প্রকাশিত: ৮:২৫ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২, ২০২২
ইসলামের মৌলিক রুকন বা ভিত্তি পাঁচটি। এর মধ্যে রোজা ও হজ চাঁদ দেখার সঙ্গে সম্পৃক্ত। রাসুল (সা.) শাবান মাসের দিন গণনা করতেন, চাঁদের হিসেব রাখতেন। রমজানের চাঁদের জন্য অপেক্ষা করতেন।
পবিত্র রমজান মাসের রোজা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসে রোজা রাখে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)
কোরআন-হাদিসে চাঁদ দেখার বিষয়ঃ- চাঁদ দেখা প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘লোকেরা আপনাকে নতুন মাসের চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি তাদের বলে দিন, এটা মানুষের (বিভিন্ন কাজকর্মের) এবং হজের সময় নির্ধারণ করার জন্য।’ (সুরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৮৯)
হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখে ঈদ করো। কিন্তু যদি আকাশে মেঘ থাকে, তাহলে গণনায় ৩০ পূর্ণ করে নাও।’ (বুখারি, হাদিস : ১৯০৯; মুসলিম, হাদিস : ১০৮১)
অন্য বর্ণনায় রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা (নতুন চাঁদ) না দেখা পর্যন্ত রোজা রেখো না এবং তা (নতুন চাঁদ) না দেখা পর্যন্ত রোজা ছেড়ে দিয়ো না।’ (মুআত্তা মালিক, হাদিস : ৬৩৫)
এই হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, রমজান শুরু কিংবা ঈদ করার ব্যাপারটা চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল। কোনো এলাকায় চাঁদ দেখা না গেলে তাদের জন্য রোজা রাখা নিষিদ্ধ।
চাঁদ দেখা যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো এলাকার প্রত্যেকে দেখা জরুরি নয়। বরং বিশ্বস্ত কোনো ব্যক্তি দেখলেও রোজা শুরু করার অবকাশ রয়েছে।
কেউ কেউ মনে করেন, এই হাদিসের মাধ্যমে একই দিনে বিশ্বব্যাপী রোজা ও ঈদ পালন করা সাব্যস্ত হয়। তাদের দাবি, মহান আল্লাহ মধ্যপ্রাচ্যকে মধ্যস্থল বানিয়েছেন। তাই সেখানে চাঁদ দেখা গেলে সারা বিশ্বে রোজা ও ঈদ পালন করতে হবে! অথচ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা আপনাকে নতুন চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন, তা হলো মানুষ ও হজের জন্য সময় নির্দেশক।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৯)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদরা বলেন, এখানে ‘আহিল্লাহ’ শব্দ আনা হয়েছে, যার অর্থ একাধিক নতুন চাঁদ, যা একেক উদয়স্থলে একেক দিন উদিত হয়।
নতুন চাঁদ দেখার দোয়াঃ- প্রতিটি মাসের নতুন চাঁদ দেখে দোয়া পড়া সুন্নত। সাহাবি তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) নতুন চাঁদ দেখলে এই দোয়াটি পাঠ করতেন—
اَللّهُّمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْيُمْنِ وَالْإِيْمَانِ وَالسَّلاَمَةِ وَالْإِسْلاَمِ رَبِّيْ وِرَبُّكَ الله
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল য়ুমনি ওয়াল ঈমান, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম; রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।
অর্থ : হে আল্লাহ! এ চাঁদকে ঈমান ও নিরাপত্তা, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদিত করুন। আমার ও তোমার প্রভু আল্লাহ। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫২৬)
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য এক বর্ণনায় দোয়াটি এভাবে এসেছে-
اَللّهُّمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْيُمْنِ وَالْإِيْمَانِ وَالسَّلاَمَةِ وَالْإِسْلاَمِ وَالتَّوْفِيْقِ لِما تُحِبُّ وَتَرْضَى رَبِّيْ وِرَبُّكَ اللهُ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল য়ুমনি ওয়াল ঈমান, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলামি ওয়াত্তাওফিক; লিমা তুহিব্বু ওয়া তারদ্বা, রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।
অর্থ : হে আল্লাহ! এ চাঁদকে ঈমান ও নিরাপত্তা, শান্তি ও ইসলাম এবং যে জিনিসটি আপনি পছন্দ করেন ও সন্তুষ্ট হোন— সেটার তাওফিকের সঙ্গে উদিত করুন। আমার ও তোমার প্রভু আল্লাহ। (সুনানে দারিমি, হাদিস : ১৬৯৭)
আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.) রমজানের জন্য অপেক্ষা করতেন। রমজানের সৌভাগ্যপ্রাপ্তির জন্য দোয়া করতেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রজব মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.) ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রামাজান’ বলে দোয়া করতেন।
অর্থ : হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাসে আমাদের বরকতময় করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (বায়হাকি ফি শুয়াবিল ইমান, হাদিস : ৩৫৩৪, তাবরানি ফিল আওসাত, হাদিস : ৩৯৩৯, মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৩৪৬)
শাবান মাস শুরু হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের জন্য আরও ব্যাকুল হয়ে উঠতেন। তিনি শাবান মাসের দিন গণনা করতেন, চাঁদের হিসেব রাখতেন। রমজানের চাঁদের জন্য অপেক্ষা করতেন।
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, রাসুল (সা.) শাবান মাসের চাঁদের যেভাবে হিসেব রাখতেন, অন্যকোনো মাসের হিসেব সেভাবে রাখতেন না। পরে চাঁদ দেখে রোজা রাখতেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৩২৫)
আল্লাহর রাসুল (সা.) তার উম্মতকেও নির্দেশ দিয়েছেন, শাবান মাসের চাঁদের হিসেব রাখতে। যেনো রমজানের রোজা নির্ভুলভাবে রাখা যায়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা রমজানের জন্য শাবানের চাঁদের হিসেব রাখো।’ (সুনানে বায়হাকি)
আল্লাহর রাসুল (সা.) রমজানের চাঁদ দেখে খুশি আনন্দিত হতেন। রাসুল (সা.)-এর সাহাবিরাও (রা.) খুশি হতেন ও দোয়া পড়তেন। হিশাম ইবনে হাসসান থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দৌহিত্র হাসান ইবনে আলী (রা.) চাঁদ দেখে বলতেন, ‘আল্লাহুম্মাজআল্হু শাহরা বারাকাতিন ওয়া নুর, ওয়া আজরিন ওয়া মুয়াফাতিন, আল্লহুম্মা ইন্নাকা কাসিমুন বাইনা ইবাদিম্মিন ইবাদিকা, ফিহি খাইরান ফা-আকসিম লানা ফিহি খাইরাম্মা-তাকসিমু লিইবাদিকাস সালিহিন।’ (দোয়া-উ বিদায়াতি শাহরিন জাদিদ, আল-বাওয়াবা : ০১ এপ্রিল, ২০২১)
অর্থ: হে আল্লাহ! এ মাসকে প্রাচুর্য ও জ্যোতিময় করুন, পুণ্য ও ক্ষমার মাধ্যম করুন। হে আল্লাহ! আপনি (এ মাসে) আপনার বান্দাদের মাঝে কল্যাণ বিতরণ করবেন, সুতরাং আপনার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য যা বণ্টন করবেন, তা আমাদেরও দান করুন।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা)
চাঁদ দেখা ফরজে কেফায়াঃ- এসব হাদিসের আলোকে ইসলামি স্কলাররা শাবান মাসের ২৯ তারিখ সামগ্রিকভাবে চাঁদ দেখাকে ফরজে কেফায়া বলেন। আর রাসুল (সা.)-এর ব্যক্তিগত আমলের কারণে প্রত্যেক মুমিনের জন্য আকাশে চাঁদের অনুসন্ধান করা মুস্তাহাব মনে করেন।
হাদিসে আছে, আকাশে রমজানের চাঁদ দেখে রাসুল (সা.) খুশি হতেন ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতেন। রমজানের চাঁদকে অভিনন্দন জানাতেন। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি রমজানের চাঁদকে সুপথ ও কল্যাণের বার্তাবহ বলে সম্বোধন করতেন। রমজানের কল্যাণ ও বরকত লাভের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন।
তালহা বিন উবায়দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) চাঁদ দেখে বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ইমানি, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলামি, রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ, হিলালু রুশদিন ওয়া খাইরিন।
অর্থ : হে অল্লাহ! এ চাঁদকে ঈমান ও নিরাপত্তা, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদিত করুন। সুপথ ও কল্যাণের চাঁদ! আমার ও তোমার প্রভু আল্লাহ। (রিয়াজুস সালিহিন, হাদিস : ১২২৮)
আল্লাহ তাআলা আমাদের চাঁদ দেখে রমজানের রোজা ও ঈদ পালন করার এবং রাসুল (সা.)-এর সুন্নত আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমিন।
Published From
Positive International Inc,
73-16, Roosevelt Ave Floor 2, Jackson Heights, New York 11372.
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us