বর্ষায় মনু নদীতে ফের বন্যার আশঙ্কা। ৪ বছরে কাজ হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ।

প্রকাশিত: ৩:০৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২২, ২০২৫

বর্ষায় মনু নদীতে ফের বন্যার আশঙ্কা। ৪ বছরে কাজ হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ।
booked.net

Manual1 Ad Code

নিজস্ব প্রতিনিধি:- কুলাউড়ায় মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজের চার বছর পার হয়ে গেলেও কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৫০ শতাংশ। কারণ হিসেবে রয়েছে বিএসএফের বাঁধা, জমি অধিগ্রহণ ও অর্থ সংকট জটিলতা। ২০২১ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় এ বছরও বর্ষা মৌসুমে ফের বন্যার আশঙ্কা করছেন নদী তীরবর্তী ৪টি ইউনিয়নের কয়েক লক্ষ মানুষ। তবে ভারতীয় বিএসএফ কর্তৃক বাঁধার কারণে শরীফপুর ইউনিয়নে মনু নদী প্রতিরক্ষা বাঁধের চারটি স্থানে ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নের একটি স্থানে কাজ শুরু হয়নি। তবে বাংলাদেশ অংশে কাজ না হলেও ভারতের অংশে কাজ চলছে বিএসএফের উপস্থিতিতে। এনিয়ে সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশীদের মধ্যে চরম ক্ষােভ বিরাজ করছে।

 

Manual7 Ad Code

জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা একাধিকবার মানববন্ধনও করেছেন। আসন্ন বর্ষা মৌসুমের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জেলা উন্নয়ন সভায় মনু নদীর কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে আলােচনাও হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে গত সােমবার (২১ এপ্রিল) দিনব্যাপী মনু নদীর চলমান বিভিন্ন কাজ পরিদর্শন করেন মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বাের্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাে. খালেদ বিন অলিদ ও কুলাউড়া উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাে. মহিউদ্দিন। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেন। এসময় পানি উন্নয়ন বাের্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলীসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।

 

Manual1 Ad Code

এদিকে জেলা পানি উন্নয়ন বাের্ড সূত্র জানায়, মনু নদীর ভয়াবহ বন্যা আর ভাঙন হতে মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলাকে বন্যা ও নদী ভাঙ্গন থেকে মুক্ত রাখতে ২০২০ সালের ২১ জুন ৯৯৬ কােটি ২৮ লাখ টাকার একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমােদন দেওয়া হয়। এরপর বিভিন্ন সময় দরপত্র আহবান করা হয় কাজের। এ প্রকল্পে কুলাউড়া উপজেলায় ২৮টি প্যাকজের কাজ রয়েছে। যার মােট চুক্তিমূল্য ৩০৭ কােটি টাকা। ২৮টি প্যাকেজের মধ্যে স্থায়ী তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজের ২০টি, চর অপসারণ কাজের ৪টি এবং বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ কাজের ৪টি প্যাকেজের কাজ রয়েছে। প্রকল্পের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কুলাউড়া উপজেলায় কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৫০ শতাংশ। সীমান্তবর্তী কুলাউড়ার শরীফপুর ইউনিয়নের দত্তগ্রাম, নিশ্চিন্তপুর, তেলিবিল ও বাগজুরসহ ৪টি স্থানে মােট ২ কিলাে ২০০ মিটার অংশ স্থায়ী নদী তীর সংরক্ষণ কাজ রয়েছে। কাজের চুক্তিমূল্য প্রায় ৪৫ কােটি টাকা। ২০২১ সালে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাসান অ্যান্ড ব্রাদার্স বাঁধ মেরামত ও তীর সংরক্ষণের কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ তৈরির কাজ সম্পন্ন করে রাখে। কিন্তু ৪টি স্থানে ২০২৩ সালের ১৩ জানুয়ারি থেকে বিএসএফের বাঁধার কারণে কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।

Manual1 Ad Code

 

জানা যায়, ২০২৪ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ১০০ ফুট ভাঙ্গনের কাজ এখনাে শুরু হয়নি বিএসএফের বাঁধার কারণে। কিন্তু সীমান্তের ওপারে ভারতের মাগুরউলি, দেবীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় কাটাতার ঘেষা বেড়িবাঁধে বিএসএফের উপস্থিতিতে কাজ চলছে জােরেসােরে।

Manual8 Ad Code

 

স্থানীয়রা জানান, বিএসএফের বাঁধায় বাংলাদেশ অংশে কাজ বন্ধ হলেও ভারতীয় অংশে ঠিকই কাজ চলছে। দ্রুত প্রশাসনিক জটিলতা নিরসন করে যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ বাস্তবায়ন না করা যায় তাহলে আবারাে নদী ভাঙ্গন আতঙ্কে থাকবে মনু পাড়ের কয়েক লক্ষ মানুষ।

 

মৌলভীবাজার পানি উনয়ন বাের্ডর নির্বাহী প্রকৌশলী মাে. খালেদ বিন অলিদ বলেন, কুলাউড়ায় এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বিএসএফের বাঁধায় শরীফপুর ইউনিয়নে ৪টি স্থানে ১৪০০ মিটার কাজ বন্ধ রয়েছে। ৪টি স্থানে কাজের অনুমতি চেয়ে ২০২৩ সালে যৌথ নদী কমিশন বাংলাদেশ হতে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন ভারতের নয়াদিল্লীতে একটি পত্র প্রদান করা হয়। সর্বশেষ মার্চ মাসে কলকাতায় দু’দেশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা পর্যায়ে আলােচনা সভা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কােন অনুমােদন আসেনি।

 

তিনি আরাে বলেন, পৃথিমপাশা ইউনিয়নের শিকড়িয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধের কাজ গতবছর শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিএসএফের বাঁধায় কাজ শুরু করা যায়নি। যথাসময়ে কাজ শেষ না করলে এবছরও ফের বন্যার আশংকা রয়েছে। অন্যান্য এলাকায় নদী প্রতিরক্ষার কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলােকে তাগিদ দেয়া হয়েছে। যথাসময়ে সরকারের কাছে থোক বরাদ্দ না পাওয়ায় কাজের মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানাে হয়েছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Ad

Follow for More!