প্রকাশিত: ৮:০১ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৮, ২০২২
মর্যাদার এক রাত শবে কদর। কুরআনের ভাষায় এটিকে ‘লাইলাতুল কদর’ বলা হয়। এ রাতের মর্যাদায় আল্লাহ তাআলা একটি সুরা নাজিল করেছেন। আর এ রাতেই আল্লাহ তাআলা মানুষের মুক্তির সনদ আল-কুরআনুল কারিম নাজিল করেছেন। এ রাত ও কুরআন নাজিল প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-‘নিশ্চয়ই আমি তা (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কী জান? শবে কদর হলো- এক হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। শান্তি আর শান্তি, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত (নাজিল হতে) থাকে।’ (সুরা আল-কদর)
মর্যাদার এ রাতে কুরআন নাজিল ও এর বরকত সম্পর্কে সুরা দুখানে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন এভাবে-‘শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমি একে (কুরআন) নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় (লাওহে মাহফুজ থেকে ফেরেশতাদের কাছে) স্থিরিকৃত হয়। আমার পক্ষ থেকে আদেশক্রমে, আমিই প্রেরণকারী। আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা দুখান : আয়াত ২-৬)
মর্যাদার এ রাত সম্পর্কে হাদিসে পাকে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোনাহ মাফের কথা উল্লেখ করেছেন। হাদিসে এসেছে-হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের আশায় রাত লাইলাতুল কদর তথা (মর্যাদার নির্ধারিত রাত) জেগে ইবাদাত করে, তার বিগত জীবনের সব গোনাহ ক্ষমা করা হবে।’ (বুখারি)
কুরআন-সুন্নাহর আলোকে বুঝা যায়, ‘লাইলাতুল কদর’ মর্যাদার একটি রাত। মর্যাদার এ রাতটি পেলে কী দোয়া পড়তে হবে, সে সম্পর্কেও এসেছে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা। অন্য হাদিসে এসেছে-হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- ‘হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন রাতে ‘লাইলাতুল কদর’ হবে, তা যদি আমি জানতে পারি, তাতে আমি কী (দোয়া) পড়বো? আপনি বলে দিন তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বলবে-اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيউচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
তবে কোন দিন বা তারিখে আসে এ রাত? মর্যাদার এ রাতটি কবে হবে? তা সুস্পষ্ট বা নির্দিষ্ট করে বলার বা জানার কোনো সুযোগ নেই। তবে এ কথাটি সুস্পষ্ট যে, তা রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় যে কোনো রাতে হবে। সে আলোকে তা হবে- ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ রমজানের রাত। অর্থাৎ ২০ রমজান দিবাগত রাত, ২২ রমজান দিবাগত রাত, ২৪ রমজান দিবাগত রাত, ২৬ রমজান দিবাগত রাত এবং ২৮ রমজান দিবাগত রাত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করতেও হাদিসে পাকে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এভাবে-> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজানের শেষ ১০ দিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ কর।’ (বুখারি)
২৭ রমজান শবে কদরতবে কেউ কেউ শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে ২৭ রমজান ‘লাইলাতুল কদর’ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে উল্লেখ করেছেন। এ সম্পর্কেও একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। হাদিসে এসেছে -হজরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কদরের রাত অর্জন করতে ইচ্ছুক, সে যেন তা ২৭ রমাজনের রাতে অনুসন্ধান করে।’ (মুসনাদে আহমাদ)
অন্য যে রাতগুলোও সম্ভাবনাময় ২৭ রমজানের রাত ছাড়া লাইলাতুল কদর পাওয়ার বেশি সম্ভাবনাময় সে রাতগুলো হলো-> ২৫ রমজানের রাত।> ২৯ রমজানের রাত।> ২১ রমজানের রাত।> ২৩ রমজানের রাত।
লাইলাতুল কদরের বিশেষ নিদর্শনঃ- ★রাতটি বেশি অন্ধকার হবে না। ★গরম ও শীতের তীব্রতা থাকবে না। অর্থাৎ সুন্দর শান্তিদায়ক আবহাওয়া বিরাজ করবে।★ মৃদু শীতল (বসন্তের) বাতাস প্রবাহিত হবে।★সে রাতের ইবাদতে মানুষ বিশেষ তৃপ্তি অনুভব করবে। যা অন্য রাতের ইবাদতে অনুভূত হয় না। ★প্রকৃত ঈমানদার রোজাদার স্বপ্নে তা জানতে পারবে। ★ সে রাতে রহমতের বারিধারায় (বৃষ্টিতে) সিক্ত হবে জমিন।★ পূর্ণিমার চাঁদের মতো হালকা আলোক রষ্মিসহ সূর্য উদয় হবে।’ (ইবনে খুযায়মাহ, বুখারি, মুসলিম)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মর্যাদার রাত লাইলাতুল কদর দান করুন। এ রাতে বরকত ও কল্যাণে মুমিন বান্দার বিগত জীবনের গোনাহ মাফ করে দিন। পরবর্তী পুরো বছরের কল্যাণ বরকত ও উত্তম রিজিকে পরিপূর্ণ করে দিন। আমিন।
Published From
Positive International Inc,
73-16, Roosevelt Ave Floor 2, Jackson Heights, New York 11372.
Email : voiceofkulaura2@gmail.com
Chief Editor : Shafiq Chowdhury
Editor : Abdul Quayyum
Managing Editor : Nurul Islam Emon
Design and developed by positiveit.us