ধর্মের সীমায় আনন্দ-বিনোদন।

প্রকাশিত: ৭:৫২ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৮, ২০২২

ধর্মের সীমায় আনন্দ-বিনোদন।
booked.net

ডেস্কঃ- আনন্দ-বেদনা নিয়েই মানবজীবন। মানুষের জীবন যেমন কখনো আনন্দের বন্যায় ভেসে ওঠে , তেমনি কখনো ভরে ওঠে দুঃখ-ব্যথায়। দেহ ও মনের ক্লান্তি-ক্লেশ দূর করতে পারে একটুখানি বিনোদনের মাধ্যমে সময় কাটালে। জীবন মানে সদা-সর্বদা কঠোর নির্দেশনা পালন নয়; বরং মানবজীবনে বিশ্রাম ও অবকাশের প্রয়োজন আছে।

জীবন মানেই হাসি-কান্না ও আনন্দ-বেদনার এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ। হজরত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের আনন্দ-বিনোদনেরও শিক্ষা দিয়েছেন। দিনের সীমা ও পরিধির ভেতরে থেকে জীবনের যেকোনো উপলক্ষে আনন্দ-উদযাপন করা যায়। যেমন—জীবনের সাফল্য, পার্থিব উন্নতি-অগ্রগতি ও ইবাদতসহ সবকিছু নিয়েই আনন্দ প্রকাশ করা যায়। তবে ইসলামি শরিয়তের বিধান লঙ্ঘন করে এমনভাবে আনন্দ-বিনোদনে লিপ্ত হওয়া গর্হিত কাজ। আল্লাহতায়ালা মানুষকে সুস্থ বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। খোদাপ্রদত্ত বিবেক-বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে মানুষ অনায়াসেই হালাল-হারামের মাঝে তফাত করতে পারে।

হযরত জাহির আল আসলামি (রা.) ছিলেন হজরত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পুরনো সঙ্গী। একদিন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেন। সবার উদ্দেশে বললেন, ‘এই দাস কে কিনবে? এই দাস কে কিনবে? তিনি পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখেন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তারপর আস্তে আস্তে নিজের পিঠ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পেটের সঙ্গে লাগিয়ে দিয়ে বললেন, আমাকে বিক্রি করে বেশি মূল্য পাবেন না। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কিন্তু আল্লাহর কাছে তোমার মূল্য আছে।’ —মুসনাদে আহমদ : ১২৬৬৯

মানবজীবনে সুস্থ বিনোদনের প্রয়োজন রয়েছে। কেননা চিত্তবিনোদন প্রাণে সঞ্জীবনী শক্তি আনে। এমনকি অতি ব্যস্ত ও দৃঢ়চেতা মানুষের মনেও প্রশান্তি আনে। হজরত ওমর (রা.) নিজের মনকে শান্ত করতে কবিতা আবৃত্তি করতেন। কৌতুক ও রসিকতা করতেন। খোদ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ শিক্ষা দিয়েছেন। হজরত ওমর (রা.) একদিন হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর সঙ্গে বাজি ধরলেন—কে পানির ভেতর দীর্ঘক্ষণ থাকতে পারে! ইবনে আব্বাস তখন বাচ্চা ছেলে মাত্র। বড়জোর ১৩-১৪ বছর বয়স। বয়ঃসন্ধির সময়। দুজনের মধ্যে বয়সের আকাশ-পাতাল তফাত। তার সঙ্গে ওমর পানিতে ডুব দিয়েছে কে দীর্ঘক্ষণ থাকতে পারে পরখ করে দেখার জন্য। —আল মুহাল্লা: ১৭৪/৭

হজরত উসমান (রা.)কে প্রশ্ন করা হলো, ‘আচ্ছা হজের সময় মাহরাম কি বাগানে তথা পার্কে প্রবেশ করতে পারবে? তখন তিনি জবাব দিলেন, হ্যাঁ, সঙ্গে ‘রাইহান’-এর ঘ্রাণও নিতে পারবে।’ —উমদাতুল কারি : ১৫৬/৯

ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলতেন, ‘পার্কে গিয়ে গুরুগম্ভীর হয়ে থাকা কিছুতেই ব্যক্তিত্ববোধের পরিচায়ক নয়।’ তিনি কখনো পার্কে গেলে পাগড়ি খুলে বসতেন। আশপাশের সবার সঙ্গে হাস্য-রসিকতা করতেন। ছোট-বড়, শিশু-কিশোর এবং যুবক সবার সঙ্গেই কথা বলতেন। জীবনের চাপ কমাতেন, আনন্দ করতেন। —মানাকিবুশ শাফেয়ি :২১২/২

একদিন কিছু কৃষ্ণাঙ্গ যুবক মসজিদে বর্শা নিয়ে খেলছিল। তা দেখে হজরত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের বললেন, ‘খেলো।’ অন্য বর্ণনায় আছে, ‘বনু আরফিদার বাসিন্দারা, তোমরা তা গ্রহণ করো। যেন ইহুদি, খ্রিস্টানরা জানতে পারে যে আমাদের ধর্মেও বিনোদন আছে।’ সহিহ বোখারি : ৯৫০

ইসলামে অবকাশযাপনের অনুমোদন আছে। অবকাশযাপনে আনন্দ বিনোদন উপভোগ করা সবার উচিত। একনাগাড়ে কঠোর পরিশ্রম করে গেলে কাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তা ছাড়া মানুষ লাগাতার কাজ করে যেতে পারে না। অবকাশযাপনের এই সুযোগকে সঠিক কাজে বিনিয়োগ করা উচিত। ইসলামি বিধানের আলোকে চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। সুতরাং, ইসলামের শরীয়তের আলোকে পরিবার-পরিজন এবং কর্মের ফাঁকে মাঝে মাঝে অবকাশ, ভ্রমণ করা, আনন্দ-বিনোদন দোষের কিছু নয়।

Ad