তোমাদের কৃতকর্মের কারণই তোমাদের ওপর বিপদ নেমে আসে।

প্রকাশিত: ৯:৩২ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৭, ২০২২

তোমাদের কৃতকর্মের কারণই তোমাদের ওপর বিপদ নেমে আসে।
booked.net

বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, টর্নেডো ইত্যাদি দুর্যোগ প্রাকৃতিক। এতে মানুষের কোনো হাত নেই। এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেকোনো দেশে এবং যে কোনো শহরে যে কোনো মুহূর্তে হানা দিতে পারে।

আল্লাহ পাক সতর্ক করছেন যে, তোমরা সহজ সরল পথ অবলম্বন কর। সমাজ ও দেশের বেশির ভাগ মানুষ যখন পাপ, ব্যভিচার, অন্যায় এবং প্রভুকে ভুলতে বসে তখনই আল্লাহ তাআলা তার পক্ষ থেকে বিপদগ্রস্ত হয়ে শাস্তির যোগ্য হয়ে যায়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বলেন-‘আর তোমাদের কৃতকর্মের কারণই তোমাদের ওপর বিপদ নেমে আসে। অথচ তিনি অনেক কিছুই উপেক্ষা করে থাকেন।’ (সুরা আশ-শুরা : আয়াত ৩০) এই যে সারা পৃথিবীতে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ ধেয়ে আসছে এর একটাই কারণ, আর তা হলো রহমান আল্লাহর বান্দারা আজ প্রভুকে ভুলতে বসেছে, এ কারণেই কোনো দেশ আজ এমন নেই, যারা বলতে পারবে যে, আমরা এসব প্রাকৃতিক আজাব বা মহামারি থেকে নিরাপদ।

এসব দুর্যোগ থেকে বাঁচার জন্য এখন একটিই রাস্তা খোলা আছে আর তাহলো মহান আল্লাহ তাআলার প্রকৃত বান্দায় পরিণত হওয়া। আল্লাহর অধিকার এবং বান্দার অধিকার যথাযথ প্রদান করা। এসব ঐশী আজাবের সময় আল্লাহ পাকের প্রকৃত বান্দা সবসময় দোয়ায় রত হয়।

যখন কোথাও ভূমিকম্প সংঘটিত হয় অথবা সূর্যগ্রহণ হয়, ঝড়ো বাতাস বা বন্যা হয়, তখন সবার উচিত মহান আল্লাহর কাছে তওবাহ করা, তার কাছে নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা, মহান আল্লাহকে স্মরণ করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা। এ ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দিয়ে বলেছেন-‘দ্রুততার সঙ্গে মহান আল্লাহর জিকির করো, তার নিকট তওবাহ করো।’ (বুখারি, মুসলিম)

আল্লাহর জিকিরের সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে নামাজ পড়া, কুরআন তেলাওয়াত করা এবং দোয়া-দরুদ পাঠ করা। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া হলেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে যেতেন এবং নামাজে মশগুল হতেন।’ (মিশকাত)
এমনকি সাহাবিদের জীবনে আমরা দেখি-‘বিপদে-মুসিবতে তারা নামাজে দাঁড়াতেন ও ধৈর্য ধারণ করতেন।’ (মিশকাত)

ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কয়েকটি দোয়া শিখিয়েছেন তা হলো-

– জোরে বাতাস প্রবাহিত হলে যে দোয়া পড়তে হবে- اَللَّهُمَّ اِنَّى أَسْئَالُكَ مِنْ خَيْرِهَا وَ اَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّهَاউচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা’অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এর কল্যাণ কামনা করি। এবং আপনার কাছে এর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই।’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)

– হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেঘের গর্জন শুনলে বা বিদ্যুতের চমক দেখলে সঙ্গে সঙ্গে এই দোয়া করতেন- اَللَّهُمَّ لَا تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ وَ لَا تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ وَ عَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَউচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা লা তাক্বতুলনা বিগাদাবিকা ওয়া লা তুহলিকনা বিআজাবিকা, ওয়া আ’ফিনা ক্ববলা জালিকা।’ (তিরমিজি)

অর্থ : হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে তোমার ক্রোধের কারণে মেরে ফেলো না আর তোমার আযাব দিয়ে আমাদের ধ্বংস করো না। বরং এর আগেই আমাদেরকে ক্ষমা ও নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে নাও (তিরমিজি)।

– ঝড় বা বাতাস থেকে বাঁচতে যে দোয়া পড়তে হবে-اَللَّهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ مِنْ خَيْرِ هَذِهِ الرِّيْحِ وَ خَيْرَ مَا فَيْهَا وَ خَيْرَمَا اُرسِلَتْ بِهِ وَ اَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّ هَذِهَا وَ شَرِّ مَا فَيْهَا وَ شَرِّ مَا اُرْسِلَتْ بِهِউচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন খাইরি হাজিহির রিহি ওয়া খাইরা মা ফিহা ওয়া খাইরা মা উরসিলাত বিহি, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা, ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহি।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করি এর কল্যাণ, এর মধ্যকার কল্যাণ এবং যা এর সাথে প্রেরিত হয়েছে তার কল্যাণ। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই এর অনিষ্ট থেকে, এর ভেতরে নিহিত অনিষ্ট থেকে এবং যা এর সঙ্গে প্রেরিত হয়েছে তার অনিষ্ট থেকে।’ (বুখারি)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে প্রাকৃতি দুর্যোগ এবং মহামারিসহ সব বিপদাপদ থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

ছবিঃ- ইন্টারনেট।

Ad