়া বনবিট কর্মকর্তা অর্জুন কান্তি দস্তিদার বলেন, এভাবে গাছ কাটার বিষয়টি আমি জানিনা। সামাজিক বনায়নের সরকারি গাছ বনবিভাগের অনুমতি ছাড়া কর্তনের কোন নিয়ম নেই। বনবিভাগের কুলাউড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, বনবিভাগকে না জানিয়ে এভাবে সামাজিক বনায়নের এত কাঁচা গাছ কর্তনের নিয়ম নেই। আমাকে শক্রবার (১০ জুন) রাতে ওই এলাকার কেউ একজন ফোন করে এরকম খবর জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আমি গাজীপুর বিট কর্মকর্তা আহমদ আলীকে (১১ জুন) সরেজমিন যাওয়ার কথা বলেছি। তিনি আরও বলেন, ২/৩টা শুকনা গাছ কেটে উপকার ভোগীদের হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে তাকে জানানো হয়। এছাড়া তিনি (১২ জুন) সরেজমিন তদন্তে যাচ্ছেন বলেও জানান।
ছবিঃ- কর্তন করা গাছের একাংশ।
Published From
Positive International Inc,
73-16, Roosevelt Ave Floor 2, Jackson Heights, New York 11372.
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us