প্রকাশিত: ১:৪৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৪, ২০২২
আব্দুল কুদ্দুসঃ- কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের পূর্বভাগ গ্রামের নুরুল ইসলাম চৌধুরীর পুত্র প্রবাসী আমিরুল ইসলাম চৌধুরী শিমু গত বছরের ৪ এপ্রিল কাতারে মুত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর প্রায় ১০ মাস পর তার লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য জোর দাবী তুলেছেন শিমুর স্ত্রী রোজিনা আক্তার। স্ত্রীর অভিযোগ স্বামী শিমুকে তার মামাতো ভাইয়েরা একই ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের আব্বাছ আলীর ছেলে যথাক্রমে উজ্জল, খায়রুল, আজহারুল ইসলাম ও খছরু গংরা কাতারে নির্যাতন ও মারধর করলে তার মৃত্যু হয়।
বিধবা রোজিনা আক্তার জানান, তার স্বামী কাতারে মৃত্যুর ৯ দিন পর ফোনে বিষয়টি অবগত করেন শিমুর আরেক মামাতো ভাই প্রবাসী কামাল। এরপর লাশ দেশে নিয়ে আসা হলে সেই সময় ময়না তদন্ত ছাড়া স্বামীর লাশ দাফন করতে দেবেন না বলে স্ত্রী রোজিনা আক্তার অনড় থাকলে তখন উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে শিমু চৌধুরীর মামাতো ভাই নাসির উদ্দিন বিচারের আশ্বাস দিয়ে তাকে বুঝিয়ে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন।
পরবর্তীতে শরীফপুর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান জোনাব আলী ও ইউপি সদস্য মখদ্দছ আলী, ইসমাইল আলী এবং শিমু চৌধুরীর মামাতো ভাই নাসির উদ্দিন, মামা আব্বাছ আলী ও অভিযুক্ত কাতার প্রবাসী উজ্জলের উপস্থিতিতে নিহত শিমু চৌধুরীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার রায় ঘোষণা করা হয়। নিহত শিমু চৌধুরীর পরিবারের লোকজনের দাবী ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলোর একটি ভিডিও ফুটেজ তাদের কাছে রয়েছে। কিন্তু সেই বিচারের রায় মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন করেনি অভিযুক্ত পরিবাররা। একপর্যায়ে দুটি সন্তানের লেখাপড়ার খরছ ও সংসার চালানো কঠিন হয়ে উঠে রোজিনার।
বর্তমানে মানবেতর জীবন পার করছেন তারা। নিরুপায় হয়ে এতিম দুটি সন্তানকে নিয়ে বিধবা রোজিনা আক্তার কিছুদিন আগে স্বামী হত্যার বিচার ও তার প্রাপ্য টাকা আদায়ের লক্ষ্যে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। কিন্তু এই সংবাদ সম্মেলনের পর থেকে উল্টো প্রতিপক্ষরা তাকে এবং তার শশুর বাড়ির লোকজনকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন বলে সরজমিন গেলে এমন অভিযোগ করেন রোজিনাসহ তার স্বজনরা।
এছাড়াও সরেজমিন নিহত শিমু চৌধুরীর পূর্বভাগ গ্রামের বাড়ীতে গেলে সেখানে সুনসান নিরবতা লক্ষ্য করা গেছে। বৃদ্ধ পিতা নুরুল ইসলাম চৌধুরী ছেলেকে হারিয়ে মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছেন। শিমু চৌধুরীর ভাই এবাদুল ইসলাম (আনোয়ার) কেঁদে কেঁদে ঘটনার মূল রহস্য বের করার পাশাপাশি বেঠকে যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিলো তা বাস্তবায়নের দাবী জানান।
রোজিনা আক্তার আরো জানান, তার স্বামীর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তসহ ঘটনার সুষ্ঠ বিচারের দাবীতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক, প্রশাসন এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয় বরাবরে শীঘ্রই একটি লিখিত আবেদনপত্র দিচ্ছেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পূর্বভাগ গ্রামের অনেকেই জানান, শিমু চৌধুরী বিদেশ মারা যাওয়ার বিষয়টি তারা শুনেছেন। কিন্তু কিভাবে মারা গেছেন তার পুরো তথ্য না জানলেও দেশে লাশ নিয়ে আসার পর দাফনের পূর্বে কিছু ঝামেলা হওয়ার বিষয়টি তারা নিশ্চিত করেন।
শরীফপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য মখদ্দছ আলী শালিশী বৈঠকের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আমিরুল ইসলাম চৌধুরী শিমুর মৃত্যুর ঘটনায় ৫ লক্ষ টাকা রোজিনা ও তার সন্তানদের দেয়ার জন্য অভিযুক্ত উজ্জল, খায়রুল, আজহারুল ও খছরু গংরা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু এখনো তারা সেই টাকা পরিশোধ করেনি বলে শুনেছি।
বেঠকের মধ্যস্থ্যকারী শিমু চৌধুরীর মামাতো ভাই নাসির উদ্দিন জানান, আমরা প্রথমে কিছু টাকা নিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু রোজিনা ও তার শশুর বাড়ির লোকজন সেই টাকা রেখে অসৌজন্যমূলক আচরন করে। পরে আমরা সেখান থেকে চলে আসি। আপনারা দেখেন বিষয়টি সমাধান করতে পারেনকিনা।
শরীফপুর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান জোনাব আলী মুঠোফোনে বলেন, বৈঠকে প্রতিপক্ষরা নিজে থেকে বলেছিলো ৩ লক্ষ টাকা দিবে রোজিনার পরিবারকে। পরে বৈঠকে সবার সিদ্ধান্ত হয়েছিলো নিহতের স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ের ভরণ-পোষন বাবদ ৫ লক্ষ টাকা দেয়ার জন্য। যদিও উজ্জল গংরা ৫ লক্ষ টাকা দিতে অনেকটা অনিহা প্রকাশ করছিলো। কিন্তু টাকা পরিশোধ হয়েছে কি-না উভয়ই আমাকে আর কিছু জানাননি।
ছবিঃ-এতিম দুই সন্তান নিয়ে বিধবা রোজিনা আক্তার।
Published From
Positive International Inc,
73-16, Roosevelt Ave Floor 2, Jackson Heights, New York 11372.
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us