পরকীয়ার প্রতিবাদ করায় স্ত্রীকে নির্যাতন। প্রাণনাশের হুমকি!

প্রকাশিত: ৩:০১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৪, ২০২৪

পরকীয়ার প্রতিবাদ করায় স্ত্রীকে নির্যাতন। প্রাণনাশের হুমকি!
booked.net

আব্দুল কুদ্দুস :- প্রায় দেড় বছর পূর্বে স্কুল পড়ুয়া এক ছাত্রীর সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে স্বামীর। স্ত্রী এর প্রতিবাদ করায় তাকে শারীরিক নির্যাতন করতেন তার স্বামী। শুধু নির্যাতন নয়; শেষতক তাকে (স্ত্রী) প্রাণনাশের হুমকিও দেন তার স্বামী। এই ঘটনায় স্ত্রী বাদী হয়ে তার স্বামী, শশুর এবং স্কুল পড়ুয়া ছাত্রীসহ আরও কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে কুলাউড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

 

অভিযোগ থেকে জানা গেছে, পারিবারিকভাবে প্রায় ৯ বছর আগে উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের ডরিতাজপুর গ্রামের উস্তার মিয়ার ছেলে আব্দুল মন্নানের (৩৫) সাথে একই ইউনিয়নের লহরাজপুর গ্রামের মৃত লোকমান উল্লার মেয়ে রোজিনার (৩০) বিয়ে হয়। তাদের ঘরে এখন ছেলে তাহিদুর রহমান (৮) ও মেয়ে তানিসা (৪) রয়েছে।

 

রোজিনা বেগমের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই কোন বিষয়ে কথা বলতে চাইলে স্বামী আব্দুল মন্নান তার উপর নির্যাতন শুরু করতেন। সংসারের দিকে তাকিয়ে নির্যাতন সহ্য করে গেছেন। প্রায় দেড় বছর আগে একই ইউনিয়নের মিয়ারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা স্কুল পড়ুয়া এক ছাত্রীর সাথে রোজিনার স্বামীর পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিষয়টি তিনি টের পান। রোজিনা তার স্বামীকে বুঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে ওই ছাত্রীকে (জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী বর্তমান বয়স ১৪ বছর) নিয়ে তিনি (আব্দুল মন্নান) বেশ কিছুদিন উধাও ছিলেন। রোজিনা বেগম তখন ২ সন্তানকে নিয়ে অতি কষ্টে দিনযাপন করেন। গত ২ বছর পূর্বে বিদেশ যাওয়ার কথা বলে রোজিনার বাবার বাড়ি থেকে কয়েক ধাপে ১ লাখ টাকা নেন আব্দুল মন্নান। রোজিনার ধারণা, বিদেশ না গিয়ে ওই টাকা তিনি পরকীয়ায় ব্যয় করেছেন। তবে এই বিষয়ে একাধিক বৈঠক হওয়ার পর দুই ধাপে ২০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে বলেও জানান রোজিনা।

 

তিনি আরও জানান, স্বামীর পরকীয়া সম্পর্কের কারণে তাদের সংসারে অশান্তি নেমে আসে। প্রতিবাদ করলেই তার উপর শুরু হয় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। স্বামী মন্নান ও স্কুল পড়ুয়া ছাত্রীর আপত্তিকর কিছু স্থির ছবিও তার কাছে রয়েছে।

 

এদিকে থানায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি টিলাগাঁও ইউপি’র চেয়ারম্যানের উদ্যোগে বিষয়টি নিস্পত্তির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সদস্য (ইউপি) ও দুইপক্ষের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে সমঝোতা বৈঠক বসে। বৈঠকে এর মীমাংসাও হয়। মীমাংসিত আপোষনামায় স্বামী-স্ত্রীসহ দুই পক্ষের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের স্বাক্ষর রয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, আব্দুল মন্নান তার দুই বাচ্চার ভরণ-পোষন চালিয়ে যাওয়াসহ রোজিনা বেগমকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে হবে। কিন্তু রোজিনার অভিযোগ, ওই বৈঠকের পর থেকে অদ্যাবদি পর্যন্ত এর কিছুই মানছে না আব্দুল মন্নান। উপরন্তু তিনি ওই মেয়েকে নিয়ে লুকিয়ে সংসার করছেন। দুই বাচ্চাসহ স্ত্রীর ভরণ-পোষন করছেন না। রোজিনা বর্তমানে ২ বাচ্চা নিয়ে লহরাজপুরস্থ তার বাবার রাড়িতে আছেন। তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং কুলাউড়া উপজেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তার কাছে সুবিচার প্রার্থনা করেছেন।

 

৫ নম্বর ওয়ার্ডের (ইউপি) সদস্য মো. আজিজ বেগ জানান, আব্দুল মন্নান ও রোজিনা বেগমের মধ্যকার সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কয়েকবার বৈঠক হয়েছে। আব্দুল মন্নান আরেক মেয়ের সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত থাকায় নিরসন হচ্ছে না বলে তিনি জানান।

 

৮ নম্বর ওয়ার্ডের (ইউপি) সদস্য মো. ফটিক আলী বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার বসেছিলাম; এর একটা নিস্পত্তি হয়েছিল। কিন্তু আব্দুল মন্নান বর্তমানে আরেকটি সংসার করছে। ওই মেয়েটি বর্তমানে মিয়ারপাড়া গ্রামে তার বাবার বাড়িতে রয়েছে। তবে অভিযুক্ত আব্দুল মন্নান তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ রবিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে তিনি জানান, মেয়েটি এখন প্রাপ্তবয়স্ক। আগে তার সাথে সম্পর্ক ছিল, এখন আর নেই।

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

Ad