যেসব কারণে রোজা ভাঙে না।

প্রকাশিত: ৪:১০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৮, ২০২২

যেসব কারণে রোজা ভাঙে না।
booked.net

রোজা আল্লাহর ফরজ বিধান। মানুষের শক্তি, সামর্থ্য ও সাধ্যের বাইরে ইসলামে কোনো বিধান নেই। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ কারো ওপর এমন কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না, যা তার সাধ্যাতীত। (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৮৬)।

আসুন জেনে নেই, যেসব কারণে রোজা ভাঙে নাঃ-

★ ভুলক্রমে পানাহার বা স্ত্রী সম্ভোগ করলে রোজা ভাঙে না।
★ অনিচ্ছাবশত গলার মধ্যে ধোঁয়া, ধুলাবালি, মশা, মাছি চলে গেলে রোজা ভঙ্গ হয় না। (শামি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৬৬)
★ স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভাঙে না। (তিরমিজি, হাদিস ৭১৯)
★ তেল, সুরমা, শিঙা লাগালে হলকে তার স্বাদ পেলে রোজা ভঙ্গ হয় না। (শামি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৬৬)
★ কাঠি দিয়ে কান খোঁচানোর ফলে কোনো ময়লা বের হলে তারপর ময়লাযুক্ত কাঠি বারবার কানে প্রবেশ করালে রোজা ভঙ্গ হয় না। (শামি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৬৭)
★ যেকোনো সময় মেসওয়াক করলে রোজা ভাঙে না। সেটি কাঁচা হোক কিংবা শুষ্ক। (আলমগিরি, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৯৯)
★ দাঁত থেকে অল্প রক্ত বের হয়ে যদি গলার ভেতর চলে যায়, তাহলে রোজা ভাঙবে না। যদি রক্তের চেয়ে থুতুর পরিমাণ বেশি হয়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। (শামি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৬৮)।
★ চানা বুটের চেয়ে ছোট বস্তু দাঁতের ফাঁকে আটকে গেলে এবং তা গলার ভেতর চলে গেলে কিংবা খেয়ে ফেললে রোজা ভাঙে না। (শামি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৬৭)
★ শরীর, মাথা, দাড়ি, গোঁফে তেল লাগালে রোজা ভাঙে না। (আলমগিরি, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৯৯)
★ ফুল বা মৃগনাভির ঘ্রাণ নিলে রোজা ভাঙে না। (শামি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৯৯)
★ ইচ্ছাকৃতভাবে নাকের শ্লেষ্মা মুখের ভেতর নিয়ে নিলে রোজা ভাঙে না। (বিনায়া, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৯৪)
★ মুখের থুতু গিলে ফেললে রোজা ভাঙে না। (নাওয়াজিল, পৃষ্ঠা ১৫০)
★ তিল পরিমাণ কোনো জিনিস বাইরে থেকে মুখে নিয়ে অস্তিত্বহীন করে দেওয়া ও গলায় তার কোনো স্বাদ অনুভব না হলে রোজা ভাঙে না। (শামি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৯৪)
★ কপালের ঘাম কিংবা চোখের দু-এক ফোঁটা অশ্রু কণ্ঠনালিতে পৌঁছে গেলে রোজা ভাঙে না; কিন্তু যদি পরিমাণে বেশি হয় যে তার প্রভাব গলায় অনুভব হয়। তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। (বিনায়া, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৯৪)
★ রোজা অবস্থায় সাধারণ ইনজেকশন বা টিকা লাগানো বৈধ। তবে এমন ইনজেকশন বা টিকা লাগানো মাকরুহ, যেগুলো দ্বারা রোজার কষ্ট বা দুর্বলতা দূরীভূত হয়। (জাওয়াহিরুল ফিকাহ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৭৯)
★ ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্ত বের করলে রোজা নষ্ট হবে না। আর দুর্বলতার আশঙ্কা না থাকলে মাকরুহও হবে না।
★ সাপ, বিচ্ছু ইত্যাদি দংশন করলে রোজা ভাঙে না। (আল-ফিকহুল হানাফি, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪১৪; মাহমুদিয়া, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৭৯)
★ পান খাওয়ার পর ভালোভাবে কুলি করা সত্ত্বেও যদি থুতুতে লাল আভা থেকে যায়, তাহলে রোজা মাকরুহ হবে না। (এমদাদুল ফাতাওয়া, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩১)
★ভেজা কাপড় শরীরে দেওয়া অথবা ঠাণ্ডার জন্য কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া অথবা গোসল করা মাকরুহ নয়। (শামি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৯৪; দারুল উলুম, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪০৫)
★স্বপ্নে কিংবা সহবাসে যদি গোসল ফরজ হয়ে থাকে এবং সুবেহ সাদিকের আগে গোসল না করে রোজার নিয়ত করে, তাহলে তার রোজার মধ্যে অসুবিধা হবে না। (জাওয়াহিরুল ফিকাহ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৮০)
★গরমের দরুন দীর্ঘক্ষণ পানিতে অবস্থান করা মাকরুহ নয়। (শামি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৯৯)
★গলা খাঁকারি দিয়ে গলদেশ থেকে মুখে কাশি বের করা, তারপর আবার গিলে ফেলা মাকরুহ নয় (এরূপ না করাই উচিত)। (শামি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৭৩)
★রোজা অবস্থায় মাথা বা চোখে ওষুধ দেওয়া মাকরুহ নয়। (এমদাদুল ফাতাওয়া, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১২৭)
★হোমিওপ্যাথিক ওষুধের ঘ্রাণ নেওয়া মাকরুহ নয়। (মাহমুদিয়া, খণ্ড ১৫, পৃষ্ঠা ১৮০)
★রোজা অবস্থায় পাইপ দ্বারা মুখে হাওয়া নিলে রোজা মাকরুহ হয় না। (মাহমুদিয়া, খণ্ড ১৫, পৃষ্ঠা ১৮০)
★রোজা অবস্থায় নাকের মধ্যে ওষুধ ব্যবহার করার দ্বারা ব্রেনে না পৌঁছলে রোজা মাকরুহ হয় না। (মাহমুদিয়া, খণ্ড ১৫, পৃষ্ঠা ১৬৯)
★ শরীরে কোনো ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ বা রক্ত প্রবাহিত হলে বা রক্ত বের করলে রোজা নষ্ট হয় না। তবে রোজাদার থেকে বের করা মাকরুহ। (জাওয়াহিরুল ফিকাহ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২৮)
★ডাক্তার যদি চিকিৎসার শুকনো কোনো যন্ত্র পেটে প্রবেশ করায়, অতঃপর তা বের করে ফেলে, তাহলে রোজা নষ্ট হবে না। (আল-ফিকহুল হানাফি, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪৭১২)
★পানিতে ডুব দেওয়ার পর কানের ভেতর পানি চলে গেলে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে পানি দিলে রোজা মাকরুহ হয় না। (বিনায়া, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৯৪; আলমগিরি, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২০৪; শামি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৬৭)
★জৈবিক উত্তেজনার কারণে শুধু দৃষ্টিপাতের কারণে যদি বীর্যপাত হয়, তাহলে রোজা নষ্ট হবে না। (আহকামে জিন্দেগি, পৃষ্ঠা ২৪৯)।

Ad