কুলাউড়ায় ঘোষণা ছাড়াই ঘনঘন লোডশেডিং।দুর্ভোগে হাজার হাজার গ্রাহক।

প্রকাশিত: ২:১২ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৯, ২০২১

কুলাউড়ায় ঘোষণা ছাড়াই ঘনঘন লোডশেডিং।দুর্ভোগে হাজার হাজার গ্রাহক।
booked.net

আব্দুল কুদ্দুসঃ- বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে নাকাল হয়ে পড়েছেন কুলাউড়ার হাজার হাজার পিডিবির গ্রাহক। একদিকে প্রচন্ড গরম, অন্যদিকে বিদ্যুতের ঘনঘন লোডশেডিং! একটু ঝড়বৃষ্টি হলে তো উপায়ই নেই।

লাইন সংস্কারের নামে হঠাৎ ঘোষণা দিয়ে, আবার বেশিরভাগ সময় কোন ধরণের ঘোষণা ছাড়াই ঘন্টার পর ঘন্টা সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। এতে করে অতিষ্ট পিডিবির গ্রাহকরা। কুলাউড়ার বিদ্যুৎ নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই পিডিবির গ্রাহকদের।

তীব্র গরমে গ্রাহকদের নাভিশ্বাস অবস্থা। ঘোষণা ছাড়াই ঘন্টার পর ঘন্টা থাকে না বিদ্যুৎ। বিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে রীতিমত তোলপাড়। কেউ কেউ বলছেন, লোডশেডিংয়ে সরকারের সুনাম নষ্ট করতেই কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিভাগের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী এ অবস্থা তৈরি করছেন।

বিদ্যুৎ বিভাগের অব্যবস্থাপনায় একদিকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের, অন্যদিকে সরকারেরও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। অধিকাংশ বিদ্যুৎ গ্রাহকের অভিযোগ, ঘন ঘন লোডশেডিং নিয়ে কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিভাগে যোগাযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।

ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা জানান, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে চলছে কঠোর লকডাউন। মানুষ এখন ঘরবন্দী। বাসা-বাড়িতে টিভি, কম্পিউটার আর মোবাইল ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে অতিবাহিত হচ্ছে দিনাতিপাত। স্কুল কলেজ ও মাদরাসা বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চলছে অনলাইনের মাধ্যমে।

করোনা আতঙ্ক এবং আর্থিক সমস্যায় ভূগছেন অনেকেই। এই সংকটময় সময়ে ঘরবন্দী মানুষের সঙ্গে বিদ্যুৎ নামে আরেক সমস্যা যোগ হচ্ছে। ঘনঘন লোডশেডিংয়ে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পিডিবির হাজার হাজার গ্রাহককে। উপজেলার অনেক গ্রাহকদের অভিযোগ, প্রচন্ড গরমের মধ্যে বৈদ্যুতিক পাখা মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিয়ে থাকে। কিন্তু লোডশেডিং মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় সেই স্বস্তিও মিলছে না। এমনকি রাতের বেলায়ও একাধিকবার বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার কারণে চরম আকার ধারণ করেছে ভোগান্তি।

একজন গ্রাহক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্রটি প্রথমে ৩৩ হাজার কেবি থাকলেও গ্রাহকদের নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা দিতে নতুন আরো ১ লক্ষ কেবি সংযুক্ত করা হয়। কিন্তু এরপরও বিদ্যুৎ সমস্যা পিছু ছাড়ছেনা কুলাউড়াবাসীর। সামান্য ঝড় বৃষ্টি বা বাতাস আসলেই লাপাত্তা কুলাউড়ার বিদ্যুৎ। নির্ধারিত অভিযোগ নাম্বারে (০১৭৯৬-৬৪৪৯৩৭) বার বার ফোন দিয়ে পাওয়া যায়না কাউকে। কোন সময় ফোন রিসিভ হলেও পাওয়া যায়না কোন সদুুত্তর।

গ্রাহকরা অভিযোগ করে বলেন- অবৈধ লাইন সংযোগ, অতিরিক্ত বিল প্রদান ও মাসের পর মাস বিল না দিয়ে হঠাৎ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া, কয়েকজন কর্মচারী কর্মকর্তা কর্তৃক গ্রাহক হয়রানিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে কুলাউড়ায় কর্মরত বিদ্যুৎ কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে।

ঘনঘন বিদ্যুৎ যাওয়ার কারণে ইলেকট্রিক অনেক মেশিনারী ও ব্যবহারিক জিনিসপত্র প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে। বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের এমন কর্মকান্ডে মানুষের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে। গ্রাহকদের প্রশ্ন, এই যন্ত্রণার শেষ কোথায়? বিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ বলছেন, এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী এ অবস্থা তৈরি করায় সরকারের প্রতি মানুষ আস্থা হারাচ্ছে।

ক্ষুব্ধ কয়েকজন গ্রাহক তাদের ফেইসবুকে ওয়ালে আরো লিখেছেন- সকাল, দুপুর, বিকেল যে কোনো সময় লোডশেডিং থাকে। গ্রাহকসেবার জন্য দেওয়া নাম্বারে কল দিলে ব্যস্ত পাওয়া যায়। তারা ঘনঘন লোডশেডিং থেকে পরিত্রাণ চেয়ে স্থানীয় সাংসদসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশুদৃষ্টি কামনা করেন।

কুলাউড়া বিদ্যুৎ ক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ওসমান গণি মুঠোফোনে জানান, কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিভাগে ১০৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্থলে রয়েছেন মাত্র ৩৮ জন। এই স্বল্প সংখ্যক স্টাফ দিয়ে বিশাল এরিয়ায় সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের বিষয়টি মানতে তিনি নারাজ।

তিনি বলেন- (২৭ জুলাই) কোথাও কোন লোডশেডিং হয়েছে, বলুন। ঈদের পর হঠাৎ ঝড় হওয়ায় সরবরাহ কিছুটা বন্ধ ছিল। তিনি আরো বলেন- লাইনে ত্রুটির অভিযোগ পেলে কিংবা গাছের ডালপালা ছাঁটতে গিয়ে কোন সময় প্রায় আধা ঘন্টার মতো সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। কেননা, লাইন বন্ধ না করে তো কাজ করা যাবে না। আর গ্রাহকদের বিভিন্ন রকম অভিযোগ থাকতেই পারে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি গ্রাহকদের পূর্ণ সেবা দিয়ে যাবার।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Ad